• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভবানীপুর হাট ইজারা, সরকারের গচ্চা ৩১ লাখ টাকা!


ঝিনাইদহ প্রতিনিধি মার্চ ১৬, ২০১৮, ০৭:৪৩ পিএম
ভবানীপুর হাট ইজারা, সরকারের গচ্চা ৩১ লাখ টাকা!

ঝিনাইদহ : জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার ভবানীপুর হাট ইজারা দানে ঘাপলাবাজীর অভিযোগ উঠেছে। বাংলা ১৪২৪ সালের কমপেরেটিভ অব স্টেটমেন্ট (সিএস) গায়েব করে প্রায় ৩১ লাখ টাকা সরকারের রাজস্ব ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। এ বছর হাট ইজারার সময় গত বছরের তুলনামূলক মূল্য বিবরণী খুঁজে না পাওয়ায় কম মূল্যে আবারো হাট ইজারা প্রদান করেছেন বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।

ইজারাদার আজব আলী, আতিয়ার রহমান, নজরুল ইসলাম ও বশির উদ্দীন মোল্লা অভিযোগ করেন, গত বছর তারা হরিণাকুন্ডুর ভবানীপুর সাধারণ হাট ও পানের হাট ইজারায় অংশগ্রহণ করেন। তারা যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দরদাতা হওয়ায় হাট পাননি। উচ্চ দরদাতা হিসেবে ওহিদ মেম্বর এক বছরের জন্য হাট দুইটির ইজারা লাভ করেন। ওহিদ মেম্বর সাধারণ হাট ১৮ লাখ টাকা ও পান হাট ১৭ লাখ টাকা দর দিয়ে তিনি পেয়ে যান। গত বছর ওহিদ মেম্বার সর্বনিম্ন দরেও আরেকটি দরপত্র দাখিল করেন। এরপরও তুলনামূলক মূল্য বিবরণ কমিটি উচ্চ দরদাতা হিসেবে ওহিদ মেম্বারকেই ভবানীপুরের দুই হাট ইজারা দেন।

পরবর্তীতে উচ্চ দরের সিএস গায়েব করে কাগজপত্র জালিয়াতি করে সর্বনিম্ন দর দাতা হিসেবে হাটটি প্রদান করেন হরিণাকুন্ডুর সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন। দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে দ্বিতীয় দরদাতা আজব আলী জানান, তিনি সাধারণ হাট ১৬ লাখ টাকা ও পান হাট ১৫ লাখ টাকা দর দিয়ে ওই সময় মোট ইজারার শতকরা ৩০% হিসেবে ৩ লাখ ৬১ হাজার সিডি জমা দেন হরিণাকুন্ডুর ভবানীপুর জনতা ব্যাংক শাখায়, যার সিডি নং ১৬২৩১৫ ও১৬২৩১৬। আজব আলীর প্রশ্ন ইউএনও মনিরা পারভিন দুর্নীতি, স্বজনপীতি ও অনিয়ম না করলে তাদের দাখিল করা টেন্ডারের কাগজপত্র কোথায় গেল?

১৪২৪ সালের কমপেরেটিভ অব স্টেটমেন্ট (সিএস) অফিসে সংরক্ষণ থাকলে তো ১৪২৫ সালে ভবানীপুরের হাট এত কম টাকায় ইজারা হতো না বলেও তিনি জানান। এ বছর ভবানীপুর সাধারণ হাট ৫ লাখ ২০ হাজার ও পান হাট মাত্র ৩৫ হাজার ৮৫০ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। গত বছর হাট ইজারায় অংশগ্রহণকারী ভবানীপুর গ্রামের বীর বশির উদ্দীন অভিযোগ করেন, ১৪২৪ সালে তিনি শুধু পান হাটের দর দিয়েছিলেন ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। সেই হিসেবে তিনি ৭০ হাজার টাকার সিডি করেন।

তিনিও এই দুর্নীতির বিচার চান। দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে ইজারা গ্রহিতা আজব আলী, আতিয়ার রহমান, নজরুল ইসলাম ও বশির উদ্দীন মোল্লা গত ২৭ জানুয়ারি হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ইউএনও দপ্তর থেকে সেটি সিল মোহরযুক্ত সাক্ষরে রিসিভও করা হয়। কিন্তু মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি কোন তদন্ত করেননি। বরং ইউএনও সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন ৩০ বছরের সিএস যাচাই করে দেখা গেছে ভবানীপুর হাটের বার্ষিক ইজারা বৃদ্ধি পায়নি। ফলে এ বছরও কম টাকায় হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া তার কাছে হাট নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি বলেও ইউএনও সাংবাদিকদের জানান। বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুন্ডুর সাবেক ইউএনও ও বর্তমান কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভিন জানান, ভবানীপুরের হাট নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। হাটের সিএস অফিসেই ছিল বলে তিনি জানান। হরিণাকুন্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান এড এম এ মজিদ জানান, উপজেলা চেয়ারম্যানরা হাট ইজারা কমিটির সভাপতি। তারপরও গত বছর আইনের অজুহাতে আমার কাছ থেকে ফাইল নিয়ে নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, ভবানীপুরের হাট নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে তা সঠিক। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিচার হওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) খোদেজা খাতুন জানান, তিনি বিষয়টি একটু একটু শুনেছেন। তবে এটি তার এখতিয়ার বহির্ভূত। গত বছরের হাট ইজারাদার ওহিদ মেম্বর কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন অস্বীকার করে বলেন, আমি নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে হাট পেয়েছি। কারো টাকা দেয়নি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!