• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভুবন মাঝি’ নিয়ে আমার কোনো প্রত্যাশাই ছিলোনা: ফাখরুল


মিতুল আহমেদ মার্চ ৩০, ২০১৭, ০৭:৫৭ পিএম
‘ভুবন মাঝি’ নিয়ে আমার কোনো প্রত্যাশাই ছিলোনা: ফাখরুল

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কে বর্তমান সময়ের সঙ্গে শৈল্পিকভাবে গেথে বানানো একটি পূর্ণাঙ্গ ও সফল সিনেমা ‘ভুবন মাঝি’। যে স্বপ্ন, মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে উনিশশো একাত্তুরে এই দেশটিকে স্বাধীন করেছিল বাংলার বীর যুবারা, সেই দেশটিই যখন ছোট ছোট রাজনৈতিক ভুলের ফেরে ক্রমশ অন্ধকারে পতিত হয়, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির আস্ফালনে পরিণত হয় সে সমস্ত সাহসি ইঙ্গিতও দেয় দু হাজার সতেরো সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘ভুবন মাঝি’। সাম্প্রতিক সময়ে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এই এই দুর্দান্ত সিনেমাটির নির্মাতা ফাখরুল আরেফিন খান। যার সিনেমাটি দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় চলতি মার্চের ৩ তারিখে। প্রেক্ষাগৃহে দেখানো ছাড়াও নিজেই সিনেমাটি ফেরি করে ফিরছেন বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের অডিটোরিয়ামে। যার কাছে সিনেমার সফলতার চেয়ে দায়িত্ববোধটাই প্রধান, সেই মানুষটির সঙ্গে তার ‘ভুবন মাঝি’ নিয়ে কথা বলেছেন মিতুল আহমেদ...             

‘ভুবন মাঝি’ কেমন আছে? সিনেমাটা কি এখন বিভাগীয় শহরগুলোতে ঘুরে ঘুরে দেখানোর পরিকল্পনা করছেন?
আমি ভালো আছি। হ্যাঁ। সিলেট, চট্টগ্রাম আমরা ‘ভুবন মাঝি’র শো করেছি। কালকে যশোর যাবো। পরশু সেখানে থেকে শো। জেলাস্কুল অডিটোরিয়ামে দেখানো হবে ছবিটি।

সব বিভাগীয় শহরগুলোতে তাহলে যাচ্ছে ‘ভুবন মাঝি’?
আশা করছি পর্যাক্রমে অবশ্যই যাবে। 

যে স্বপ্ন নিয়ে ‘ভুবনমাঝি’ নির্মাণ করলেন, সিনেমা মুক্তির পর সেই ভেবে রাখা স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতা কতোটুকু মিলাতে পারলেন?
ফলের আশায় আমি কিছু করতে রাজি নই। ‘ভুবন মাঝি’র ক্ষেত্রেও তাই। আমি কোনো স্বপ্ন দেখি নাই। সুতরাং মুক্তির পর ছবিটি থেকে কিছু প্রাপ্তির অপ্রাপ্তির সঙ্গে মিলানোর কোনো কারণ নেই। একেবারে ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ থেকে সিনেমাটি বানিয়েছি। আমার কাজ নির্মাণ করা। তারপরও প্রচুর তরুণ তরুণীরা ছবিটি দেখেছে। সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছে, এটুকুই আনন্দের। আসলে ‘ভুবন মাঝি’ নিয়ে আমার কোনো প্রত্যাশা ছিলনা। কর্ম করে ফল পাওয়ার আশা আমি করি না। ফলের আশায় স্বপ্ন দেখি নাই।  

বাংলাদেশে কোনো সিনেমায় সংগীতায়োজনের দায়িত্বতো বোধয় আপনিই প্রথম সদ্য প্রয়াত কালিকাপ্রসাদকে দিয়েছিলেন?
হ্যাঁ। আমার ছবির মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে কালিকা ভাইয়ের সংগীতায়োজন প্রথম এবং শেষ।  

