• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের বাড়লেও রেমিটেন্স কমবে বাংলাদেশের


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক অক্টোবর ৭, ২০১৭, ০৫:৩২ পিএম
ভারতের বাড়লেও রেমিটেন্স কমবে বাংলাদেশের

ঢাকা: এক টানা দুই বছর ধরে প্রবাসী আয় তথা রেমিটেন্স কমছে বাংলাদেশের। রেমিটেন্স কমার তালিকায় রয়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোও। কিন্তু এবার নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর রেমিটেন্স আয় বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আয় হবে প্রতিবেশি দেশ ভারতের। অথচ বাংলাদেশের আয় কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়ে বিশ্ব ব্যাংক।

এক প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক বলছে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে পর পর দু্ই বছর রেমিট্যান্স কমার পর এবছর বৃদ্ধির পাবে। বিশ্বব্যাংক আশা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চাঙ্গা হবার সুফল পাবে উন্নয়নশীল বিশ্ব।

এ হিসাবে কিন্তু সুখবর নেই বাংলাদেশর জন্য।

এই অঞ্চলের অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ায় বেশি সুফল পাবে সাব-সাহারান আফ্রিকা, ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো। সেই সঙ্গে লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে গালফভুক্ত আরব দেশগুলো আর্থিক কৃচ্ছতা সাধন, তেলের মূল্য কম থাকা এবং বৈদেশিক জনশক্তি নিয়োগে নিরুত্সাহকরণ নীতির ফলে রেমিট্যান্সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে।

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এবছর ৫ দশমিক ২ ভাগ কমে যেতে পারে। যা আগের বছর ২০১৬ সালে কমেছিল ১১ দশমিক ৪ ভাগ।

সম্প্রতি প্রকাশিত মাইগ্রেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে, উন্নয়নশীল বিশ্বে এবছর ৪ দশমিক ৮ শতাংশ রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে যা আগের দুইবছর ঋণাত্মক ছিল। দেশগুলোতে মোট সাড়ে ৪শ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স প্রবাহ যেতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তানের রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের মতোই থাকবে। বৃদ্ধি পাবে ভারতের রেমিট্যান্স। কিন্তু বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালে রেমিট্যান্স প্রবাহ আগের বছরের তুলনায় কমে যাবে।

প্রতিবেদনে আশা করা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরণকারী দেশ ভারত এ বছর ৬৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসবে। চীনে যাবে ৬৩ বিলিয়ন, ফিলিপাইনে ৩৩ বিলিয়ন, মেক্সিকো ৩১ বিলিয়ন, নাইজেরিয়া ২২ বিলিয়ন, পাকিস্তানে ২২ দশমিক ৩ বিলিয়ন এবং বাংলাদেশে আসবে মাত্র ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। সবমিলিয়ে এবছর দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি মাত্র ১ দশমিক ১ ভাগ হতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রবাস আয়ের বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। শ্রমিকদের বেশিরভাগ এই অঞ্চল হতে রেমিট্যান্স পাঠায়। প্রবাসী শ্রমিকদের ৮৪ ভাগ গালফভুক্ত আরব দেশগুলোতে যাচ্ছে। গেল অর্থবছরে এই অঞ্চলে শ্রমিক প্রেরণ ৫৪ ভাগ বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে চার লাখ শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর ২০১৫ সালে তুলনায় ২০১৬ সালে শ্রমিক প্রেরণ বেড়েছে।

এক বছরের তুলনায় ৫৮ হাজার থেকে এক লাখ ৪৩ হাজারে উন্নীত হয়েছে এই অঞ্চলে শ্রমিক গমন। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই সংখ্যা ২৫ হাজার ২৭১ জন থেকে কমে ৮ হাজার ১শতে নেমে আসে।

প্রবাসে শ্রমিক প্রেরণ বৃদ্ধি পেলেও রেমিট্যান্সে তার প্রভাব পড়ছে না কেন, এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহাবুব আলী ইত্তেফাককে বলেন, এর মূল কারণ হলো শ্রমিদের দক্ষতা না থাকা। যে সুযোগটা ভারতসহ অন্যান্য দেশ নিচ্ছে। বাংলাদেশের শ্রমিকরা দক্ষ না থাকায় কম মজুরিতে বিভিন্ন দেশে কাজ করছে।

ফলে সংখ্যা বাড়লেও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। তাছাড়া রেমিট্যান্স প্রেরণে জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতি গড়ে উঠেনি। এর ফলে হুন্ডি এবং অন্যান্য উত্সগুলো সুযোগ নিচ্ছে। তাই রেমিট্যান্স প্রেরণে ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে মোবাইল বা হুন্ডির মতো পদ্ধতি গ্রহণ করছে অনেকেই।  এজন্য ব্যাংকিং সেবার মান বাড়াতে হবে। ব্যাংকগুলোকে আরো সহজ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

তবে আশা করা হয়েছে আগামী বছর অর্থাত্ ২০১৮ সালে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে যা প্রায় ৪৬৬ বিলিয়ন ডলার।

২০১৮ সালে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স ৩ দশমিক ১ ভাগ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভারতে হতে পারে আড়াই শতাংশ, পাকিস্তানে ২ দশমিক ৪ ভাগ এবং শ্রীলঙ্কায় ২ দশমিক ২ ভাগ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আতা

Wordbridge School
Link copied!