• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
কারখানা মূল্যায়নের প্রভাব

ব্যাংক ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে পোশাক খাতে


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১২, ২০১৭, ০২:৩৭ পিএম
ব্যাংক ঋণের ঝুঁকি বাড়ছে পোশাক খাতে

রানা প্লাজা ধসের পর দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয় পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করে পশ্চিমা ক্রেতা জোটগুলো। এ পরিদর্শন প্রক্রিয়ায় ত্রুটির অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া হয় অনেক কারখানা। 

উৎপাদন বন্ধ থাকায় এসব কারখানার অধিকাংশ এখন ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এতে বেড়ে চলেছে পোশাক খাতে ব্যাংকঋণের ঝুঁকি।

ঢাকার সাভারে অবস্থিত লিবার্টি ফ্যাশন ওয়্যারস লিমিটেড। পরিদর্শনের পর ত্রুটি ধরা পড়ায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নিট ও ওভেন পোশাক প্রস্তুতকারী কারখানাটি। এ তিন বছর ধরে আটকে আছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংকঋণের টাকাও।

লিবার্টি ফ্যাশনের মতো অনেক কারখানাই ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে বিগত দু-এক বছরে। খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনের হিসাবে বন্ধ হওয়া কারখানার সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে কেবল শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চলে বন্ধ হয়েছে প্রায় ৪০০ কারখানা। 

বন্ধ ঘোষণার ফলে ব্যবসা না থাকায় এখন ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে পারছে না এসব কারখানা। তবে অনেক কারখানা ত্রুটি সংশোধনের জন্য নতুন করে ব্যাংকঋণ নিচ্ছে।

পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রানা প্লাজা ধসের পর কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে অনেক বেশি সচেতনতা দেখা দিয়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। যার প্রতিফলনস্বরূপ পোশাক খাতের মূল্যায়নের অংশ হিসেবে চলছে কারখানা পরিদর্শন। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে কারখানার নিরাপত্তা জোরদার হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ছে ব্যাংকঋণের।

মূল্যায়ন ও পরিদর্শনের প্রভাবে ব্যাংকঋণের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও। জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ নিয়ে লিবার্টির কেমন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা কারখানা কর্তৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে। তবে এটা ঠিক যে, পরিদর্শন-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে অনেক প্রতিষ্ঠানেই ঋণের ঝুঁকি বেড়েছে।

জানা গেছে, গত তিন বছরে লিবার্টি ফ্যাশন ওয়্যারস লিমিটেডের সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার রফতানি বন্ধ হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ঋণ আছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে। এ দুই ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে ইবিএলে খেলাপির তালিকায় চলে গেছে লিবার্টি ফ্যাশন ওয়্যারস লিমিটেড।

এ বিষয়ে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার বলেন, যারা ভালো ব্যবসা করছেন, তাদের ক্ষেত্রে নতুন ব্যাংকঋণ কোনো ঝুঁকি তৈরি করছে না। পরিস্থিতি যা-ই হোক, কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে কোনো আপস করা যাবে না। এখন ব্যাংকঋণ দিতে গিয়েও আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষ সব ধরনের কমপ্লায়েন্স মানদণ্ড নিশ্চিত করছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই করছি।

জানা গেছে, এখনো পোশাক খাতের অনেক মালিক আছেন, যারা কমপ্লায়েন্স মানদণ্ডে উন্নীত হতে পারেননি। এক্ষেত্রে ব্যাংকও তাদের সহযোগিতা করেনি। রানা প্লাজা দুর্ঘটনা-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সচেতনতা এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১৪ সালের এপ্রিলে বন্ধ হয়ে যায় আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের ইনডেন্ট ফ্যাশন লিমিটেড। শিল্প গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কারখানাটি বন্ধ হওয়ার কারণ ব্যাংকিং সমস্যা। একই কারণে বন্ধ হয়ে গেছে আশুলিয়া অঞ্চলের পোশাক কারখানা প্যারাগন নিট কম্পোজিট লিমিটেড।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার মূল কারণ আর্থিক অসচ্ছলতা। কারণ পরিদর্শন-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে সংশোধনের দায় আর বাড়াতে চায়নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। পরে ঋণের বোঝা না বাড়িয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে মালিকপক্ষ। 

আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে আছে বনানী অ্যাপারেলস লিমিটেড, সেন্ট্রাল নিট কম্পোজিট, ডিও ফ্যাশন লিমিটেড, নাভিদ উল নিটওয়্যার লিমিটেডসহ আরো অনেক কারখানা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!