• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া উকিল ধরতে অভিযানে নামছে সুপ্রিমকোর্ট বার


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৬, ০৮:৩০ পিএম
ভুয়া উকিল ধরতে অভিযানে নামছে সুপ্রিমকোর্ট বার

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও পরিচয় নিশ্চিতে ভুয়া উকিল ধরতে অভিযানে নেমেছে সুপ্রিম কোর্ট বার। এরই অংশ হিসেবে উকিল সহকারীদের আইডি কার্ড জমা নিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি। ইতোমধ্যে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন ভুয়া উকিল সহকারীকে শনাক্ত করেছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি। শনাক্ত হওয়া ভুয়া সহকারীদেরকে চিহ্নিত করে নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের ছবি।

তাদের আইডিকার্ড ফেরত নিতে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে নোটিশ আকারে পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট বার। ইতোমধ্যে পত্র তৈরি করে সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছাতে সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে তাদের হাতে পৌঁছানো হবে এ চিঠি।

আইনজীবী সমিতির অফিস মারফত জানা গেছে, ১৪ জন ভুয়া আইনজীবী সহকারীকে নাম ধরে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার পেছনে শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট জালিয়াতি পাওয়া গেছে। এরা শিক্ষাজীবনের আসল সার্টিফিকেট নয়, জাল সার্টিফিকেট দিয়ে তারা তাদের আইনজীবীদের সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গত বছরের শুরু থেকে সুপ্রিমকোর্ট বারের পক্ষ থেকে ভূঁয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হলে একে একে ধরা পড়েন আইনজীবী ও তাদের সহকারীরা। প্রথমে একজন/দুইজন ভূঁয়া আইনজীবীকে চিহ্নিত করা হয়। এ সব ভুয়া আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা করা তাদেরকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়। এরপরই অভিযান চালিয়ে শনাক্ত করা হয় ভুয়া উকিল সহকারীদের, এদের আইডি কার্ড এখন দাপ্তরিকভাবে জমা দিতে নোটিশ দেয়া হচ্ছে।

উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এবং টাউট, বাটপার ও দালাল এড়াতে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এবং কোর্ট কর্তৃপক্ষ শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে তারা আদালত ও বার অ্যাসোসিয়েশেন ভবনের বিভিন্ন জায়গায় নোটিশ ঝুলিয়েও দিয়েছেন। সুপ্রিমকোর্ট বারের পক্ষে নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

সুপ্রিমকোর্ট বার তাদের নোটিশে লেখা হয়েছে, আইনজীবী সহকারীরা তাদের নির্ধারিত পোশাক, আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করবে। যদি এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কেউ যদি আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উচ্চ আদালত কর্তৃপক্ষ তাদের নোটিশে লিখেছেন, সুপ্রিমকোর্ট এলাকায় কোনো আইনজীবী সহকারী তাদের নির্ধারিত পোশাক, আইডি কার্ড ব্যতীত আদালত অঙ্গনে প্রবেশ করতে পারবে না। যদি কেউ এ নিয়ম লঙ্ঘন করে ভেতরে প্রবেশ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উক্ত নোটিশের কপি সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, কোর্ট অফিসার, কোর্ট কিপার, সুপারিনটেডেন্টসহ সংশ্লিষ্ট শাখায়ও পাঠানো হয়েছে।

এর আগে সুপ্রিমকোর্টের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা চেয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে একটি আবেদনও করা হয়েছিল বিভিন্ন দপ্তরে। সে আবেদনের কপি অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার, ঢাকা মহানগর পুলিশ ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর পাঠানো হয়েছিল। সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এই আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের সঙ্গে যারা জুনিয়র হিসেবে কাজ করবেন  তাদের বার কর্তৃক ইস্যুকৃত ব্যাজ ও পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। পরিচয়পত্র ব্যতীত কোনো জুনিয়র আইনজীবী এবং লাইসেন্সবিহীন কোনো ক্লার্ক যেন আদালত অঙ্গনে প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এ বাপারে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট বারের সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে আমরা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আদালত প্রাঙ্গণে অনেক বিচারপ্রার্থীর কাছ থেকে ভুয়া ক্লার্ক সেজে, আইনজীবী সেজে, মামলা গ্রহণ করছে। এতে করে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমি সুপ্রিমকোর্ট বারের সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই উচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ভুয়া ক্লার্ক ও ভুয়া আইনজীবীদের এখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। ইতোমধ্যে একজন ভুয়া আইনজীবী ও ১৪ জন উকিলসহকারীকে আদালত প্রাঙ্গণে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।’ এ পদক্ষেপে আদালতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিচার প্রার্থীদের হয়রানি বন্ধে অনেক উপকারে আসবে জানান এই আইনজীবী নেতা।

