• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের ঢলে বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হওয়ার শঙ্কা


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জুলাই ২৪, ২০১৭, ০৭:৪৯ পিএম
ভারতের ঢলে বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হওয়ার শঙ্কা

ঢাকা: হু-হু করে বাড়ছে পদ্মার ভারতীয় অংশ গঙ্গার পানি। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, গঙ্গার পানি ১৮ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাজ্যগুলোতে আগামী ২৮ জুলাই পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হবে। এতে রাজ্যগুলোর নদীর পানির ‍উচ্চতা বেড়ে যাবে। গঙ্গায় পানি বৃদ্ধি হলে, নিম্ন অঞ্চল হিসেবে তা বেয়ে পড়বে পদ্মায়। যা অন্যান্য নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি করবে।

এখন দেশের অনেক জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ভারত থেকে আরও নতুন পানি আসলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে দেশের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ২৮ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। সেই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২৮ জুলাই পর্যন্ত ভারতের দক্ষিন-পূর্বের জেলাগুলোতে ভারি বৃষ্টিপাত হবে। নিম্নচাপটি এই মুহূর্তে অবস্থান করছে পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডের উপর। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নদী, খাল-বিলগুলি উপচে পড়ছে। বাড়ছে বড় নদীগুলোতে পানির স্তর। জোয়ারের সময় গঙ্গার পানিরস্তর প্রায় ১৮ ফুট বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্ত প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ, ঝারখন্ড, মেঘালয়, ত্রিপুরায় ভারি বৃষ্টিপাত হবে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে কলকাতার হাল ইতিমধ্যেই খারাপ হতে শুরু করেছে। দক্ষিণবঙ্গের অনেক জেলা কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিরামহীন বৃষ্টিতে বর্ধমানে দামোদর, ভাগীরথী এবং অজয় নদে পানি বেড়েছে। ফলে ভারত থেকে আসা উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানিতে ডুবে যেতে পারে বাংলাদেশ। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতেও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ সংলগ্ন দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

এ ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েকদিন ধরে কখনো থেমে থেমে, কখনো বা ঝুমবৃষ্টি ঝরছে। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে দেশের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাংলাদেশে বৃষ্টি হোক আর না-ই হোক, এখানকার নদ-নদী ফুলেফেঁপে উঠবে ভারতীয় উজান থেকে আসা পানিতে। কেন না ভারতের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ভারী বৃষ্টির পূর্ভাবাসে বন্যার বিপদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

আসাম, মেঘালয়, উত্তরাখন্ড, উত্তর প্রদেশর পূর্বাঞ্চল, ছত্তিশগড়, বিহার, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, সিকিম, ওডিশা, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে ভারী বৃষ্টির হবে ২৮ জুলাই পর্যন্ত। এসব রাজ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বৃষ্টি হোক আর না-ই হোক, এখানকার নদ-নদী ফুলেফেঁপে উঠবে। কারণ, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদী।

গঙ্গা নদী উত্তরাখ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পদ্মা নামে। আসাম হয়ে এসেছে ব্রহ্মপুত্র। ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে যে নদীর উৎপত্তি তা বাংলাদেশে তিস্তা। তাই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ভারী বৃষ্টি হলে বন্যার বিপদের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে দুই দেশের আবহাওয়া একই ধরনের। এটি আলাদা করা যায় না। বাংলাদেশে বৃষ্টি না হলেও ভারতের এসব রাজ্যে বৃষ্টির প্রভাব তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে পড়বে এ দেশের নদ-নদীতে। 

 

এদিকে দেশের ৩২টি নদ-নদী পর্যবেক্ষণ করে থাকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্র। তাদের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার(২৪ জুলাই) যমুনার পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানিও বাড়ছে। সারাদেশের ৯ পয়েন্টে সতর্ক অবস্থা জারি করা হয়েছে ও ৩ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দক্ষিণের জেলা চট্টগ্রাম বন্দরও ডুবে রয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জুন মাসে বাংলাদেশে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল ৩৪৭ মিলিমিটার। কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে ৪৫৭ মিলিমিটার।

অর্থাৎ পূর্বাভাসের চেয়ে গড়ে ১১০ মিলিমিটার বেশি বৃষ্টি হয়েছে। গত ৩০ বছরের বৃষ্টিপাতের গড় হিসাব করে স্বাভাবিক বৃষ্টির পূর্বাভাস নির্ধারণ করে আবহাওয়া অধিদফতর। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জুনে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ৩ দশমিক ৭ ভাগ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। 

ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এর প্রভাব বেশি পড়তে পারে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সময় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল নদীভাঙন ও নদীতীরবর্তী এলাকা ডুবে যেতে পারে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!