• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভাস্কর্য অপসারণ: উত্তাল সুপ্রিম কোর্ট এলাকা


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৬, ২০১৭, ০৩:৪৭ এএম
ভাস্কর্য অপসারণ: উত্তাল সুপ্রিম কোর্ট এলাকা

ঢাকা: দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গন সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে কোর্ট, রমনা ও আশপাশ এলাকা। বিক্ষোভ মিছিল আর স্লোগানে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে পড়েছে। শত শত গণমাধ্যমকর্মীরাও ভিড় করেছে সেখানে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দিনগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে রমনা এলাকা স্লোগানমুখর হয়ে ওঠে। শত শত ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক কর্মীরা সেখানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখায়।   

বিক্ষোভকারীরা নানা স্লোগান দিতে থাকে। ‘ন্যায়বিচারের ভাস্কর্য অপসারণ করা যাবে না’, ‘রাজাকারের আস্তানা, ভেঙে ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘মৌলবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও জ্বালিয়ে দাও’, ‘বীর বাঙালির হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’ এসব স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।

রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা মিছিল বিক্ষোভে যোগ দেয়। এসময় উত্তেজনা বেড়ে যায়। তারা ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে।

এসময় সুপ্রিম কোর্টের সামনের সড়কের একপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সুপ্রিম কোর্টের ফটকে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে কিছু সময়ের জন্য ভাস্কর্য অপসারণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে সাড়ে ১২টার দিকে ভাস্কর্য সরানোর কাজ শুরু হলে সেখানে উপস্থিত হতে থাকে ছাত্র-জনতা। তবে এর আগে থেকেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকে অবস্থান নেয় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।

রাত পৌনে ১২টার দিকে প্রধান ফটক বন্ধ থাকা অবস্থায় ভেতরে সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে ন্যায়বিচারের প্রতীক গ্রিক ভাস্কর্য অপসারণের কাজ করতে দেখা যায়। ভাস্কর্যটির পাদদেশে কয়েকজন শ্রমিককে অবস্থান করতে দেখা যায়।

গণমাধ্যমে ভাস্কর্য সরানোর খবর প্রচার হয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে অনেকেই। ঘটনাস্থলে সে সময় অবস্থান করছিলেন ভাস্কর্যের নির্মাতা ভাস্কর মৃণাল হক।

এসময় সুপ্রিম কোর্টের বাইরে অবস্থান নেয় অর্ধশতাধিক ছাত্র-জনতা। তারা ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা ফটকের বাইরে মিছিলও করে। এসময় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে সতর্ক অবস্থায় থাকে দেখা যায়।

শ্রমিকরা ব্যস্ত

এদিকে, ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে শুক্রবার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে। বিক্ষোভকারী ছাত্রজনতা শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ করবে।  

উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশে কওমি মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এই ভাস্কর্য অপসারণে দাবি জানিয়ে আসছিল। সংগঠনটির আমির আহমদ শফি গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, গ্রিক দেবির মূর্তি স্থাপন করে বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যে আঘাত করা হয়েছে। তবে এমন বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

তবে গত ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে কওমী মাদরাসার ওলামাদের সঙ্গে বৈঠকে হেফাজতের আমির আহমদ শফির উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে অভিমত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

যুক্তি উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটি বিষয় এসেছে আমাদের হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমেসিসের এক মূর্তি লাগানো হয়েছে। সত্য কথা বলতে কি আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। কারণ গ্রিক থেমেসিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে। এটাতো আমাদের দেশে আসার কথা না। আর গ্রিকদের পোশাক ছিল এক রকম, সেখানে মূর্তি বানিয়ে তাকে আবার শাড়িও পরিয়ে দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে নান্দনিকতার পাশাপাশি পাশে ঈদগাহের অবস্থানকে যুক্তি দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!