• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
‘ভিশন’ এখন রাজনীতি

ভিশন-২০৩০ নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ২৬, ২০১৭, ১২:৩৩ পিএম
ভিশন-২০৩০ নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি

ঢাকা: রাজনীতির নতুন ইস্যু এখন দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক রূপকল্প। নেতারা এর নাম দিয়েছেন ‘ভিশন’। ইতোমধ্যে দেশের বড় দুই দলই নিজেদের রূপকল্প বা ভিশন প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে।

বিএনপি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক রূপকল্প-২০৩০ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। এর আগে দলটি ইশতেহার দিলেও এবারই প্রথমবারের মত দলটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক রূপকল্প নিয়ে জনগণের সামনে আসছে।

বিপরীত দিকে, রূপকল্প-২০২১ এর মত আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মত রূপকল্প-২০৪১ প্রণয়নের কাজও শুরু করছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বড় দুই দলের রাজনৈতিক রূপকল্প ইস্যুটিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন। তারা বলছেন, রাজনৈতিক রূপকল্প মানে দেশের উন্নয়নে রাজনৈতিক দলের দৃষ্টিভঙ্গি। এ রূপকল্প জনগনের সামনে উপস্থাপন করলে জানা যাবে কোন দল কোন ইস্যুগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে উন্নয়নের জন্য। তবে উপস্থাপনের পর ক্ষমতায় গিয়ে তা বাস্তবায়ন করলেই হবে রূপকল্পের সার্থকতা।

দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ভিশন বা রূপকল্প-২০৩০ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রূপকল্প প্রণয়ন করছে। তবে ‘ভিশন-২০৩০’-এর পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা উপস্থাপনের আগেই জনমত গঠনে তৃণমূলে যাচ্ছে বিএনপি। দলীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরে নেতাকর্মীদের মাধ্যমে জনগণের কাছে রূপকল্প-২০৩০ এর খসড়া বিষয়াদি উপস্থাপন করা হবে। পরবর্তিতে যাচাই-বাছাই শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ব্যাখ্যাসহ এ রূপরেখা তুলে ধরবেন।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, আমরা সাংঠনিক সফরে যাচ্ছি। দল পুনর্গঠনসহ সাংগঠনিকভাবে দলকে সুসংহত করাই লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’ এর পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা ঘোষণা করবেন। তার আলোকেই কথা বলব। আমরা দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এ বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। বিএনপির এই উপদেষ্টা বলেন, জনমত যাচাই বাছাই শেষ আমাদের নেত্রী পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবেন।

গত বছর ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ কাউন্সিলে ‘ভিশন ২০৩০’ নামের একটি কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছিলেন, এর আলোকেই আগামীতে বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি হবে। সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা হবে।

খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আবার সরকার গঠনের সুযোগ পেলে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে এবং দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ করা হবে। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বিএনপি নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার প্রতিষ্ঠা করবে। আর এ জন্য নতুন এক সামাজিক সমঝোতা বা চুক্তিতে উপনীত হতে উদ্যোগ নেয়া হবে।

ওই সময় খালেদা জিয়া আরও বলেন, আমরা সংকট নিরসন করে দেশ-জাতিকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করছি। দেশের অগ্রসর চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী, পরিকল্পনাবিদ, গবেষক এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় কর্মরত শীর্ষস্থানীয় ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে।

খালেদা জিয়া বলেন, সকলের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে সমৃদ্ধ দেশ ও আলোকিত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে বিএনপি ইতোমধ্যেই ‘ভিশন-২০৩০’ শিরোনামে একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেছে। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই অচিরেই ‘ভিশন-২০৩০’ চূড়ান্ত করা হবে। তবে বিগত এক বছরেও ‘ভিশন ২০৩০’ এর পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তুলে ধরতে পারেনি বিএনপি।

সূত্রমতে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এরইমধ্যে তৃণমুলকে সংগঠিত করার জন্য মাঠে মেনেছে বিএনপি। সেই লক্ষ্যে দলের ৫১টি টিম সারাদেশের বিভিন্ন জেলা সফরে যাচ্ছেন। আগামী ৭ মে পযর্ন্ত এ সফর অব্যাহত থাকবে। এরপর ১৫ এপ্রিল থেকে বাই-রোটেশন আবার জেলা সফরে যাবেন বিএনপি নেতারা।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, আমাদের জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী দলের সাংগঠনিক পুনর্গঠনের জন্য ৫১টি দল গঠন করা হয়েছে। এ সব দল সারাদেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা সফর করবে। নেতৃত্বে থাকবেন বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ আমাদের দলের স্থানীয় পর্যায়ের সব নেতাকর্মীর সঙ্গে মিলিত হবেন আনুষ্ঠানিকভাবে ও অনানুষ্ঠানিকভাবে। তারা দেশের চলমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।

রাজনৈতিক দলের রূপকল্প প্রণয়ন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই চর্চাটি রাজনীতি ও উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক। আগে সরকারে ক্ষমতার মেয়াদ পর্যন্ত অর্থাৎ পাঁচ বছরে রাজনৈতিক দলগুলো কে কী করবে তা উপস্থাপন করতো। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কোনো ভিশন ছিল না। তাই দেশের প্রধান দুই বড় দল যখন দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক রূপকল্প নিয়ে কাজ করছে, তখন অবশ্যই এটি রাজনীতির জন্য, জনগণের জন্য ইতিবাচক। তিনি বলেন, রূপকল্প প্রণয়ন করলেই হবে না। রূপকল্পের বাস্তবায়নও করতে হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!