• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভারতীয়দের চেয়ে আমাদের নাটক অনেক ভালো হয়’


মিতুল আহমেদ নভেম্বর ২২, ২০১৬, ০৮:৩০ পিএম
‘ভারতীয়দের চেয়ে আমাদের নাটক অনেক ভালো হয়’

লারা লোটাস। ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা তিনি। অভিনয়ের জন্য ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী মনোনীত হয়েছেন বার কয়েক। সর্বশেষ এপার বাংলা ওপার বাংলার মিলন উৎসবে ২০১৫ সালে অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে তিনি ছোট পর্দার ‘সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন। জনপ্রিয় এই অভিনয় শিল্পীর সঙ্গে তার বর্তমান ব্যস্ততা আর সাম্প্রতিক সময়ের ছোট পর্দার সংকট নিয়ে কথা বলেছেন মিতুল আহমেদ-

এই সময়ে আপনার কাজ কর্ম নিয়ে ব্যস্ততা...?
বেশকিছু নাটক, টেলিফিল্ম নিয়ে ব্যস্ত আছি। সম্প্রতি ‘এবং ক্ষুধা’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন শাহরিয়ার ফেরদৌস। এছাড়া আরো কিছু কাজ শিগগিরই শুরু করবো। ‘এবং ক্ষুধা’য় আমার সহ-শিল্পী হিসেবে ছিলেন কণ্ঠশিল্পী আগুন ভাই। ছবিতে সমাজের দুই বিপরীতমুখি শ্রেণিকেই দেখিয়েছেন নির্মাতা। ধনী ও গরিব শ্রেনির মধ্যে যে বৈষম্য তা উঠে এসেছে। বিশেষ করে মানুষের খাবার নিয়ে বৈষম্যের দিকটি গুরুত্ব পেয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য এই ছবিতে। আমি গরিব পরিবারের একটি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আর আগুন ভাইকে ধনী মানুষের চরিত্রে দেখা যাবে।

আগুন। তিনিতো মূলত একজন কণ্ঠশিল্পী। তারসাথে অভিনয়টা কেমন উপভোগ্য?
আগুন ভাইয়ের সাথে এটাই নতুন কাজ নয়। এর আগেও আমি তার সাথে একাধিক নাটক সিরিয়ালে কাজ করেছি। অসাধারণ মানুষ তিনি। সিনে আগুন ভাই থাকলে কারো আর টেনশন থাকে না। পরিচালক থেকে আর্টিস্ট কলাকুশলি সবাইকে তিনি মাতিয়ে রাখেন। যেকোনো সমস্যায় আগুন ভাই থাকলে দ্রুতই মুশকিল আছান। ফলে তিনি থাকলে আসলে আমরা মজায় মজায় কাজটা করে ফেলতে পারি। আর তিনিতো বহু আগে থেকেই অভিনয় করেন।

তার সাথে আরো কোনো কাজের পরিকল্পনা আছে?
আজকে রাতেই(২২ নভেম্বর মঙ্গলবার) আগুন ভাইয়ের সাথে একটি টেলিফিল্মে অভিনয় করতে রংপুর যাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিতব্য টেলিফিল্মটি পরিচালনা করছেন সুলতান আহমেদ। যা বুদ্ধিজীবী দিবসে মানে ১৪ ডিসেম্বর সম্প্রচার হবে।   

আপনার শিক্ষকতা কেমন চলছে?
এমনিতেই অভিনেত্রী হওয়ার দরুন আমার জন্য স্কুলে একটু বিশেষ সুবিধা। কিন্তু মালয়েশিয়ায় শুটিং করতে গিয়ে মাস দুয়েক আগে অ্যাকসিডেন্ট হওয়ায় স্কুল থেকে আপাতত ছুটি। ডাক্তার বলেছে অন্তত পাঁচ ছ’মাস বিশ্রাম নিতে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত আমি এখনই কিভাবে যেনো সুস্থতাবোধ করছি। হয়তো ডিসেম্বরেই আবার স্কুলে যাবো। আর এমনিতে শিক্ষকতা বিষয়টি আমার ভালো লাগার।

যতোটুকু জানি, আপনি লেখালেখির সঙ্গেও যুক্ত? বই পাবো কবে?
হ্যাঁ। করি। কিন্তু বই করার মতো না। হয়তো সামনে নাটকের জন্য স্ক্রিপ্ট লিখতে পারি। 

আপনার উপস্থাপনা ক্যারিয়ার নিয়ে যদি বলেন....
অভিনয়ের পাশাপাশি আমার দুর্দান্ত পছন্দ অ্যাংকরিং।  দুটো চ্যানেলে নিয়মিত অ্যাংকরি করছি আপাতত। এরমধ্যে একটি মিউজিক্যাল প্রোগ্রাম। অভিনয়ের বাইরে এগুলো সত্যিই উপভোগ করি।

