• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাপক উৎপাদন সত্ত্বেও আলু রফতানিতে ধস


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৪, ২০১৬, ০২:০৪ পিএম
ব্যাপক উৎপাদন সত্ত্বেও আলু রফতানিতে ধস

কমে গেছে দেশে রফতানি উপযোগী জাতের আলু উৎপাদন ও প্রাপ্যতা হ্রাস। একই সাথে কমে গেছে রফতানি বাজারেও বাংলাদেশি আলুর চাহিদা ও মূল্য। এই পরিস্থিতিতে আলু রফতানিতে গতি আনতে সংশ্লিষ্টরা প্রতিযোগী বিদেশি জাত ও গুণাবলী নিরিখে আলু নিরূপনের উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করছেন।

বর্তমানে গুণগত মানের অভাবে কমছে আলু রফতানি ধস নেমেছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে গতবছরের তুলনায় আলু রফতানি প্রায় সাড়ে তিনশ’ শতাংশ কমে গেছে। তাছাড়া দীর্ঘ সময়ে হিমাগারে সংরক্ষণে আলুর রং কালচে ধরন হচ্ছে।

ফলে নিরুৎসাহিত হচ্ছে বিদেশিরা। একই সাথে রফতানি কমে যাওয়ার সাথে নতুন বাজার সম্প্রসারণেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে রফতানিকারকরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানিতে আয় কমেছে ৩৪৭ শতাংশ। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিশ্ব বাজারে আলু রফতানিতে আয় কমেছিল ৫ শতাংশ। ওই বছর আলু রফতানিতে আয় হয়েছিল ৩ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমানে দেশে প্রতি বছর গড়ে ৮৭ লাখ টন আলু উৎপাদন হচ্ছে।

যাতে দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়েও গড়ে ১৭ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকছে। কিন্তু বিদেশে রফতানির পরিমাণ এক লাখ টনের কোটা অতিক্রম করা সম্ভব হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পটেটো এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিইএ) উদ্বেগ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।

সূত্র জানায়, আলু রফতানিতে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে জাতের অনুপযোগিতা। অথচ বিশ্ব বাজারে আলুর ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সেখানে বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার ৩ শতাংশেরও কম। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী আলুর চাহিদা খুব কম। কারণ উৎপাদনের পর হিমাগাওে সংরক্ষণ অবস্থাতেই এ দেশীয় আলুর গায়ে চামড়ার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।

ধারণ করে কালচে রূপ। অমসৃণ ও বিবর্ণ রঙের ওই আলু বিদেশি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। এ অবস্থায় যারা এদেশের আলু নিচ্ছে তারা দরও দিচ্ছে কম। ফলে প্রতিযোগী দেশের রফতানি হওয়া আলুর চেয়ে পরিমাণে এক হওয়া সত্ত্বেও এদেশের আলুর মূল্য কম পাওয়া যাচ্ছে। অথচ প্রতিযোগী দেশগুলো অনেক আগেই আলুর নতুন জাত উদ্ভাবন ও কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করেছে। ওই জাতের আলুর গুণাবলী ভালো থাকায় বিশ্ববাজারে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। মূল্যও পাচ্ছে বেশি।

সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৩-১৪ অর্থবছওে এদেশ থেকে ৩৩ দশমিক ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আলু রফতানি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওই রফতানির পরিমাণ ৫ শতাংশ কমে ৩২.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। আর সদ্য বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানির ওই হার আগের বছরের তুলনায় ৩৪৭ শতাংশ কমে তা আশংকাজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে।

যদিও আলু রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে জাতীয় কর্মসূচি অব্যাহত আছে। কিন্তু তারপরও আশানুরূপভাবে রফতানি বাড়ছে না। তার কারণ আলু জাতের এই পণ্যটির এককজাত নির্ভরশীলতা রয়েছে। প্রায় দুই দশক ধরে গ্রানোলা নামের একটি জাত থেকে উৎপাদিত আলুর ওপরই ভর করে রফতানি বাজারের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। তবে সম্প্রতি রফতানি উপযোগী জাতের আলুবীজ ছাড় করা হচ্ছে। তবে সেগুলো এখন পর্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকার কৃষক পর্যায়ে পৌঁছেনি।

এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন- গত এক যুগে দেশের বিজ্ঞানীরা ৬১টি আলুর জাত উদ্ভাবন করেছেন। তাছাড়া গত দু’বছরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি) আলুর নতুন জাত উদ্ভাবনে বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। ২০১৪ সালে বারি-৪৭ থেকে বারি-৬১ পর্যন্ত আলুর মোট ১৫টি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন বারির বিজ্ঞানীরা। উদ্ভাবিত জাতগুলো থেকে বর্তমানে দেশের ৭৫ শতাংশ আলু উৎপাদিত হচ্ছে।

আর রফতানির ক্ষেত্রে উজ্জ্বল এবং চাকচিক্যময় হলুদ চামড়ার আলুর প্রয়োজন। দেশে উৎপাদিত আলু লম্বা আকৃতির হয়। যা মূল্য সংযোজনে সহায়ক হয়। তবে শুধুমাত্র আলু উৎপাদন বাড়লেই হবে না। বড় আকারের এবং বেশি পরিমাণ রফতানি উপযোগী আলু উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

অন্যদিকে এদেশে দানা শস্যের তুলনায় আলু উৎপাদন সাড়ে ৪ গুণ বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। সেজন্য অনেক এলাকাই এখন আলু চাষে এমনভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে যেখানে আলুর চাষ বাদ দিলে দেশ থেকে বাৎসরিক একটি ফসলের আবাদই বাদ পড়ে যাবে। এসব কারণে ওই এলাকার কৃষকরা আলু চাষ থেকে সরে আসতে নারাজ।

ফলে দেশে প্রতি বছরই আলু উৎপাদন বা পটেটো গ্যাট সৃষ্টি হচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আলু রফতানি গতি বৃদ্ধিই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে এদেশ থেকে বিশ্বের ২৬টির বেশি দেশে কমবেশি আলু রফতানি হচ্ছে। আর বছর দুই হয় রাশিয়ায় আলু রফতানি শুরু হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতও সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে আলু আমদানির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জানান, আলু রফতানি বাড়ানোর লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করছে। আর কৃষি পণ্যের বাণিজ্যকরণে আলু রফতানি খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। একই সাথে দেয়া হচ্ছে বিশেষ প্রণোদনাসহ নানাবিধ সুবিধাদিও। এই প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারাও সম্পৃক্ত হয়েছেন। তারা ব্যক্তি প্রচেষ্টায় বাজার খোঁজার পাশাপাশি বাণিজ্যিক মিশনের মাধ্যমেও আলুর বাজার সম্প্রারণের চেষ্টা করছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!