কি ভেবে ‘ভুবন মাঝি’তে সংগীতায়োজনে কালিকাপ্রসাদকে নিয়ে এলেন? কেনোই বা তাকে এই ছবির সংগীতায়োজনে ঠিক মানুষ মনে হলো?
আমার ভাবনায় ছিল, যে বাংলাদেশের ফোক ও ইউরোপীয় ফোক ফিউশনটা ভালো বুঝবে এমন লোককে আমার সিনেমার সংগীতের দায়িত্বটা দিবো। মানে কন্টেম্পরারি একজন ভালো মিউজিশিয়ান প্রয়োজন ছিল আমার। আর তখনই কালিকা ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন হাসান আরিফ ভাই। এরপর গত দুই বছর থেকে কালিকা ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয়। এই সিনেমা নিয়ে, সংগীত নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে তার সাথে। শেষ পর্যন্ত তিনিই ‘ভুবন মাঝি’র সংগীতায়োজন ও ব্যাকগ্রাউন্ডস্কোরের দায়িত্ব নেন।  

‘ভুবন মাঝি’তে তিনটা ঘটনা সমান্তরালে দেখালেন। অনেকেই ‘ভুবন মাঝি’র গল্প বলার ধরনটার সাথে রিলেট করতে পারেনি। ভিজ্যুয়াল গল্পে এই ভাঙচুর কেন করলেন? 
এটাতো সিনেমার একটা ফর্ম। একটা ল্যাঙ্গুয়েজ। আপনি সাধু, চলতি, প্রমিত ভাষার যেকোনো কোনো একটায় যেমন কথা বলতে পারার অধিকার রাখেন। তেমনি সিনেমা বানাতে গিয়ে আমি একটা ফর্ম বেছে নিয়েছি। হুমায়ুন আহমেদ যেভাবে গল্প বলেন, হুমায়ুন আজাদ সেভাবে বলেন না। একেকজন একেকভাবে বলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা একটাই গল্পই বলেন। গল্প বলার ধরনটা হয়তো ভিন্ন।    

তাছাড়া সিনেমায় এভাবে গল্প বলা ইউরোপিয় একটা ফর্ম। আশির দশকে এটা চলে বিশ্বব্যাপী, যদিও নব্বইয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। হিন্দি সিনেমাতেও এই ফর্মটা ছিল এক সময়। ক’দিন আগেতো কলকাতার ‘চতুষ্কোন’ সিনেমাতেও এই ফর্মটা ব্যবহার হলো। আমাদের অনেক দর্শক হয়তো এই ফর্মটার সাথে ইউজ টু নয়। তাহলে রিলেট করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।  

সন্দেহ নাই যে, পরমব্রত অসাধারণ অভিনেতা। কিন্তু অনেকে মনে করেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি মাজনুন মিজান, কিংবা সিনেমায় একেবারে ছোট্ট চরিত্রে একটা ছেলে বোমা মারতে গিয়ে পাকিদের হাতে যে নিহত হলো, তার অভিনয়ের কাছে দুর্বল মনে হয়েছে। এটা কি মুক্তিযুদ্ধকে পরমব্রত সরাসরি অউন না করার জন্য? নাকি পরম সফলভাবেই উতরে যেতে পেরেছেন? আমরা বলার জন্যই শুধু এরকম নিন্দা করছি? 
প্রশ্নটা কি, মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় কেনো নেয়া হলো পরমকে? যারা এসব প্রশ্ন করেন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন যে, একাত্তুরে ভারতীয় মিত্রবাহিনীরাও যে প্রাণ দিলো, এককোটি স্মরণার্থীর জায়গা দিলো, আশ্রয় দিলো, খাওয়ালো এইগুলা ভুলে গেলে হবে? 

পরমকে কেনো ‘ভুবন মাঝি’তে নেয়া হলো, এমন প্রশ্ন কি আপনাকে সরাসরি কেউ করেছে, জানতে চেয়েছে কেনো ভারতীয় পরমকে মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় নিলেন?
এমন প্রশ্নতো প্রথম না আমার জন্য। খুবই অরুচিকর প্রশ্ন! আমার মতামত, যারা অতি ভারত বিদ্বেষী মনোভাবে দেখিয়ে এমন প্রশ্ন করেন, জানতে ইচ্ছে হয় মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান কি? তাদের পরিবারের অবদান কি?   

মুক্তিযুদ্ধের সময়টা আমি বুঝি। কারণ আমার পরিবার ক্ষতাক্ত হয়েছে। নিষ্পেষণ সহ্য করেছে পাকিস্তানিদের, এবং এদেশিয় দোসরদের দ্বারা। যারা এসব প্রশ্ন করেন তাদের অবদান কি? আমার দুই চাচা ইন্ডিয়া থেকে ট্রেনিং নিয়েছে। এসব ভুলে গেলে হবে?   