দেশি টিভিতে বিদেশি সিরিয়াল প্রদর্শন নিয়ে এই সময়ে বিরাট একটা আন্দোলনের উপক্রম হয়েছে। আর্টিস্ট হিসেবে এই আন্দোলনে আপনার অবস্থান?
আমি এই আন্দোলনের বিপক্ষে বা পক্ষে বলবো না। কিংবা বিদেশি সিরিয়াল প্রদর্শনের বিপক্ষে বলতেও রাজি নই। কোনো কিছু না বোঝে, না চিন্তা করে শুধু হুজুগে একটা কিছুর প্রতিপক্ষে দাঁড়ালে সেটার ভালো ফল আসে না। কিন্তু আমি একজন দর্শক হিসেবেতো পৃথিবীর সবকিছু দেখতে চাইবো। তাছাড়া সেগুলো ঠেকানোর আন্দোলনে গেলেই কি আমাদের নাটকের বিশেষ লাভ হবে!

বিদেশি সিরিয়াল ঠেকানোর আন্দোলনে তাহলে আপনার অবস্থানটা কি, পরিস্কার করে যদি বলেন?    
খাবার, পোশাক এমনকি নিত্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভারতীয় পণ্য এখন বাংলাদেশে ছয়লাভ। সেই হিসেবে ভারতে কিন্তু আমাদের বাজার নগন্য। ফলে তারাতো চাপিয়ে দিতে চাইবেই। কিন্তু আমি চাইবো ভারতীয় সিরিয়াল ঠেকানোর আন্দোলনে না গিয়ে বরং তাদের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে যেতে। যদি তারা প্রস্তাবে রাজি না হয় তাহলে আমিও তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই। তাদের চেয়ে দেশপ্রেম আমার কম নয়। কিন্তু আগে তাদের সাথে সমঝোতায় যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত বলেই আমার মনে হয়।

ভারতীয়রা কি আমাদের নাটক সিরিয়ালগুলোকে মানসম্মত ধরে তাদের চ্যানেলে নিতে চাইবে?
ভারতীয় সিরিয়ালের চেয়ে আমাদের নাটক অনেক ভালো হয়। ওদের সিরিয়াল কিছু আমি দেখেছি। কিছু কাজ দেখে বিরক্ত হয়েছি। ঘুম থেকে মেকাপ নিয়ে উঠে। এছাড়াও আরো বেশকিছু চোখে লাগার ব্যাপার থাকে যেগুলো আমাদের নাটকে দেখা যায় না। আর ইন্ডিয়ার মানুষ, যারা আমাদের নাটক দেখে তারা সব সময়ই আমাদের চ্যানেলের নাটকগুলোর মান নিয়ে প্রশংসা করে। ভালো বলে, কিন্তু তারা তাদের দেশে আমাদের নাটকগুলো দেখতে পারে না। আন্দোলন করে দেখতে পারার বিষয়টি বন্ধ করা ঠিক হবে না, বরং এই দেখতে পারার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।   

এই কথাগুলো বিদেশি সিরিয়াল ঠেকানোর সঙ্গে যারা যুক্ত তারা কিভাবে নেবে বলে আপনি মনে করেন?
আগে নিজেদের ঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে হবে। আমরা কি করবো বা করতে চাই সেটা। এর আগেও এমন কথা উঠেছে। আন্দোলনও হয়েছে। পরবর্তীতে দেখা গেছে যারা বিদেশি সিনেমা-সিরিয়াল ঠেকানোর পক্ষে ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ চুপিসারে সেগুলো আমদানি করেছেন।   

আসলে এইসব বিষয় নিয়ে সবাই শুধু নেগেটিভ কথাই বলছেন। কিন্তু পজেটিভ কিছু চিন্তা করছেন না। কিন্তু আমি অন্যভাবে বলি। পৃথিবীতে কতো মানুষ মারা যাচ্ছে। সবাই বলছে আর হুংকার ছাড়ছে যে, মুসলিমরা হিন্দু মারছে, হিন্দুরা মুসলিম মারছে। কিন্তু কেউ বলছে না যে দুনিয়াজুড়ে মানুষ মরছে। কেউ বলছে না। সবাই শুধু সবাইকে দোষারোপ করছে, কেউ এই অবস্থা থেকে উত্তরণের দিকে যাচ্ছেন না। একটা ভালো সমাধানের পথ কেউ চাচ্ছেন না। প্রটেস্ট কিংবা ডিলিটের চিন্তা করছেন সবাই।

আপনার কি মনে হয়, কিভাবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব?
সবকিছুকে বাদের তালিকায় না ফেলে একটা সমঝোতায় যাওয়া উচিত। সমন্বয়ের দিকে যাওয়া উচিত। প্রয়োজনে দুই দেশের আমদানি-রপ্তানিকাররা একসঙ্গে বসে সমতার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারেন। ভারতীয় পাঁচটা সিরিয়াল আমাদের চ্যানেলে দেখানো হলে যাতে আমাদের পাঁচটা সিরিয়াল তাদের টেলিভিশনে দেখানো হয়। কাউকে অশ্রদ্ধা বা ছোট করা উচিত হবে না। তাদেরকে বোঝাতে হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!