• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত জাতি


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭, ০১:৫৬ পিএম
ভাষা শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত জাতি

ঢাকা : রাত পোহালেই অমর একুশে, মহান শহীদ দিবস। একুশে মানে- অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, আমাদের জাতীয় জীবনের শোকাবহ ও গৌরবোজ্জ্বল দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের বেদনার কমলপদ্ম, চেতনার অগ্নিমশাল, পরাধীনতার শেকল ভাঙার প্রথম প্রতিবাদ। তবে একুশে ফেব্রুয়ারি এখন শুধুই বাঙালির নয়- বিশ্বের সব দেশের, সব মানুষের। অমর একুশে এখন বিশ্বের সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টার এক অনিঃশেষ অনুপ্রেরণার উৎস। 

১৯৯৯ সালে অমর একুশে পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি। সেই থেকে দিবসটি প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারও বিশ্বের দেশে দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের দেশে দেশে নতুন মর্যাদায় অভিষিক্ত হচ্ছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আফ্রিকার দেশ সিয়েরালিয়ন এরই মধ্যে বাংলাকে দিয়েছে অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা। বর্তমানে বিশ্বের ২৫ কোটিরও বেশি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। ফরাসি ভাষার চেয়েও বাংলা ভাষায় অনেক বেশি মানুষ কথা বলে। আবার লন্ডনে প্রচলিত ৩০৭টি ভাষার মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম  বাংলা।

বায়ান্নর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে আত্মদানকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত গোটা জাতি। একুশের প্রথম প্রহর আজ রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বেদিমূলে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর স্পিকার, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোরগ ব্রেন্ডেসহ কূটনৈতিক কোরের সদস্যবৃন্দ, বিরোধীদলীয় নেতা পুষ্পস্তবক অর্পণের পর শহীদ মিনার চত্বর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। এ সময় একে একে রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।  

একুশের শোক আর প্রাপ্তির গৌরবকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হচ্ছে শহীদ বেদি। সারা বছর অবহেলায় ও অযত্নে পড়ে থাকলেও এখন সাজানো হচ্ছে বর্ণিল সাজে। শহীদদের বুকের তাজা রক্তের প্রতিচ্ছবি হিসেবে রক্তিম লাল রঙে রাঙানো হচ্ছে শহীদ মিনারের পাদদেশ। শুধু শহীদ মিনার চত্বরই নয়,  আশপাশের এলাকায়ও আলপনা ও দেয়ালচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। 

অন্যদিকে সক্রিয় রয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এবার শহীদ মিনারকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। নিশ্চিত করা হচ্ছে চার স্তরের নিরাপত্তা। ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাতায়াতের পথনির্দেশিকা। 

দিনটি উপলক্ষে দেশের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, পুষ্পস্তবক অর্পণ, আজিমপুরে ভাষাশহীদদের কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা, একুশের কবিতা পাঠের আসর এবং ভাষাসৈনিকদের অংশগ্রহণে একুশের স্মৃতিচারণা।  দেশের প্রতিটি  জেলা ও উপজেলায় শহীদ মিনার ঘিরে একই কর্মসূচি পালিত হবে। 

মহান একুশে উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। এসব ক্রোড়পত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও কবিতায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে নতুন প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন করা হবে। রেডিও-টেলিভিশন ও বেসরকারি চ্যানেলগুলো শহীদ দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। অমর একুশে উপলক্ষে বাংলা একাডেমির বইমেলা চলছে। একুশের সংকলন প্রকাশ এ দিবসটির একটি উল্লেখযোগ্য দিক। সারা দেশেই সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এ সংকলন প্রকাশ করা হয়ে থাকে। 

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!