• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভালো ফলনেও দাম না পেয়ে হতাশ চাষি


রাজশাহী প্রতিনিধি মার্চ ২০, ২০১৭, ০৫:৫৯ পিএম
ভালো ফলনেও দাম না পেয়ে হতাশ চাষি

ক্ষেত থেকে আলু তুলে পাশেই বস্তা ভরে রাখছেন চাষি

রাজশাহী: রাজশাহীতে আলুর ভালো ফলন হলেও হিমাগারে জায়গা সঙ্কটে আলু সংরক্ষণ করতে না পেয়ে হতাশ চাষি। কঠোর পরিশ্রমরে পর আলুর ফলন হওয়ায় লাভের আশা করেছিলেন কৃষক। কিন্তু হিমাগারে জায়গা সঙ্কটে কোনো উপায় না পেয়ে ৭৮০ টাকা দরে আলুগুলো অন্যের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন চাষি। ফলে দাম না পেয়ে হতাশ জেলার আলু চাষিরা।

তানোর উপজেলার চিমনা গ্রামের কৃষক আব্দুল হানিফ দুলু জানান, অনেক আশা নিয়ে ৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চলতি মৌসুমে আলু চাষ করেছিলেন। লাভের স্বপ্ন বুকে নিয়ে অনেক খরচা। বীজ, কীটনাশক, সার, শ্রমিকের বেতনসহ আরো অনেক ঝামেলা পেরিয়ে মাঠের আলু উঠতে শুরু করেছে।

তিনি আরো জানান, ফলন ভালো হলেও মাথায় হাত। সীমিত সংখ্যক হিমাগারে জায়গা সঙ্কট। তাই আপাতত মাঠে রাস্তার পাশে বস্তা প্যাকেট করে খোলা আকাশের নিচে আলুগুলো রেখেছিলেন। কিন্তু শেষে কোনো উপায় না পেয়ে ৭৮০ টাকা দরে আলুগুলো অন্যের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

আব্দুল হানিফ দুলু বলেন, তার ছয় বিঘা জমিতে ২৩৯ বস্তা (প্রতি বস্তা আলু ৮৫ কেজি) আলু উৎপাদন হয়েছিলো। বিঘাতে খরচ হয়েছিলো ২৭ থেকে ২৮ হাজার টাকা। মাঠেই আলু প্রতি বস্তা ৭৮০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। এতে প্রতি বিঘায় ৩১ হাজার টাকায় পাচ্ছেন তিনি। এতে কোনোভাবে আসলটা উঠে এসেছে তার।

এই সমস্যা শুধু আব্দুল হানিফ দুলুর একার নয়, তার মত সমস্যা পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা। জেলার বাগমারা, পবা, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, দুর্গাপুর, চারঘাটসহ অন্য উপজেলাগুলোর একই অবস্থা। হিমাগারে জায়গা সংকুলনের কারণে কৃষকরা মাঠেই কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকে ভাল দামের আশায় ১০ থেকে ১২ দিন ধরে আলু বস্তা ভর্তি করে মাঠে ও রাস্তার পাশে রেখে অপেক্ষা করছেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি, এবার জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে মাঠে চাষ হয়েছে ৩৫ হাজার ৬০০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যদি মাঠে আলু উৎপাদিত হতো তাহলে এ বছর পরিমাণ হতো প্রায় ৯০ লাখ বস্তা। যেহেতু মাঠে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আলু বেশি চাষ হয়েছে তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানাচ্ছে যে, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি বস্তা ছাড়িয়ে যেতে পারে।

রাজশাহী জেলায় সরকারি-বেসরকারি ২৭টি হিমাগার আছে। হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ করা যাবে প্রায় সাড়ে ৩৪ লাখ বস্তা। বাকি তিন ভাগের দুই ভাগ আলু নিয়ে  বেকায়দায় পড়েছেন চাষিরা।

কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা জানান, আলুর উৎপাদন বেশি। আলু সংরক্ষণে রাখার জন্য সমস্যায় পড়েছেন তারা। অনেকেই বিক্রিও করে দিচ্ছেন। আলু নিয়ে এক রকম জিম্মি হয়ে পড়েছে কৃষকরা। মাঠেই বিক্রি করে দেয়ার কারণে ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হযরত আলী বলেন, এবারে অনুকুল আবহাওয়া এবং আলু ক্ষেতে অন্যান্য বছরের ন্যায় মড়ক না থাকায় ব্যাপক উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে, রাজশাহী অঞ্চলে আরো বেশি হিমাগার থাকলে চাষিদের কষ্ট কম হতো বলে তিনি মনে করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!