• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ


এম সুজন আকন ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৭, ০৯:০০ পিএম
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের শাস্তি হওয়া উচিৎ

মানুষের যত অনুভূতি আছে তার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ভালোবাসা। আর এ পৃথিবীতে সবচেয়ে তীব্র ভালোবাসা হতে পারে মাতৃভূমির প্রতি টান। যারা কখনো মাতৃভূমির জন্যে ভালোবাসা অনুভব করেনি তাদের মতো দুর্ভাগা আর কেউ নেই। আমরা সৌভাগ্যবান যে, মাতৃভূমির জন্যে জীবন উৎসর্গ করার রয়েছে আমাদের এক গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস।

আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ হচ্ছে গভীর আত্মত্যাগ, অবিশ্বাস্য সাহস ও বীরত্বের ইতিহাস। যা জাতি হিসেবে আমাদের বিশাল এক অর্জন, গর্ব। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সেই অপরিসীম আত্মত্যাগ, বীরত্ব আর অর্জনের ইতিহাস জেনে দেশের জন্য অনুভব করে গভীর ভালোবাসা আর মমতা।

আমার জন্ম হয়েছে একাত্তরের অনেক পরে। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা বা যুদ্ধটা দেখার সুযোগই হয়নি। তবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেয়া অনেক যোদ্ধার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে আমার। সেসব দিনের মর্মান্তিক আর ভয়াবহ স্মৃতিচারণ করার সময় তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি হতবাক হয়ে গেছি। কত নির্মমতা যে ঘটেছে সেই যুদ্ধে। তাদের কথা শুনে বুঝতে পেরেছি, শুধু দেশকে ভালোবেসে কত ত্যাগ শিকার যে তারা করেছে।

এসব মহান মুক্তিযোদ্ধাকে যখনই জিজ্ঞেস করতে চেয়েছি, দেশ আপনাদের কী দিয়েছে? তখনই তারা ক্ষিপ্ত হযে উঠেছেন। বলেছেন, ‘যাকে ভালোবেসে ত্যাগ শিকার করেছি, তার কাছ থেকে কি-ই বা নেয়ার আছে। যা করেছি তা ভালোবেসেই করেছি, তার কাছ থেকে নেয়ার জন্য নয়’।

দেশমাতৃকার জন্য যুদ্ধ করা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের এসব কথা একেবারে ভেতরের। দেশের জন্য মায়া-মমতার একান্ত টান থেকেই আসে। কিন্তু বর্তমানে দেশে কী ঘটছে? আবিষ্কার হচ্ছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। যাতে লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে আসে।

বিভিন্ন সময় গণনায় উঠে আসা দুই লাখ ৩০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে কারা ভুয়া তা খুঁজে বের করা আর বাদপড়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন অন্তর্ভুক্তির জন্য সারাদেশে কমিটি করে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর পরেই নতুন তালিকায় নাম তোলা নিয়ে শুরু হয় টানা হেঁচড়া। আশ্চর্যের বিষয়, নতুন আবেদন জমা পড়ে প্রায় দেড় লাখ।

মূলত, রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা, সংরক্ষিত চাকরির কোটাসহ আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ নিতেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ভুয়া ব্যক্তিরা ঢুকে পড়েছেন নানা ফাঁক-ফোকরে। যারা এতোদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তাদের ছেলেমেয়েও হয়তো মুক্তিযোদ্ধা কোটায় এতদিন চাকরিসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। হয়তো তাদের কারণে অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত হয়ে থাকতে পারেন।

আমি মনে করি মুক্তিযোদ্ধা সেজে যারা এতোদিন সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ তাদের এই অসৎ উদ্দেশ্যের কারণেই নিশ্চিতভাবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবার বঞ্চিত হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাকে বঞ্চিত করা কিংবা দেশের বিরুদ্ধে কাজ করা একই কথা। দেশের জন্য যারা এতোবড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের যারা বঞ্চিত করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যাচাই বাছাই কমিটির সামনে হাজির করলেই বোঝা যাচ্ছে কে আসল আর কে ভুয়া। যারা মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নিয়ে এতদিন সরকারের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন, যাছাই বাছাইয়ের ইন্টারভিউতে তারা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেন না। যেসব অস্ত্র তারা ব্যবহার করেছেন সেসব অস্ত্রের নাম এবং যন্ত্রপাতির কথাও বলতে পারছেন না অনেকে। ইন্টারভিউতে যে ধরনের প্রশ্ন করা হচ্ছে যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তারাই দিতে পারছেন নিশ্চিত উত্তর।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অনেক স্থানে নতুন তালিকাতেও আবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ঢুকছে। টাকার বিনিময়ে তারা এই অপকর্ম করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সারাদেশেই কমিটি নিয়ে তাই নানা কথা ঘুরছে। বিভিন্ন এলাকায় সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, সমাবেশ ও পাল্টা সমাবেশের ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রস্তুত করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে থেকে কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। সম্প্রতি প্রথম শ্রেণির একটি অনলাইন নিউজপোর্টালে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আবেদনকারীদের ফরম যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে এবং তাদের সঙ্গে কথা বলে অনুমান করা গেছে আবেদনকারীদের অনেকেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নন। আবার যারা এতদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, ভাতা নিচ্ছেন, ছেলেমেয়েদের জন্য সুবিধা নিচ্ছেন, তারাও অনেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন।

একটু সুবিধার জন্য এ কেমন নির্লজ্জতা, রাজাকারদের মতো দেশের সঙ্গে এ কেমন বিশ্বাস ঘাতকতা। ক্ষুদ্র এক নাগরিক হিসেবে আমার দাবি অন্যায়ভাবে আমার দেশের অর্থ লোভীদের (ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা) শাস্তির আওতায় আনা হোক।

লেখক: সাংবাদিক
ইমেইল: [email protected]

সোনালীনিউজডটকম

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!