‘ভুবন মাঝি’তে পরমের অভিনয় সম্পর্কে যদি বলি, মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে সে অসাধারণ অভিনয় করেছে। বাংলাদেশের অনেকের চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা নহির চরিত্রটি পরম ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে।     

নিন্দুকেরা বলেন যে, আপনার সিনেমাটা যতোটা না সিনেমা তারচেয়ে বেশি ডকুফিকশন? এই অভিযোগ কি স্বীকার করবেন?  
অবশ্যই না, কেনো এগুলো স্বীকার করবো? যারা এমন কথা বলে তারা আগে, বিশ্ব সিনেমা সম্পর্কে খোঁজ খবর জানুক। বিশ্ব সিনেমা দেখুক। কতো বিখ্যাত মানুষ, বিখ্যাত ইভেন্টস নিয়ে সিনেমা তৈরি হয়েছে যেগুলোতে রিয়েল ফুটেজ ব্যবহার হয়েছে। 

বিশ্ব সিনেমা না দেখে দেখে এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, ভালো সিনেমা বানালে তা দুর্নাম করবেই। এরজন্য অবশ্য দর্শকদেরও দোষ দেই না। কারণ ভালো সিনেমাতো দেখানোর জন্য তৈরি হচ্ছে না আমাদের এখানে। বলেনতো, এই বছরে যে ষোলটা সিনেমা বের হলো, তার কতোগুলো দেখে আপনি ভালো বলতে পেরেছেন?  

আমি আসলে ‘রীনাব্রাউন’ আর ‘ভুবন মাঝি’ ছাড়া এই বছরের আর কোনো সিনেমা দেখি নাই....
এই দেখেন! আপনি একজন রুচিশীল দর্শক হয়েও ষোলটা সিনেমার মধ্যে দেখেছেন মাত্র দুটো। সিনেমা হলেই যান না। এর দায় কার! ভালো সিনেমা তৈরি করা লাগবেতো। তা না হলে দর্শক কেনো সিনেমা দেখতে যাবে? আর আমরা সেই চেষ্টাটাই করেছি।   

‘ভুবন মাঝি’ মুক্তির পর প্রচুর দর্শক নিশ্চয় ছবিটির প্রশংসা করেছেন। কিন্তু এমন কারো কাছ থেকে তুমুল প্রশংসা কি পেয়েছেন, যাতে আপনার মনে হয়েছে আপনি নির্মাণে সফল?  
আমি প্রশংসা দিয়ে কি করবো। কেউ যদি আমার তুমুল প্রশংসা করে আমার কিছু যায় আসে না। আবার সিনেমা দেখে প্রচুর সমালোচনা করলেও আমার কিছু  না।  

‘ভুবনমাঝি’ রিলিজের পর এমনটা কি কখনো মনে হয়েছে যে, সিনেমাটা এখন বানালে আরো ভালো করতে পারতেন? 
আমার মধ্যে এসব নাই। যা বানাইছি ফাইন। এরচেয়ে ভালো আমি বানাতে পারতাম না। তাছাড়া ভালোর শেষ বলে কিছু নাই। ভালোর লিমিট নাই। সৌন্দর্যের শেষ বলে কিছু নাই। আপনার সময়টাকে বেছে নিতে হবে। এখন বানালে কেমন হবে, আরো কয়েক বছর আগে বানালে কেমন হতো এইসব বাস্তবতা মেনেই সিনেমাটা বানিয়েছি। ধরেন এই যে, এখন বাহুবলী দেখছে প্রচুর মানুষ। এটা কি আরো দশ বছর আগে বানালে এমন আগ্রহ থাকতো মানুষের? 

তা বটে। প্রতিনিয়তইতো আপগ্রেডেশান হচ্ছে...
হ্যাঁ। সেটাই।       

নতুন সিনেমা কবে শুরু করছে ‘ভুবনমাঝি’ নির্মাতা?
গল্প ঠিক করছি। খুব শিগগির সবকিছু গুছিয়ে কাজে নেমে পড়বো। 

মানে সামনের সিনেমা কোনো গল্প উপন্যাসের অ্যাডাপটেশান?
হ্যাঁ। তাই। একটা গল্প ইতিমধ্যে আমরা ঠিক করে ফেলেছি।     

কার গল্প এটা কি বলা যাবে এই মুহূর্তে?
(হাসি...) না। এখন বলছি না। সব ঠিক হলে জানাবো।   

ভালো থাকবেন...
আপনিও ভালো থাকবেন। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!