• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভারী অস্ত্র নিয়ে তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনী


কক্সবাজার প্রতিনিধি মার্চ ২, ২০১৮, ০৫:৩৯ পিএম
ভারী অস্ত্র নিয়ে তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার বাহিনী

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তে অস্ত্র হাতে পাহারা দিচ্ছেন মিয়ানমারের সেনারা

কক্সবাজার: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু পয়েন্টের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের পাশে দাঁড়িয়ে ভারী অস্ত্র নিয়ে মিয়ানমারের সেনারা পহারা দিচ্ছে। এতে ওই এলাকায় বহিনী থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) সারা রাত থেমে থেমে ফাঁকাগুলি বর্ষণের ঘটনায় আতঙ্কে রাত পার করেছে জিরো পয়েন্টে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ও এপারের বাংলাদেশি অধিবাসীরা।

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে শুক্রবার (২ মার্চ) সকাল থেকে সেনাসমাবেশ বাড়িয়ে চলেছে মিয়ানমার। এপারে সতর্কাবস্থায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

চলমান রোহিঙ্গা সংকটে পালিয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার দিল মোহাম্মদ, মৌলভী আরেফ আহমদ, আনোয়ার শাহ, মো. জসিম উদ্দিন ও মো. আমিন বলেন, বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) রাত ৯টার পর থেকে সীমান্তের মিয়ানমার অংশে কয়েক দফায় ফাঁকা গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। এটি অব্যাহত ছিল সারা রাত। তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়ার প্রত্যেকটি খুঁটির সঙ্গে সিঁড়ি (মই) দিয়ে রেখেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। যে কেনো সময় ওই মই বেয়ে  জিরো পয়েন্টে প্রবেশ করতে পারে মিয়ানমার সেনারা।

তারা রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে অস্ত্র তাক করে রেখেছেন, যে কোনো মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের ওপর গুলি বর্ষণ করতে পারে। সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন তারা। গুলির শব্দে আতঙ্ক আরো বেড়েছে।

মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট এলাকার চেয়ারম্যান এশার আলম বলেন, শুক্রবার (২ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় শূন্যরেখার আশ্রয়শিবিরের একেবারে কাছে (তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ায়) গিয়ে দেখা গেছে, ট্রাকে করে সীমান্তে সেনাসমাবেশ ঘটাচ্ছে মিয়ানমার। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ওই সীমান্তে ১৪-১৫টি ট্রাকে আনা হয়েছে তিন শতাধিক সেনা।

এরআগে বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) সকালে ৭টি বড় গাড়ি ও ৩টি ছোট গাড়িতে করে প্রায় ২০০ জন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি সীমান্তের জিরো পয়েন্টে টহল দেয়া শুরু করে। এরপর পালা পরিবর্তন করে তারা টহল অব্যাহত রেখেছে। এ সময় তাদের হাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে।

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, সেনাদের এ উপস্থিতিতে শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ সারা রাত ঘুমাতেও পারেনি। শিবিরের রোহিঙ্গারা এখন পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে চাইছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে অন্তত ২ শতাধিক পরিবার প্রবেশ করেছে। তাদের ধারণা ছিল জোর করে তাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানো হতে পারে। শুক্রবার (২ মার্চ) সকাল থেকে পরিস্থিতি থম থমে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, মিয়ানমার তাদের সীমানায় সেনাসংখ্যা বাড়াচ্ছে। রোহিঙ্গারা রয়েছে জিরো পয়েন্টে। গোলাগুলি ও টহল সব সীমান্তের ওপারেই হচ্ছে। সীমান্তে আমাদের অংশে কোনো সমস্যা নেই। তারপরও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।

সীমান্তের মিয়ানমার অংশের এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) বিকেলে পিলখানায় এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড ট্রেনিং) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে তুমব্রু সীমান্তে নিজেদের অংশের প্রায় দেড়শ’ গজের মধ্যে ভারী অস্ত্রসহ মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখে বিজিবির শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মিয়ানমারের ওপারে হঠাৎ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের খবরটি জানার পর বিজিপিকে পতাকা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা সাড়া দিলেই পতাকা বৈঠক হবে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম সরওয়ার কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে সীমান্তের শূন্যরেখায় সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে মিয়ানমার। তাদের উদ্দেশ্য—রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ ও সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা।

উল্লেখ্য, গত ২৬ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্রু কোনারপাড়ার জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয় সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গা।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!