• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মতবিরোধ ছিল বিদায়ী ইসিতে


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৪, ২০১৭, ০৩:২৬ পিএম
মতবিরোধ ছিল বিদায়ী ইসিতে

ঢাকা : কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। বিদায়ী এ কমিশনের ৫ বছরে কমিশনারদের পরস্পরের মধ্যে মতবিরোধ ছিল খুবই ছোটখাট বিষয়ে। ছিল নানা বিতর্ক-সমালোচনাও। ফলে আইন সংস্কারসহ উল্লেখযোগ্য কোনো প্রস্তাব রেখে যেতে পারছেন না তারা। ইসি’র পরিচয়, কমিশনারদের জ্যেষ্ঠতা, স্থানীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী, আরপিও সংশোধন, ইউপি নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যানদের প্রচারণা, ভোটের দিনে ছুটি ঘোষণা, ১৫ বছর বয়সীদের ভোটার তালিকাভুক্ত করা, বিভিন্ন উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ ছোটখাট নানা বিষয়ে পরস্পরের মধ্যে মতবিরোধ ছিল বিদায়ী ইসি’র।

ইসি কর্মকর্তারা বলেন, পরস্পরের মধ্যে বিরোধিতার কারণে নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে আইনি সংস্কারের কাজটিও করে যেতে পারছে না বিদায়ী কমিশনাররা। নির্বাচনী আইন সংস্কারে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে একগুচ্ছ মতামত পাওয়া গেলেও শেষ সময়ে নতুন কোনো কাজ আর হাতে নিতে চাচ্ছেন না তারা। তবে এনিয়েও মতভেদ তৈরি হয়েছে কমিশনারদের মধ্যে। কেউ কেউ বলছেন, শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করব আবার কেউ কেউ বলছেন শেষ মুহূর্তে নতুন কোন কাজে হাত দেব না। এছাড়া ইসি’র নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে আগের ইসি সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখলেও বর্তমান ইসি এ ধরনের কোনো সুপারিশ করেনি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে নতুন ইসি গঠনের প্রস্তুতি নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাচন কমিশনার এ প্রতিবেদককে বলেন, গত ৫ বছরে আমাদের মধ্যে ছোটখাট বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হয়েছে। যা না করলে পারা যেত। এসব বিষয় নিয়ে বিরোধিতার কারণে কিছু জরুরী সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসি। যেমন- আমাদের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা কোনো সংস্কার প্রস্তাব রেখে যেতে পারছি না। পরস্পরের মধ্যে ঐকমত্য থাকলে নতুন ইসি গঠনের বিষয়েও কিছু মতামত দেয়া যেত। গত কমিশনের সেই প্রস্তাব পর্যালোচনা করে নতুন ইসি গঠনের জন্য কাজ করলে আরো ভালো হত।     

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ের আগে এ টি এম শামসুল হুদার কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ে সংবিধানের আলোকে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সিইসি ও ইসি নিয়োগ পদ্ধতির আইনের খসড়া পাঠায়। যদিও তা আর আমলে নেয়নি তৎকালীন সরকার। পরবর্তীতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটি গঠন করেন। যার মাধ্যমে কাজী রকিব কমিশন গঠিত হয়। 

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সংবিধানে বলা আছে। আইন হলে হবে। যতদিন না আইন হয়, ততদিন সংবিধান অনুসারে হবে। (সিইসি ও ইসির নিয়োগ) এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, সে মোতাবেকই হবে। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, আমি শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করব। আইন অনুযায়ী যে কাজ করা দরকার সেটাই করব। কে করল আর কে না করল সেটা দেখার বিষয় নয়। কারণ, সরকার আমাকে শেষ দিন পর্যন্ত বেতন দেবে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, বর্তমান ইসি বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, নারায়ণগঞ্জের পর আর কোনো নির্বাচন তারা করতে চাইছেন না। কিন্তু ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ায় এখন নির্বাচন আয়োজন করতে বাধা নেই। গাইবান্ধা-১ শূন্য আসনের উপনির্বাচনও মার্চের মধ্যেই করতে হবে।

গত চার বছর প্রথমে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ, এরপর জাবেদ আলী ও আবু হাফিজ এবং সর্বশেষ আবদুল মোবারকের স্বাক্ষর শেষে ফাইল যাচ্ছিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে। তবে শেষ বছরে এসে এতে আপত্তি জানান নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। তিনি বলেন, সব কমিশনারই সমান মর্যাদার। তাই সপ্তাহান্তে স্বাক্ষরের ক্রমও পরিবর্তন করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের নাম নিয়েও মতভেদ দেখা দেয় কমিশনারদের মধ্যে। ফলে তাদের একেকজন একেক নামে পরিচয়পত্র ছাপান। সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার পর  থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন হিসেবে পরিচিত হলেও বিদায়ী কমিশনের কমিশনাররাই প্রথম এর পরিচয় ভিন্নভাবে লেখা শুরু করেন। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ  নেওয়াজ ভিজিটিং কার্ডে লিখেন- ‘ইলেকশন কমিশন ফর বাংলাদেশ’, নির্বাচন কমিশনার  মোহাম্মদ আবদুল মোবারক লিখেন- ‘নির্বাচন কমিশন’, নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী লিখেন- ‘বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন’। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কার্ডে নামের পরেই চিফ ইলেকশন কমিশনার, বাংলাদেশ লেখেন। 

প্রথমবার দলীয়ভিত্তিতে স্থানীয় নির্বাচন করার আগে নানা জটিলতার মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়েও সমস্যায় পড়েন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় সরকারেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ ভোটারের তালিকা দেয়ার বিধান রাখা হবে কি না, তা নিয়ে সৃষ্টি হয় এই দ্বন্দ্ব। তবে স্থানীয় সরকারের ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের অংশ  নেয়ার সুযোগ থাকবে কি না- তা নিয়েও নির্বাচন কমিশনে দেখা দেয় মতবিরোধ। সংসদ কিংবা স্থানীয় নির্বাচন- যেকোনো ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকার এতদিনের নিয়ম বাদ দেয়ার বিষয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছিল কমিশনারদের মধ্যে। এছাড়া ১৫ বছর বয়সীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়েও সৃষ্টি হয় জটিলতা। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই
 

Wordbridge School
Link copied!