• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জেলা পরিষদ নির্বাচন

ভোটার দলীয়, প্রার্থী নির্দলীয়


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ৯, ২০১৬, ০৭:৪৫ পিএম
ভোটার দলীয়, প্রার্থী নির্দলীয়

ঢাকা: আগামী সপ্তাহে জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে যাচ্ছে। ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আইন অনুযায়ী এ নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটার হতে পারছেন না। প্রার্থীরা নির্দলীয় হলেও ভোটারদের বেশিরভাগই হচ্ছেন দলীয়। তারা রাজনৈতিক দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের অন্যান্য পরিষদে বিজয়ী হয়ে জেলা পরিষদের ভোটার হচ্ছেন। পাশাপাশি নির্দলীয়ভাবে নির্বাচিত সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদের সব প্রতিনিধি এবং অন্যান্য পরিষদের সদস্যরা এ নির্বাচনের ভোটার থাকছেন। অবশ্য একই নির্বাচনে দুই ধরনের ব্যবস্থায় আইনগতভাবে কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করছেন না নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা এই পদ্ধতিকে ‘জগাখিচুড়ি’ বলে আখ্যায়িত করছেন।

জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার পরিষদ দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার গেল বছর আইন সংশোধন করে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে স্থানীয় সরকারের সব স্তরের সব পদ দলীয় মনোনয়নে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরে কেবল পরিষদের শীর্ষ পদটিতে দলীয় মনোনয়নের বিধান রেখে অন্যান্য পদ আগের মতো নির্দলীয়ই রাখা হয়। অবশ্য উপজেলা জেলা পরিষদের শীর্ষ পদ চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিধান করা হয়েছে। এদিকে সব স্তরে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ হলেও জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে সরকার অবস্থান পরিবর্তন করে। জেলা পরিষদের সব পদে নির্দলীয় প্রার্থিতার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

জেলা পরিষদ আইন অনুযায়ী, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে (ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে) অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রতিনিধিরা ভোটার হবেন। তাদের ভোটে একজন চেয়ারম্যান, ১৫ জন সদস্য ও সংরক্ষিত পাঁচজন নারী সদস্য নির্বাচিত হবেন। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র, চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্যরাই ভোটার হবেন জেলা পরিষদে। এসব পরিষদের মধ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভায় এখন দলীয় ও নির্দলীয় দুই ধরনের নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়ররা রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে এবং দলের প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচিত হয়েছেন। আর এ দুই পরিষদের সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশনের আইন সংশোধন করে দলীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা হলেও মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়ায় এখন পর্যন্ত এ পরিষদে দলীয় ভিত্তিতে ভোট হয়নি। ফলে এ দুই পরিষদের সব প্রতিনিধিই হচ্ছেন নির্দলীয়। এই দলীয় ও নির্দলীয় উভয় প্রতিনিধিই নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠেয় জেলা পরিষদের ভোটার হবেন।

কমিশন সচিবালয়ের হিসাব অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলা বাদে সারাদেশের ৬১ জেলার চারটি পরিষদে প্রায় ৬৫ হাজার জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদে। প্রতিটি ইউপিতে জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ ভোটার ১৩ জন। এর মধ্যে একজন চেয়ারম্যান এবং সাধারণ আসনের নয়জন ও সংরক্ষিত নারী আসনের তিনজন সদস্য রয়েছেন। এ হিসাবে সাড়ে চার হাজার ইউপির ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৮ হাজার ৫০০। এছাড়া ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে তিনজন করে প্রায় দেড় হাজার, ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে পাঁচ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় ৫৫০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন।

দলীয় ও নির্দলীয় ভোটারদের ভোটে নির্দলীয় ব্যক্তি নির্বাচনে আইনের কোনো ব্যত্যয় দেখছেন না স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘ভোটারদের ক্ষেত্রে দলীয় বা নির্দলীয় নির্ভর করে না। সাদা চোখে বিষয়টি ভিন্ন রকম মনে হলেও আইনের দৃষ্টিতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ যেভাবেই আসুক না কেন, তারা সবাই জনপ্রতিনিধি।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারও একই ধরনের মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা রাজনৈতিক দলের, না অরাজনৈতিক, সেটা বিশেষ বিবেচনায় নেয়ার সুযোগ নেই। তবে সমস্যা হচ্ছে অন্যখানে। সরকার স্থানীয় সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর একইসঙ্গে দলীয় ও নির্দলীয় এবং জেলা পরিষদে পুরোপুরি নির্দলীয় ব্যবস্থা করে জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলেছে। সরকারের এই দ্বৈতনীতির কারণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে কখনোই প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে না।’


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!