• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ভোটের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টে ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে আ.লীগ-বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৮, ২০১৭, ০২:১৯ পিএম
ভোটের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টে ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে আ.লীগ-বিএনপি

ঢাকা : সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য (মূর্তি) সরিয়ে ফেলার কৃতিত্ব নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একমত পোষণ করেছে। উভয় দলের নেতারা বলছেন, এই ভাস্কর্য (মূর্তি) সরানোয় সরকারের কোনো কৃতিত্ব নেই, এটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টের। তবে এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা।

রাজধানী ঢাকায় সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য (মূর্তি) অপসারণের পর প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) দেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তাই তিনি ধন্যবাদ পেতে পারেন।’

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য অপসারণের ঘটনায় এক সুরে সুর মিলেয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা। প্রধান বিচারপতির ওপর দায় চাপালেও ভোটের হিসাবে দুই দলই একে ইতিবাচকভাবে নিতে চায়। ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত ভাস্কর্যটি অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামী দল। পরে প্রধানমন্ত্রীও ভাস্কর্যটির বিরুদ্ধে অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন।

এরপর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও দেশের জনগণের আকাঙ্খার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন। পাশাপাশি এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গেও আলোচনায় বসেন।

অন্যদিকে সরকারের দু’জন মন্ত্রী স্পষ্ট ভাস্কর্য অপসারণের বিরুদ্ধে মত দেন। বাম রাজনৈতিক দলগুলোসহ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা হেফাজতের আপস না করে ভাস্কর্যটি বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এরই মধ্যে ইসলামী দলগুলোর দাবি মেনে রমজানের আগেই গত বৃহস্পতিবার রাতে ভাস্কর্যটি অপসারণের সিদ্ধান্ত জানায় সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ। রাতেই ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয়।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ভাস্কর্য অপসারণের এখতিয়ার আদালতের। এটি সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিম কোর্টের ওপর দায় চাপালে দলের নেতারা বলছেন, সামনের ভোটের রাজনীতিতে এটি একটি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারে। আর সে হিসেবেই জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে শ্রদ্ধা জানিয়েই এ সিদ্ধান্ত এসেছে। এটি সরকারের জন্য ইতিবাচক বলেও মনে করেন তারা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, এটি প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার। তিনিই ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন, তিনিই সরিয়ে নিয়েছেন। আহমদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মমনা। সেক্ষেত্রে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য নিয়ে তো একটি প্রশ্ন ছিলই। এখন আর সেই প্রশ্নটি নেই।

এ বিষয়ে সরকারের ওপর ধর্মীয় রাজনৈতিক শক্তিগুলোর চাপ প্রকাশ পেল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে একটি ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ছিল। সেটিকে তো আমরা বাইপাস করতে পারি না।

এদিকে ক্ষমতাসীনদের সুরেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। ইসলামিক বলয়ের ভোট ব্যাংককে ধরে রাখতেই বিএনপি এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী অবস্থানে যাচ্ছে না বলে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ অনেকটা ওবায়দুল কাদেরের সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, ভাস্কর্য সরানো প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার, সরকারের না। প্রধান বিচারপতি অন্য আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করেই ভাস্কর্য সরিয়েছেন।

একই বিষয় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে বিবেচনায় নিয়েই প্রধান বিচারপতি ভাস্কর্য অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে সরকারবিরোধী অবস্থানে যেতে পারতো বিএনপি। কিন্তু সেটি ভোটের হিসাবে কোনো প্রভাব ফেলত না। তাই আমাদের যে ধরনের ভোটব্যাংক, ভাস্কর্য সরানোর বিষয়টি তার সাথে যায়।

তবে দেশের শীর্ষ দুটি রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে অনেকটা একপাক্ষিক অবস্থান নিলেও ইতোমধ্যে বাম রাজনৈতিক দলগুলো এর বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। প্রতিবাদে শামিল হয়েছে প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!