• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বড় দুই রাজনৈতিক দলের আস্কারায় উদ্ধত জামায়াত


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ৪, ২০১৬, ১২:৪৯ পিএম
বড় দুই রাজনৈতিক দলের আস্কারায় উদ্ধত জামায়াত

বাংলাদেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতায়তাবাদী দল বিএনপি’র রাজনৈতিক আস্কারায় উদ্ধত হয়ে উঠেছে জামায়াত। দেশের সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদকে আক্রমণ করে জামায়াতে ইসলামী যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী একটি দল হিসেবে তাদের মুখে কখনো এটা শোভা পায় না। প্রফেসর এমাজ উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের বিবৃতি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে এর প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন। তাছাড়া রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

স্বাধীনতাবিরোধী দলটি কি করে এমন বক্তব্য দেয়ার সাহস পেল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, একজন বুদ্ধিজীবীকে যেভাবে আক্রমণ করেছে তাতে মনে হচ্ছে তারা এখনও ক্ষমতায় আছে। দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য তারা এখনও অপরিহার্য।

দেশের একটি মিডিয়ার সঙ্গে আলাপকালে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষক বলেন, দেশের বড় দুই দলের ভূমিকার কারণেই তারা বিভিন্ন সময়ে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার সাহস পাচ্ছে। জামায়াতকে নিয়ে দুই দলই নানা ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। অনেকটা ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’- এমন নীতি অনুসরণ করে চলেছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েই অতীতে বারবার পুনর্বাসিত হয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী এই শক্তিটি।

জামায়াত নিয়ে দুই দলের ভূমিকার সমালোচনা করে তারা বলেন, একদিকে সুযোগ থাকার পরও আওয়ামী লীগ তাদের নিষিদ্ধ করছে না। ক্ষমতাসীনরা মনে করছে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এর সমাধান হবে।

অন্যদিকে দলের ভেতর ও বাইরের চাপ থাকার পরও বিএনপি তাদের জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দিচ্ছে না। স্বাধীনতা যুদ্ধে দলটির ভূমিকা খারাপ ছিল। ’৭১ সালে নৃশংস হত্যা ও মা-বোনদের ইজ্জত লুটে নিয়েছে- তা আজ পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়নি। জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল এটা বলেই দায় শেষ করছে। দল হিসেবে জামায়াতকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করলেও বিএনপি দলটিকে জোটে রাখার পক্ষেই।

এমনকি জামায়াতের অনেক নেতা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারের সম্মুখীন হলেও বিএনপি কখনও এই বিচারের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেয়নি। এ ইস্যুতে বরাবরই নিশ্চুপ। জামায়াত ইস্যুতে বিএনপির ভূমিকা একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে রাখছে।

মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দীন আহমদ জামায়াতে ইসলামীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা একটি রাজনৈতিক দল। সরকার চাইলে যে কোনো মুহূর্তে ওই দলটিকে নিষিদ্ধ করতে পারে। দেশের বিরোধী দলের নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২০ দলের মধ্যে এ দলটিকে আর রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। দলটি এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। এটি এখন আর সম্পদ নয়।’

তার এমন বক্তব্যের পরপরই জামায়াতে ইসলামী কঠোর ভাষায় গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠায়। ওই বিবৃতিতে এমাজউদ্দীনের বক্তব্য প্রত্যাহার করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের অযাচিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় জনগণ ধরে নিতে বাধ্য হবে তিনি বিশেষ গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য আলো ও অন্ধকারের খেলায় লিপ্ত রয়েছেন।

বিবৃতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ২০-দলীয় জোট এমাজউদ্দীন আহমদকে মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেয়নি। জোটের পক্ষ থেকে কোনো কথা বলার অধিকার তার নেই। তিনি সম্পূর্ণ এখতিয়ারবহির্ভূত ও অযাচিত আচরণ করছেন।

এদিকে এমাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্য ‘ব্যক্তিগত’ বলে দাবি করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত মতামত। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ এ ব্যাপারে একটা রিজিওয়ান্ডার দিয়েছেন, সেখানে ব্যাখ্যা আছে।’

জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বুধবার মিডিয়াকর্মীদের বলেন, ‘আমরা জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার জন্য কোনো আইন করছি না। তবে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাতে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করা যায় সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, একজন বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে এমন মন্তব্য করার দুঃসাহস জামায়াতের হয় কিভাবে? মনে হচ্ছে, দুই দলের ভূমিকার কারণে জামায়াতের এখন দাম বেড়ে গেছে। প্রফেসর এমাজউদ্দীন একজন সুধীজন। তাকে আক্রমণ করে কথা বলা উচিত হয়নি। এ ব্যাপারে তার সংবাদ সম্মেলন করা উচিত। বিএনপির উচিত জামায়াতের কাছে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এতে অনেক লোকের ত্যাগ ও অবদান রয়েছে। যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে শ্রদ্ধা জানাবে না তাদের সঙ্গে আমি নেই। আমি মনে করি, দেশের সব মানুষের বক্তব্য এমনি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বড় দুটি দল নানা সময়ে জামায়াতকে ব্যবহার করার কারণেই বিভিন্ন সময়ে নানা ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলার সাহস পাচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী এই শক্তির উত্থানে দুটি দলই দায়ী।

তিনি বলেন, জামায়াতকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সরিয়ে দিয়ে বিকল্প শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতিতে বিশ্বাস করে। সেলিম বলেন, জামায়াত হলো দেশের শত্রু। সবাইকে এদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।

বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রফেসর এমাজউদ্দীন বিতর্ক হওয়ার মতো কিছু বলেননি। এটা তার ব্যক্তিগত মত। এ নিয়ে জামায়াত অকারণে বিতর্ক করছে। এসব করে তারা নিজেদের কপাল নিজেরা পুড়ছে।

তিনি বলেন, দেশের বড় দুটি দলের নানা ব্যর্থতার কারণেই জামায়াতের উত্থান এবং দলটি ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথা বলার সাহস পেয়েছে। জাফরুল্লাহ মনে করেন, দেশের বড় দুটি দল জামায়াতকে ব্যবহার করতে পারেনি। জামায়াতই দুই দলকে ব্যবহার করছে। জামায়াতের বড় সফলতা হচ্ছে তারা দুই দলকেই বোকা বানাতে পেরেছে।

এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, অতীতের মতো এখনও দুই দল জামায়াত ইস্যুতে একই ভূমিকা পালন করছে। সরকারের সুযোগ থাকার পরও নিষিদ্ধ করছে না। তাদের নিষিদ্ধ করে দিলেই তো কেউ জামায়াত নিয়ে কথা বলবে না।

২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, এমাজউদ্দীন আহমদ তার ব্যক্তিগত মত দিয়েছেন। যে কেউ তার ব্যক্তিগত মত দিতেই পারেন। কিন্তু জামায়াত যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা উচিত হয়নি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!