• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ভয়ংকর চার জঙ্গি পরিবার


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৬, ২০১৭, ০৪:৪৯ পিএম
ভয়ংকর চার জঙ্গি পরিবার

ঢাকা: জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না নারী-শিশু। শুরুতে স্বামীদের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড সমর্থন না থাকলেও একপর্যায়ে দুর্ধর্ষ জঙ্গি সংগঠকদের স্ত্রী-সন্তানরাও ঝুঁকে পড়ছে জঙ্গিবাদে। আর জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব থেকে শুরু করে কর্মী পর্যায়ে পরিবার ও স্বজনদের দেখা মিলছে হরহামেশাই।

জঙ্গিবাদের ভয়াল ছোবলে ভেঙে চুরমার হচ্ছে একেকটি পরিবার। গেল বছরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে এক চিকিৎসক পরিবারের ‘উধাও’ হওয়ার খবর মেলে। পরে জানা যায়, তারা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

নব্য জেএমবির দীক্ষা নিয়ে উগ্রবাদের নিষ্ঠুর পথে বেছে নিচ্ছে পরিবারগুলো। স্বামীর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে উচ্চশিক্ষিত স্ত্রী জড়িয়েছে ভয়ঙ্কর জঙ্গিবাদে; যার ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি পরিবারের ছোট্ট শিশুটিও। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী তৎপরতায় শেষ রক্ষা হচ্ছে না তাদের।

গেল বছরের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনায় নিহত হয় রাজধানীর অভিজাত একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ুয়া এক কিশোর। এতটুকু বয়সে ওই কিশোর জঙ্গিবাদে এমনই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল যে, পুলিশের অভিযানে আত্মসমর্পণ না করে ‘সুইসাইডাল ভেস্ট’ বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে আফিফ কাদেরী আদর নামের ওই কিশোরটি।

আশকোনার অভিযানে আরেক ভয়ঙ্কর জঙ্গি সুমনের স্ত্রীও আত্মঘাতী হয়ে মারা যান। পুলিশ বলছে, জঙ্গি সুমনও পুলিশের একটি অভিযানে নিহত হয়। আর কিশোর আফিফ কাদেরী আদরের বাবা তানভীর কাদেরী ও ভাই তাহরীর কাদেরীও পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আত্মঘাতি হয়ে মারা যান। তবে জঙ্গিবাদে আত্মঘাতি বিস্ফোরণে নারী ও কিশোরের নিহত হওয়ার ঘটনাটি একেবারেই নতুন। তাই এই বিষয়টি এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে নতুন ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভয়ংকর চার জঙ্গি পরিবার : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকা থেকে চার জঙ্গি পরিবারের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব পরিবার হচ্ছে- ব্যাংক কর্মকর্তা তানভীর কাদেরী, সাবেক সেনাকর্মকর্তা মেজর জাহিদুল ইসলাম, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বাসারুজ্জামান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল ইসলাম মারজানের পরিবার।

তানভীর কাদরী ও আবেদাতুল ফাতেমা : আদালতে দেয়া তানভীর কাদেরীর যমজ ছেলেদের একজন তাহরীম কাদেরীর জবানবন্দি থেকে জানা যায়, তানভীর কাদেরী একসময় মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানির বড় পদে চাকরি করতেন। সর্বশেষ দেশের একটি ব্যাংকে বড় কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার বড় কর্মকর্তা।

যমজ দুই ছেলে তাহরীম কাদেরী আর আফিফ কাদেরী পড়ত উত্তরার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে। উত্তরার মতো অভিজাত এলাকায় ছিল তাদের বাসা। গত ১০ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার আজিমপুরে জঙ্গিদের একটি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের মুখে তানভীর কাদেরী গলা কেটে আত্মহত্যা করেন। ওই আস্তানা থেকেই আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তার স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ও তাদের যমজ ছেলেদের একজন তাহরীম কাদেরী ওরফে রাসেলকে। পরে আশকোনার আস্তানায় পাওয়া যায় ওই দম্পতির অপর ছেলে আফিফ কাদেরীর লাশ। ওই কিশোর নিজে শরীরে সুইসাইড ভেস্ট বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সস্ত্রীক জঙ্গিবাদে সাবেক মেজর জাহিদ : মেজর জাহিদুল ইসলাম সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে জড়িয়েছিলেন নৃশংস জঙ্গিবাদে। হয়েছিল নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার। গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারী জঙ্গিদের প্রশিক্ষকও ছিলের তিনি। জাহিদ নিজের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলাকেও দীক্ষা দিয়েছেন জঙ্গিবাদে। অবশ্য গত ২ সেপ্টেম্বর রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত হন জাহিদুল ইসলাম। আশকোনার জঙ্গি আস্তানা থেকে মা ও ভাইয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুলিশের হাতে সন্তানসহ গ্রেপ্তার হন জেবুন্নাহার শিলা।

আইটি বিশেষজ্ঞ বাসারুজ্জামান ও স্ত্রী শারমিন : নব্য জেএমবির আইটি বিশেষজ্ঞ পলাতক বাসারুজ্জামান ওরফে চকলেট একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। নিজের পছন্দেই বিয়ে করেছিলেন ইডেন মহিলা কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী ফেরদৌসী আফরিন ওরফে শারমিনকে। এরপর দুজনই জড়িয়েছেন জঙ্গিবাদে। ১০ মাস বয়সী মেয়ে সাবিহা জামানকে নিয়ে এ দম্পতি মাসের পর মাস চালিয়েছেন জঙ্গিকার্যক্রম। তবে শারমিনকে ধরা গেলেও পলাতক থেকে যান বাসারুজ্জামান। গেল বছরের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে শারমিন পুলিশকে গুলি করে পালানোর চেষ্টা করেন। তবে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছিল। তার ১০ মাস বয়সী মেয়ে নানার জিম্মায় রয়েছে।

মারজান-প্রিয়তি দম্পতি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নুরুল ইসলাম মারজান ছাত্র অবস্থাতেই প্রেম করে বিয়ে করেন খালাতো বোন আফরিন ওরফে প্রিয়তিকে। এর মধ্যে মারজান হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জঙ্গি হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। নব্য জেএমবির ন্যাশনাল অপারেশন কমান্ডারও ছিলেন। তার স্ত্রী নব্য জেএমবির নারী শাখার অন্যতম সংগঠক। গত ১০ সেপ্টেম্বরে আজিমপুরের আস্তানায় অভিযানের সময় সন্তানসম্ভবা প্রিয়তি অস্ত্র হাতে পুলিশকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। অবশ্য তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিলে এ দম্পতির জঙ্গি কর্মকাণ্ডের ভয়ংকর সব তথ্য উঠে আসে। তবে শেষ অবধি পলাতক মারজানের শেষ রক্ষা হয়নি। গেল ৫ জানুয়ার রাতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!