• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
১০ জনের নাম দেবে সার্চ কমিটি

ভালো মানুষ পাওয়া চ্যালেঞ্জ!


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭, ১০:৫৪ এএম
ভালো মানুষ পাওয়া চ্যালেঞ্জ!

ঢাকা : শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচনের কাজ প্রায় শেষ করেছে সার্চ কমিটি। রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া ১২৫ জনের তালিকা ছোট হয়ে ২০ জন হয়েছে কয়দিন আগেই। আগামীকাল সোমবার  (০৬ ফেব্রুয়ারি) এই তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে ১০ জনে নামিয়ে আনা হবে। এ জন্য ওই ২০ জনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে তাদের মতামত নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বাদ দেয়া হচ্ছে শারীরিকভাবে অসুস্থ, বয়সের ভারে ন্যুব্জ এবং অনাগ্রহীদের নাম। 

এই প্রক্রিয়ায় ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে ৮ ফেব্রুয়ারির আগেই রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে সার্চ কমিটি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনার নিয়োগ দেবেন। তবে অনুসন্ধান কমিটির নামের তালিকা থেকেই যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করতে হবে, এমন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।

নির্বাচন কমিশন গঠনের নির্দেশনা রয়েছে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে। সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ 

সংবিধানে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথাও উল্লেখ নেই। ফলে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ১০টি নাম প্রস্তাব করার চেষ্টা চললেও এগুলোর বাইরে নতুন নাম আসবে কি না এবং সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে কি না সেই জল্পনাকল্পনা চলছে রাজনৈতিক মহলে। 

নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটির মধ্য থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এ ছাড়া সার্চ কমিটির সুপারিশ করা ১০ জনের নামও তখন প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে এবার কমিটির পক্ষ থেকে তালিকা প্রকাশের বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়নি। আবার প্রকাশ না করার কথাও বলেনি।

সার্চ কমিটির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সুশীল সমাজের একটি অংশ বরাবরই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাবিত নাম জনসম্মুখে প্রকাশের দাবি জানিয়ে আসছে। একই দাবি এসেছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বরাবরই এর  বিরোধী। যদিও  প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কাছে প্রস্তাবিত নাম প্রকাশ করেছিল সার্চ কমিটি।    

সূত্র জানায়, প্রধান সাতটি বৈশিষ্ট্য সামনে রেখে সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- সত্তরোর্ধ্ব বয়স, বিতর্কিত, দলীয় সুবিধাভোগী, মামলার আসামি, নারী নির্যাতনে অভিযুক্ত, অসৎ ও অসদাচরণ। মঙ্গলবার এই নামগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকে সার্চ কমিটির সদস্যরা নিজস্ব সূত্রে সংশ্লিষ্টদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেন। এ ছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রত্যেকের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহের জন্য বলা হয়। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংশ্লিষ্টদের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে আসে। যাদের বয়স ষাটের আগে বা পরে রয়েছে বা কিছুদিন আগে অবসরে গিয়েছেন তাদের নাম সুপারিশের জন্য অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো মামলার আসামি নন, চাকরিজীবনে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি, কোনো অসততা ও অসদাচরণে অভিযুক্ত নন, নারী নির্যাতনের অভিযোগ নেই- এমন ব্যক্তিদের খোঁজা হচ্ছে। ছাত্রজীবনে দলীয় সম্পৃক্ততা ছিল, কিন্তু চাকরিজীবনে দলীয় বিবেচনায় সুবিধা নেননি তারা পছন্দের শীর্ষে আছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সার্চ কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, সৎ, দলনিরপেক্ষ, কর্মক্ষম- এককথায় ভালো মানুষ পাওয়া সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা এমন লোক খুঁজে পাননি। রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া নাম থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় স্থান পাওয়া দু-একজনের সঙ্গে কমিটির সদস্যরা ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করেছেন। কিন্তু শেষ বয়সে তাদের অনেকেই এই দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছেন না। এ ছাড়া সব দিক থেকেই যোগ্য কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ এবং অসুস্থ এ কারণেও নাম বাদ পড়ছে। এ অবস্থায় আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকে কমিটির সদস্যরা পছন্দের কিছু নাম দেবেন। এ জন্য আগেই তারা পছন্দের মানুষগুলোর জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছেন। এসব নাম আগামী বৈঠকে কমিটির বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করা হবে। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির কাছ থেকে পাওয়া ১০ জনের তালিকা থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। 

এদিকে কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিধি) আবদুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন, শুধু সংক্ষিপ্ত তালিকা নয়, প্রয়োজনে বাইরে থেকে নিয়ে হলেও ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। সে ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া নামের অধিকাংশই বাদ পড়ার আশঙ্কা আছে। চূড়ান্ত তালিকা তৈরির জন্য আগামীকাল সোমবার কমিটি চতুর্থ দফায় বৈঠকে বসবে।

এর আগে গত দুই দফায় ১৬ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে বসে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে তাদের পরামর্শ নেয় সার্চ কমিটি। 

১৬ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন- সাবেক বিচারপতি আবদুর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী ও এস এম এ ফায়েজ, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজুলল হক ও সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা, সাবেক সিইসি মোহাম্মদ আবু হেনা, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ।

সার্চ কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেয়া বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সঠিক পথেই আছে সার্চ কমিটি। সার্চ কমিটিও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

এদিকে সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত নাম প্রকাশ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ করা নামগুলো প্রকাশ করা হলে জনগণ আস্থা পাবে। সবাই দেখতে পাবে, কাদের নেয়া হলো। তাতে এই প্রক্রিয়া আরো বেশি স্বচ্ছ হবে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘স্বচ্ছতাই উত্তম পন্থা। শুধু ১০ জনের নাম নয়, সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ২০ জনের নামও প্রকাশ করা উচিত। এটা স্বচ্ছতার অংশ। আমি মনে করি, এটার মাধ্যমে আস্থার সংকট দূর হবে।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!