• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোটের দায়িত্বে সেই আনোয়ার কাকাই!


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৯, ২০১৬, ০৯:০০ পিএম
ভোটের দায়িত্বে সেই আনোয়ার কাকাই!

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে টানাহেঁচড়া করা মহানগর সভাপতি আনোয়ার হোসেন পেলেন ভোটের দায়িত্ব। ভোটের মাঠে তাকে প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে আবারো পেতে চান আইভী।

এই আনোয়ার হোসেনই ২০১১ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আইভীর পক্ষে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে গেছেন। সেই তিনিই ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে হঠাৎ করেই প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের পক্ষ নিয়ে বসেন। শুধু তাই নয়, তার সঙ্গী করে নেন জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনউদ্দিন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিএম আরাফাতসহ ১০-১২ জন নেতাকে। যারা একসময় ওসমান পরিবারবিরোধী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন।

এরপর চলতি বছরের ২১ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সিটির নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী বাছাইয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মেয়র প্রার্থী হিসেবে আনোয়ার হোসেনকে সমর্থন দেন। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি ওসমান পরিবারের  প্রভাবশালী সদস্য শামীম ওসমান।

গেল ২৯ অক্টোবর মহানগর আওয়ামী লীগের সমাবেশে আনোয়ার হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়ের পদে সবার সমর্থন প্রার্থনা করেন। সমাবেশে উপস্থিত শামীম ওসমান আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘যদি আনোয়ার হোসেন মনোনয়ন পান তাহলে তার জন্য আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করব।’ যদিও ওই ঘোষণার আগে থেকেই শামীম ওসমান আনোয়ার হোসেনের পক্ষে সামনাসামনিই কাজ করে গেছেন।

এমনকি, গত ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা সার্কিট হাউসে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় মেয়র পদে দলীয়প্রার্থী হিসেবে আনোয়ার হোসেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান ও বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। যেখানে বিদায়ী মেয়র আইভীকে চরমভাবে উপেক্ষা করা হয়। আর এ কাজে উৎসাহ দিয়েছিলেন স্বয়ং এমপি শামীম ওসমান।

শুধু তাই নয়, গত ১৮ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা চলাকালে বাইরে আনোয়ার হোসেনের সমর্থকরা গণপদত্যাগের আলটিমেটাম দিয়ে বসে থাকেন। যদিও শেষ অবধি তাদের গণপদত্যাগের হুমকি অকার্যকর হয়ে পড়ে। শেষ অবধি মনোনয়ন লাভ করেন সেলিনা হায়াৎ আইভীই।

মনোনয়ন প্রাপ্তির পর শনিবার (১৯ নভেম্বর) নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। সেখানে আনোয়ার হোসেন বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইভী আনোয়ার হোসেনকে কাকা সম্বোধন করে বলেন, ‘আমি মনে করি আনোয়ার কাকা একজন খাঁটি আওয়ামী লীগ, উনি আমার সঙ্গে কাজ করবেন। অন্যরা যারা কাজ করতে চান, তাদেরও স্বাগত জানাই।’

দলের সব নেতা–কর্মীকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আইভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা নেই, যেখানে কমবেশি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা নেই। সে ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ কিন্তু বাইরে নয়। এ রকম ঘটনা অতীতে ঘটেনি, তা কিন্তু নয়।’

আইভী বলেন, ‘১৫ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে হয়তো কোনো অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আমার নাম প্রস্তাব করা হয়নি। কিন্তু আমি তো মনোনয়ন বোর্ডের কাছে মনোনয়ন চেয়ে আবেদন করেছি। সার্বিক বিবেচনায় মনোনয়ন বোর্ড আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তৃণমূলে এ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতা–কর্মী আমার সঙ্গে আছে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগে কোনো পক্ষ নেই। পক্ষ একটি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। স্থানীয় পর্যায়ে আমাদের নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা আছে। সে কারণে কমবেশি দ্বন্দ্ব–বিভেদ থাকতে পারে। আমি মনে করি, একসঙ্গে সবাই মিলে কাজ করব। যে যেই পক্ষেই থাকুক না কেন, একটি নির্বাচন শুরু হলে তার আগে অনেক কিছু হয়, অনেক কিছু ঘটে। কিন্তু যখন দল সিদ্ধান্ত দেয়, সেই সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেয়।’

নির্বাচনে শামীম ওসমানের কী ভূমিকা হবে, এমন প্রশ্নে আইভী বলেন, ‘ উনি যদি দলের অনুগত কর্মী হন, তবে নিশ্চয়ই দলের নির্দেশ মেনে চলবেন।’ শামীম ওসমানের বাড়িতে যাবেন কি না—এমন প্রশ্নে আইভী বলেন, ‘প্রয়োজন মনে হলে যেতে পারি। উনি আমার ভোটার।’

আইভী বলেন, ‘আমি গত ১৩ বছরে সিটি করপোরেশনে দলবাজির ঊর্ধ্বে রেখে কাজ করেছি। দলের সঙ্গে আমি ছিলাম এবং আছি। দল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেয়ায় আমি কৃতজ্ঞ।’ পরে মেয়র আইভী আনোয়ার হোসেনের বাসায় যান। তবে আনোয়ার হোসেনসহ তার পরিবারের কেউ এ সময় বাসায় উপস্থিত ছিলেন না।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এটুকুই, যিনি নৌকা পাবেন, তিনিই আমাদের প্রার্থী। আমি জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন জানাই।’

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!