• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
নেয়া হচ্ছে না ১০ আঙুলের ছাপ আইরিশ

ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু আজ


বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২৫, ২০১৭, ০৫:৩৯ পিএম
ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু আজ

ঢাকা: ভোটার হালনাগাদ শুরু হলো আজ (২৫ জুলাই) থেকে। তবে এখন ভাটার হালনাগাদ করার সময় নতুন ভোটারদের ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণির (আইরিশ) ছবি সংগ্রহ করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহ তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে দেশব্যাপী ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, আইনের বিধি বিধান মেনেই নির্বাচন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্ব শর্তই হচ্ছে সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন। এ লক্ষেই নির্বাচন কমিশন সারাদেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্ভুল তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে হালনাহাদ ভোটার তালিকা প্রণয়নের কার্যক্রম শুরু করেছে। হাল নাগাদের কাজ চলবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত।

এবার আগের মতোই মুখের ছবি ও বুড়ো আঙুলের ছাপ নিয়েই ভোটার নিবন্ধন করা হবে। ফলে এবার যারা ভোটার হবে, পরিচয়পত্রের (এনআইডি) স্মার্ট কার্ড পাওয়ার জন্য আবার তাদের ইসিতে যেতে হবে স্ক্যানার ও ক্যামেরার সামনে। ইসিকেও এ জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে। কারণ নতুন ভোটারদের এনআইডি স্মার্ট কার্ডের জন্য ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি অপরিহার্য।

এ বিষয়ে ইসির বিদায়ী সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ১০ আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহের জন্য দুই হাজার স্ক্যানার এবং আইরিশের জন্য দুই হাজার ক্যামেরা বিশ্বব্যাংকের টাকায় কিনতে চেয়েছিল কমিশন। কিন্তু এর ক্রয়প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা হয়েছে।

এ অবস্থায় ভবিষ্যতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এসব যন্ত্রপাতি কিনে আবার ওই ভোটারদের আঙ্গুলের ছাপ ও আইরিশ সংগ্রহ করতে হবে। এ ছাড়া বিদ্যমান ভোটারদের মধ্যে যাদের এসব বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি তাদের জন্যও ওই সব যন্ত্রপাতি কাজে লাগবে।

তিন ধাপে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) থেকে। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পরিকল্পনার আওতায় ৩৫ লাখ নতুন ভোটারের ছবি ও তথ্য নিবন্ধন করা হবে ডিসেম্বরের মধ্যে। আগামী ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ এবং ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় ঠিকানা স্থানান্তর এবং মৃত ব্যক্তিদের নাম বাদ দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে ২৫ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ভোটার নিবন্ধন করা হবে ২০ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

দ্বিতীয় ধাপে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ এবং তৃতীয় ধাপে ১৪ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম চলবে। এরপর ভোটারের তথ্যগুলো নিবন্ধন করা হবে।

চার চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত: এদিকে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য চারটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে থানা, উপজেলা ও জেলা অফিসগুলোতে ল্যাপটপ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারসহ প্রযুক্তিগত সহায়তার অভাব রয়েছে। স্থানীয় নির্বাচন অফিসগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ডাটাবেজের নিজস্ব নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) নেই।

ফলে সিডি, ডিভিডি বা হার্ডড্রাইভের মাধ্যমে নতুন ভোটারদের ডাটা ঢাকায় কেন্দ্রীয় সার্ভারে আনার সময় হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। হালনাগাদের সময় দ্বৈত ভোটার শনাক্ত করার জন্য তথ্য ম্যাচিং এএফআইএস (অটোমেটিক ফিঙ্গার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম) সাপোর্ট সার্ভিসের সঙ্গে চুক্তি এক বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। প্রায় একই ধরনের সমস্যা রয়েছে কেন্দ্রীয় সার্ভারে হালনাগাদের মূল ডাটাবেজ আপলোড করার ক্ষেত্রেও।

রোহিঙ্গা ঠেকাতে কঠোরতা: এবার ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অবৈধ অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ইসি। এবার আরো ১০ উপজেলা বাড়িয়ে ৩০টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ এলাকায় বিশেষ কমিটির মাধ্যমে ভোটার তালিকার কার্যক্রম চালানো হবে।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এসব বিশেষ এলাকায় ভোটার হতে হলে আত্মীয়-স্বজন বিশেষ করে মা-বাবা, ফুফু, চাচার জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে। এসব বিশেষ এলাকার মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার জেলার আট, বান্দরবানের সাত, রাঙামাটির আট ও চট্টগ্রামের সাতটি উপজেলা।

সেগুলো হলো কক্সবাজার জেলার কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা; বান্দরবান জেলার বান্দরবান সদর, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা; রাঙামাটি জেলার রাঙামাটি সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল উপজেলা এবং চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বাঁশখালী উপজেলা।

দুর্গম এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ৬৫ উপজেলা: ১৯টি জেলার ৬৫টি উপজেলাকে দুর্গম এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসি। এসবের মধ্যে আছে ভোলার দুটি, বরগুনার তিনটি, বাগেরহাটের দুটি, খুলনার তিনটি, নোয়াখালীর একটি, চট্টগ্রামের একটি, কক্সবাজারের দুটি, হবিগঞ্জের তিনটি, সুনামগঞ্জের সাতটি, কিশোরগঞ্জের তিনটি, বরিশালের দুটি, সিরাজগঞ্জের একটি, নেত্রকোনার তিনটি, পটুয়াখালীর তিনটি, সাতক্ষীরার দুটি, পিরোজপুরের একটি, খাগড়াছড়ির ৯টি, বান্দরবানের সাতটি ও রাঙামাটির ১০টি উপজেলা। এসব এলাকার তথ্য সংগ্রহকারী এবং অন্য কর্মীদের ভাতা বা সম্মানী সমতলের চেয়ে দেড় গুণ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সারাদেশে ৫৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী ও ১১ হাজার সুপারভাইজার ভোটার হালনাগাদ কর্মসূচির দায়িত্ব পালন করছে।

সোনালীনিউজ/জেডআরসি/এমটিআই/জেএ

Wordbridge School
Link copied!