• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষা সৈনিকদের ইতিহাস জানে না নতুন প্রজন্ম


যশোর প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭, ০৬:৩৮ পিএম
ভাষা সৈনিকদের ইতিহাস জানে না নতুন প্রজন্ম

ভাষা সৈনিক আলমগীর সিদ্দিকী হল

যশোর: যশোরের ভাষা সৈনিকের দুই একজনের নামে স্মৃতি-স্মারক থাকলেও এদের বিষয়ে অন্ধকারে রয়েছে নতুন প্রজন্ম। আর যাদের নামে সামান্য স্মারকও নেই তাদের বিষয়ে জানেই না বেশিরভার মানুষ। অথচ যশোরে রয়েছে বাংলা ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস।

১৯৪৮ সালেই যশোরে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গড়ে উঠেছিল। এ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক হয়েছিলেন আলমগীর সিদ্দিকী ও রঞ্জিত মিত্র। যশোর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গনে আলমগীর সিদ্দিকীর নামে একটি হলের নামকরণ করা হলেও অপর যুগ্ম-আহ্বায়ক রঞ্জিত মিত্রের নাম এখন অনেকেই ভুলে গেছেন।

ব্রিটিশ শাসনামলে কোলকাতায় মাতৃভাষা বাংলাকে ব্যঙ্গ করায় যশোরের মাইকেল মধুসূদন কলেজের সাহসী কন্যা হামিদা বেগম প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। বর্তমানে তার নামে একটি কলেজে একটি ছাত্রী হল রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই এর ইতিহাসটি জানেন না।

ভাষা সৈনিক অধ্যাপিকা হামিদা রহমান হল

এমএম কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী পল্লী চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হামিদা রহমানের নামে একটি হল রয়েছে। কিন্তু তিনি ভাষা আন্দোলনে কতোটুকু অবদান রেখেছেন তা জানতাম না। পরে গত বছর এই ইতিহাস জানানোর জন্য ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জনতা পত্রিকার সম্পাদক আহসান উল্লাহ যশোর এম এম কলেজের অধ্যক্ষর হাতে হামিদা রহমানের লেখা 'জীবনস্মৃতি' গ্রন্থটি তুলে দেয়ার পর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ ছাপা হলে জানতে পেরেছি তিনি ভাষা সৈনিক ছিলেন। কিন্তু তার বিষদ বিবরণ জানি না।’

যশোরের আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক আফসার আহমদ সিদ্দিকী। তার নামে কারবালা এলাকার একটি সড়কের নাম রয়েছে। কিন্তু কে এই আফসার সিদ্দিকী এই সড়কে চলাচলকারীরা তা ভেবেই দেখেননি।

অপর ভাষা সৈনিক বেজপাড়ার আমির আহমদের নামে এলাকাবাসী দরবেশবাড়ির পাশ ঘেঁষে চলে যাওয়া রাস্তাটির নাম ‘ভাষা সৈনিক আমির আহমদ বাইলেন’ দিলেও পৌরসভা থেকে আজো ‘স্বীকৃতি’ মেলেনি।

এদিকে ভাষা সৈনিক শেখ আমানুল্লাহ’র নামে সাতক্ষীরা কলারোয়ার রয়েছে শেখ আমানুল্লাহ কলেজ। তবে তিনি ভাষা সৈনিক ছিলেন নতুন প্রজন্মের অনেকেই তা জানেন না। অপরদিকে সুধীর কুমার রায়, বিমল রায় চৌধুরীকে চিনলেও ভাষা সৈনিক হিসাবে তাদের পরিচিতি বা স্বীকৃতি মেলেনি আজও।

ভাষা সৈনিক মরহুম আমির আহমদ লেন

এছাড়া ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’র মনোনীত সদস্য দেবীপদ চট্টোপাধ্যায়, সৈয়দ আফজাল হোসেন, অশোক ঘোষ, সুনীল রায়, হায়বাতুল্লা জোয়ার্দ্দার, আবদুর রাকীব, আবদুল হক শুধু ইতিহাসের পাতায় রয়েছেন। তবে স্মৃতি জড়িয়ে থাকলেও ইতিহাসে বা কোন গবেষণায় লেখা হয়নি যশোর ইনস্টিটিউটের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলমের নাম। ভাষা সৈনিকদের দমনে হুলিয়া জারি হলে নিষিদ্ধ পল্লীর যে সব মেয়েরা পুলিশের কবল থেকে কৌশলে তাদেরকে রক্ষা করেছিলেন তাদের নামও নেই কোথাও।

ভাষার টানে প্রথম গর্জে ওঠা যশোরের ভাষা সৈনিকদের নিয়ে সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধকরণের দাবি জানিয়ে ভাষা সৈনিক পরিবারের সন্তান সাংবাদিক আবদুল কাদের বলেন, ‘যাদের প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা মাতৃভাষা পেয়েছি, তাদেরকে স্মরণ করা আমাদের কর্তব্য। এর ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।’

ভাষার দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন মিছিলে থাকা যশোর ইনস্টিটিউটের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলেন, ‘তখন আমার বয়স ১৭/১৮। যশোর এম এম কলেজে পড়ি। গুলজার খান নামে পাকিস্তানি একজন এসপি আন্দোলন থামাতে ভাষা সৈনিকদের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেন। সে সময়ে গা ঢাকা দিতে হয়। কিন্তু আন্দোলন শেষ করে দিতে পারেনি। আলমগীর সিদ্দিকী, আফসার আহমদ সিদ্দিকী, সুধীর কুমার, হামিদা রহমান প্রমুখ সক্রিয় ছিলেন এই আন্দোলনে।’ সে সময়ে এদেশে মিডিয়া এতো শক্তিশালী না থাকায় ইতিহাস সেভাবে উঠে না আসলেও এখন সে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

অন্যদিকে, দু’একটি হল-ভবন ও রাস্তায় ভাষা সৈনিকদেরকে স্মরণীয় করে না রেখে এই আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা উচিত বলে মনে করেন এই প্রজন্মের তরুণেরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!