• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতের প্রতি আস্থা বাড়ছে বিএনপির!


সোনালী বিশেষ আগস্ট ২৫, ২০১৭, ০৮:১০ পিএম
ভারতের প্রতি আস্থা বাড়ছে বিএনপির!

ফাইল ছবি

ঢাকা : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না গিয়ে যে ভুল করেছিল বিএনপি, তা এবার পুষিয়ে নিতে ব্যাপক সক্রিয় একাধিকবার ক্ষমতায় থাকা দলটি। আর তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিদেশিদের পাশে চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের প্রতি প্রত্যাশা বাড়ছে দীর্ঘদিন সংসদের বাইরে থাকা এই দলটির।

বিএনপির বিদেশনীতি নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকজন নেতা মনে করেন, ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দেশটির বাংলাদেশ নীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে; যা এতদিন সদ্যবিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর কারণে অপরিবর্তিত ছিল।

ইতোমধ্যেই লন্ডনে বিজেপির একটি প্রতিনিধিদের সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের একটি বৈঠক হওয়ার গুঞ্জন উঠেছে। ওই বৈঠকে অংশ নিতে বিএনপির বিদেশি উইংয়ের আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী অংশ নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।

তবে বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করে তারেক রহমানের একজন উপদেষ্টা জানান, ‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিজেপির লন্ডনের বৈঠক হওয়ার খবর ভিত্তিহীন।’ যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ জানান, এ ব্যাপারে কিছু জানা নেই।

সূত্রের ভাষ্য, বিএনপি নীতিগতভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। আর উন্নয়ন হচ্ছেও। সেটি বাংলাদেশে তিস্তার গেট আকস্মিক খুলে দেওয়াসহ দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ঘনঘটায় স্পষ্ট।

এদিকে, বিজেপির ব্রিটেন থেকে অর্থদাতা প্রভাবশালী একটি পক্ষের সঙ্গে বিএনপির এক ব্যবসায়ী নেতা ও তার ছেলের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। খালেদা জিয়ার এবার সফরের আগেই তারা বাবা-ছেলে লন্ডনে পৌঁছান। এসব কারণে খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে বিজেপির বৈঠকের গুঞ্জন ছড়িয়েছে বলে একটি সূত্র মনে করে।

ফাইল ছবি

বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তা মনে করেন, ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই সুবিদিত। তবে বিজেপির বর্তমান মেয়াদে ভারতের রাষ্ট্রপতি, কংগ্রেসের সাবেক নেতা প্রণব মুখার্জী হওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রতি দুর্বলতা দেখিয়ে এসেছে দেশটির সরকার।

গত ২০ জুলাই দেশটির নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন রামনাথ কোবিন্দ। সেই থেকে বিএনপি নতুন আশার আলো দেখতে পায়। যদিও নরেন্দ্র মোদির বিজেপি ক্ষমতায় বসার পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপি সমর্থকরা মিষ্টি বিতরণ করেছিল। বিএনপি ভেবেছিল, কংগ্রেস যেহেতু আওয়ামী লীগকে পরোক্ষভাবে সমর্থন জানায়, তাই বিজেপি হয়ত বিএনপিকে বুকে টেনে নেবে। কিন্তু বিএনপির সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণতি লাভ করে।

তবে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মেয়াদ শেষে রামনাথ কোবিন্দ নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় ফের নড়েচড়ে বসছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। এবার দেখা যাক, বিএনপি হালে পানি পায় কিনা।

এদিকে, বিএনপির এক নেতার দাবি, রাষ্ট্রপতি পদে পরিবর্তন আসায় খানিকটা প্রত্যাশা তো থাকবেই। একইসঙ্গে শঙ্কার কথাও জানিয়ে রাখলেন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কাজ করা এই নেতা। তার ভাষ্য, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিষয়টি প্রতিবেশী দেশের কাছে বিএনপিকে এখনও প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছে। একইসঙ্গে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে পরবর্তী সময়ে দলে তারেক রহমানের অবস্থান নিয়েও শঙ্কা রয়েছে ভারতের।

বিএনপি লন্ডন শাখার একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চীনের সম্পর্কও ভারতকে ভাবাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলটির প্রতি বিজেপি সরকারের বিরাগ তৈরি হতে পারে।

যদিও ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই ওই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অমিত শাহ জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদির সরকারে ভারতের বিদেশনীতিতে তেমন কোনও পরিবর্তন আসছে না। ওই বছরেই বিএনপির জোটসঙ্গী খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলীও মত দিয়েছিলেন যে, সরকারের পরিবর্তন হলেও বাংলাদেশনীতিতে ভারতের  কোনও পরিবর্তন আসছে না।

একাধিক সূত্রের দাবি, বিজেপির সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময় থেকে বিরাজমান। দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক তৈরির সময়ও সেটি প্রমাণিত হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভারত যেভাবে সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, ভবিষ্যতেও এর ব্যতিক্রম হবে না।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার এমনটি মনে করছেন না। তিনি বলেন, ভারতের সরকারের সঙ্গে কংগ্রেস আমলে বিএনপির সম্পর্ক যেমন ছিল, বিজেপি সরকারের সময়ও একই আছে। আমরা ইন্দিরা গান্ধীকে যেভাবে দেখেছি, রাজীব গান্ধী বা সোনিয়া গান্ধী, তাদের প্রত্যেককেই যেভাবেই দেখেছি, নরেন্দ্র মোদীকেই সেভাবেই দেখছি। আর তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, সে কারণে বিজেপি থেকে কোনও উপকার হবে, এটা আমরা কোনও সময় চিন্তা করিনি।

তবে ভারতের প্রতি বিএনপির প্রত্যাশার বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। জাতীয়তাবাদী ঘরানার এই বুদ্ধিজীবী তিনি বলেন, বিশ্বে পরিবর্তন হচ্ছে। ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশ তার প্রতিবেশী দেশে গণতান্ত্রিকব্যবস্থা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে ভূমিকা তো রাখতেই পারে। সেটাই তো স্বাভাবিক। এভাবে অনেকেই ভাববেন এবং ভাবা উচিতও। তিনি বলেন, শুধু ভারতই নয়, আশেপাশে যারাই আছে, তারাও চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক। গণতন্ত্র ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হোক।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!