সরেজমিনে জানা যায়, অনেক টাউট, বাটপার, দালাল, ভুয়া আইনজীবী সেজে, ভুয়া ক্লার্ক সেজে মামলা পরিচালনা করে কোটিপতি হয়েছেন। তারা বাগিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। রাজধানীতে করেছেন বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়িসহ অনেক সম্পদ।

অথচ তাদের কারোই আইনজীবী সহকারী বা আইনজীবী সনদ নেই। এই ভুয়া আইনজীবী ও ভুয়া ক্লার্করা বিভিন্ন জাতীয় উৎসব ও ঈদকে সামনে রেখে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে জামিন করিয়ে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিচারপ্রার্থী ও আদালত অঙ্গনের মানুষেরা।

জানতে চাইলে আইনজীবী সহকারী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. নুর মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে আইনজীবী সহকারীদের আইডি কার্ড নেয়ার জন্য সুপ্রিমকোর্ট বার তাগিদ দিচ্ছে। আমরাও এ নিয়মের প্রতি সম্মান জানিয়ে একমত পোষণ করেছি। ক্লার্ক পরিচয় দিয়ে বাহির থেকে বিভিন্ন লোক আদালতের ভিতরে এসে কাজ করছে। তারা ক্লার্ক পরিচয় দিয়ে বড় বড় মামলার তদবির করছে। হাতিয়ে নিচ্চে কোটি কোটি টাকা। তাদের জন্য প্রকৃত আইনজীবী সহকারীদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। এজন্য এ নিয়ম করা হয়েছে।’

নুর মিয়া বলেন, ‘অনেকেই বাইরে থেকে এসে আদালতের আদেশের কপি ও সার্টিফাইড কপি নকল করে বিচারপ্রার্থী ও আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এজন্য সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন তাদের চিহ্নিত করতে পরিচয়পত্র দিচ্ছে।

 বিষয়টি মাথায় রেখে ইতোমধ্যে সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশন ও আদালত কর্তৃপক্ষ ভুয়া ক্লার্ক ও ভুয়া আইনজীবী তাড়াতে এবং আদালতের ভাবমূর্তি রক্ষাতে নোটিশ দেয়ায় আইডি কার্ড ও পরিচয় পত্র পেতে বারের কার্যালয়ে ভিড় করছেন আইডি কার্ডহীন অনেক আইনজীবী সহকারী।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্ট বারের সুপারিনটেনন্টে যারা ইতোমধ্যে ভুয়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে তাদের আইডিকার্ড আমরা জমা নিতে নোটিশ প্রদানের পাশাপাশি অন্য সকল পদক্ষেপ নিতেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, বিগত দিনে এ ব্যাপারে কোনো নোটিশ না দেয়ার কারণে অনেকেই আইডি ছাড়াই এখানে কাজ করে গেছেন। এখন আর সেই সুযোগ নেই।’

তিনি আরো বলেন, স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও ভুয়াদের পরিহার করতে  ইতোমধ্যে ইন্টারভিউ নিয়ে কতজনকে আইডি কার্ড প্রদান করা হয়েছে। পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য দরখাস্তকারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা সমমান পাসের সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, তিনি যে অ্যাডভোকেটের সহকারী বা ক্লার্ক হিসেবে কাজ করতে চান তার সনদ, সুপারিশ লাগবে।’

একজন উকিল কতজন সহকারীর পক্ষে সনদ ও সুপারিশ দিতে পারবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একজন উকিল দুজনের সুপারিশ করতে পারবেন।’ সুপ্রিমকোর্টে এ পর্যন্ত দেড় হাজার ক্লার্ককে আইডি কার্ড প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিমেশ চন্দ্র দাশ। এরমধ্যে ১২০০ সহকারী নিয়মিতভাবে কাজ করেন এখানে, বাকিরা কেউ অ্যাডভোকেট বা অন্য পেশায় চলে গেছেন।

এ যাবৎ কোনো ভুয়া আইনজীবী সহকারী গ্রেপ্তার বা অ্যারেস্ট করতে পেরেছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেককেই সতর্ক করে দিচ্ছি, কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করিনি। তবে এবারের নোটিশের পর কেউ আইডি কার্ড ছাড়া কোর্ট অঙ্গনে যদি প্রবেশ করে তবে তাকে ধরে পুলিশে হাতে সোপর্দ করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!