• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের মালিক জনগণ যাকে ইচ্ছে ভোট দেবে


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৫, ২০১৭, ০৯:২২ পিএম
ভোটের মালিক জনগণ যাকে ইচ্ছে ভোট দেবে

ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভোটের মালিক জনগণ, ভোট দেবে তাদের ইচ্ছামতো। যাকে তারা চায় তাকেই তারা পাবে। কিন্তু আমার একটাই লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন করে যাওয়া।

রাষ্ট্রের দুই শীর্ষ প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স-এসএসএফের সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা আমার নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন। আপনারা আমাকে নিরাপত্তা দিন ভালো কথা, কিন্তু খেয়াল রাখবেন যেন আমি জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না যাই। কারণ পরিবার হারানোর পরে ওরাই আমার কাছের মানুষ।’

শনিবার (১৫ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে এসএসএফের ৩১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দরবারে এসব কথা বলেন।

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদেরকে যদি জনগণ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়..ওই যে বলে না জলের মাছ যদি ডাঙায় ফেলা হয়, মাছ যেমন দাপিয়ে দাপিয়ে মরে যায় আমাদের অবস্থা সে রকম হবে। মানুষের সাথে না থাকতে পারলে, মানুষকে না দেখতে পারলে আমাদের বেঁচে থাকার কোনো স্বার্থকতা থাকে না।’

১৯৭৫ সালে স্বপিরবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর মানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে বার বার প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করার কথা উল্লেখ করেন তিনি। হত্যার জন্য নিজের ওপর বারবার আঘাত আসার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তবে নিজের জন্য তিনি কখনো চিন্তা করেন না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তিনি প্রতিদিন দেশবাসী, নিজের সন্তান ও তার সঙ্গে যারা থাকে, বিশেষ করে নিরাপত্তার দায়িত্বে, তাদের জন্য দোয়া করেন।

প্রধানমন্ত্রী এসএসএফ সদস্যদের ‘দক্ষতা, আনুগত্য ও পেশাদারিত্বের’ সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কথা তুলে ধরেন। বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান; যারা বাংলাদেশ সফরে আসেন তাদের কাছে এসএসএফ সদস্যদের প্রশংসা শুনে নিজের গর্বের কথা জানিয়ে বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান তিনি।  

জিমি কার্টারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির মাধ্যমে ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করতে বলেছিলেন বলে জানান  শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারতে হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়দে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন বিল ক্লিনটন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিজে আমাকে অনুরোধ করেছিলেন। তখন বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট। ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। আমি তাকে ওই জবাবই দিয়েছিলাম যে আগে আমার দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে হবে।’ এরপর যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েও একই অনুরোধ পেয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন একই প্রশ্ন। আমি একই উত্তর দিয়েছিলাম।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে আমি ক্ষমতায় আসতে পারিনি। তার পেছনে কারণ ছিল, আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। গ্যাস উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন অ্যামেরিকান কোম্পানি এখানে বিনিয়োগ করে। তাদের ইচ্ছা ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রি করবে। আর ভারত এই গ্যাস কিনতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি আমাদের গ্যাস বিক্রি করার পক্ষে মত দিইনি। আমার কথা ছিল, আগে আমার কত গ্যাস আছে জানতে হবে। আমার দেশের চাহিদা পূরণ করতে হবে। ৫০ বছরের রিজার্ভ রাখতে হবে। তারপর যদি অতিরিক্ত থাকে, তবেই আমি বিক্রি করব। তাছাড়া এই গ্যাস আমি বিক্রি করতে পারব না।’

বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হিসেবে দেশের স্বার্থহানিকর কিছু করবেন না বলে জনগণকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘আমি যা বলব, এককথাই বলব। ক্ষমতার লোভে দেশের সম্পদ আমি অন্যের হাতে তুলে দিতে পারি না। তাই আমি রাজি হইনি।’ ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে লতিফুর রহমান নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন শেখ হাসিনা। পরে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায়  বসেন খালেদা জিয়া।

ওই সময়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, লতিফুর রহমানের বাসায় এক মধ্যাহ্ন ভোজে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি ও জিল্লুর রহমান এবং বিএনপি থেকে খালেদা জিয়া ও আবদুল মান্নান ভূঁইয়া যোগ দিয়েছিলেন, যেখানে জিমি কার্টার ছিলেন।

‘যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার আসেন। তার সঙ্গে আমাদের বৈঠক। সেখানে একই কথা (গ্যাস বিক্রি) ওঠে। আমি শুধু একটি কথাই বলে এসেছিলাম যে, আমার যে কথা বলার সেটা ঢাকায় বসেও বলেছি, ওয়াশিংটনেও বলেছি। কাজেই এটাই আমার কথা। আমি দেশ বেচার মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমার দেশের সম্পদ দেশের মানুষের। এটা আমি কাউকে দিতে পারব না।’

লতিফুর রহমানের বাড়ি থেকে তিনি ও জিল্লুর রহমান চলে যাওয়ার পরও বিএনপি নেতারা সেখানে থেকে গিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেত্রী থেকে যান। তারপর যা হবার; তাদের মধ্যে বোধহয় সমঝোতা হয়। ২০০১ এর নির্বাচনে আমরা যেটা দেখেছি, ভোট আমরা বেশি পেয়েছিলাম, কিন্তু সিট কম পেয়েছি। সরকারে আসতে পারেনি।’

এবার ক্ষমতায় বসার পর বিল ক্লিটনের স্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে অর্থ আটকেছিলেন বলে অভিযোগ তোলেন শেখ হাসিনা। এসএসএফের অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর বিষয়েও কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল আমার বিরুদ্ধে। আমার মন্ত্রিপরিষদের বিরুদ্ধে, আমার পরিবারের বিরুদ্ধে। এটা একটা ষড়যন্ত্র ছিল, চক্রান্ত ছিল। কিন্তু তারা সেটা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার আদালত ওটাই রায় দিয়েছে যে, এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট, মিথ্যা একটা অভিযোগ ছিল।’

শেখ হাসিনা বলেন, এখানে জনগণের সেবা করতে এসেছি। জনগণের জন্য কাজ করি। নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য না। তিনি বলেন, ‘১৯৫৪ সালে আমি মন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমি রাষ্ট্রপতির মেয়ে, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। আমি নিজে প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। কাজেই দুর্নীতি করে যদি নিজের ভাগ্য ইচ্ছা থাকতো তাহলে বহু আগেই করতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করিনি।’

দরবারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সফিকুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!