• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মদের বারে যুবদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ২৫, ২০১৭, ০৬:৪১ পিএম
মদের বারে যুবদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

ঢাকা: রাজধানীর পরীবাগে সাকুরা বারের সামনে রোববার (২৩ এপ্রিল) গভীর রাতে গণপিটুনিতে নিহত যুবদল নেতা জনি আহমেদের (৩৫) মৃত্যু নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। রাতেই সাকুরা বারের কর্মচারীসহ ৫২ জনকে আটক করে পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে বলেছেন, গভীর রাতে মদপান করে টাকা না দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বার কর্মচারীদের পিটুনিতে জনি গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

তবে নিহতের পরিবারের দাবি, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই নয়ন আহমেদ বলেন, রোববার রাতে কমিটি গঠন নিয়ে সাকুরা বারে বৈঠক হয়। সেখানে বিভিন্ন পদে কমিটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

নয়ন আহমেদ বলেন, তার ভাই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ছিলেন। কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের একপর্যায়ে তার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তার দাবি। নিহত জনি আলী ২১নং ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক।

রোববার (২৩ এপ্রিল) গভীর রাতে খুনের এ ঘটনায় পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে সাকুরা বারের ম্যানেজার মোস্তফা কামাল ও তার ছেলে আসিফ এবং বারের কর্মচারীসহ ৫২ জনকে আটক করেছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে বলেছে, মদপানের পর টাকা না দিয়ে চলে যাওয়ার সময় বারে হামলা চালিয়ে লুটপাটের চেষ্টা চালানো হয়। এ সময় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বার কর্মচারীরা একজনকে আটক করে গণধোলাই দেয়। আর এতেই ওই ব্যক্তি মারা যান।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শাহবাগ থানায় দায়ের করা নিহতের ছোট ভাই নয়ন আহমেদের মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সাকুরা বারের কর্মকর্তা মাহবুবকে। তিনি পলাতক।

নয়ন বলেন, মাহবুবকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন মো. জাফর আলী বলেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, জনি ওরফে বাবা জনি এলাকার চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলাও রয়েছে।

সূত্র বলছে, রোববার রাতে দলবল নিয়ে সাকুরা বারে গিয়ে জনি মদপান করেন। টাকা চাওয়ায় কাউন্টারে হামলা চালিয়ে এক লাখেরও বেশি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা একজনকে আটক করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও বারের কর্মচারীদের প্রহারে মারাত্মক আহত হন জনি। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে রাত ১টার দিকে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহতের ডান হাঁটুর নিচের অংশ ভাঙা। মুখমণ্ডলে গুরুতর জখমের চিহ্ন রয়েছে।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, রোববার রাতে জনিকে মারতে মারতে সাকুরা বার থেকে নিচে নামানো হয়। নিচে নামিয়েও তাকে বেধড়ক পেটানো হয় এবং এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। শাহবাগ থানা পুলিশ সাকুরা বারের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধারণকৃত ওই সময়ের ফুটেজ জব্দ করেছে।

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানান, সাকুরা বারের কর্মচারীদের হামলায় জনি মারা গেছে- এটা নিশ্চিত হওয়া গেলেও এর সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের চিহ্নিত করা যায়নি। ৫২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ওসি বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সালে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ও ফুল ব্যবসায়ী সেলিম শাহী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন জনি।

নিহত জনি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানার রাজনগর গ্রামের আবদুল কুদ্দুছের ছেলে। ঢাকার কল্যাণপুরে ১১ নম্বর রোডে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি। তিনি দুই মেয়ের জনক। তার স্ত্রীর নাম মর্জিনা। শাহবাগ থানার পাশে তার ফুলের দোকান ছিল। ৫ ভাই ও এক বোনের মধ্যে জনি ছিলেন দ্বিতীয়।

তার ছোট ভাই নয়ন বলেন, আমি নিশ্চিত যে সাকুরা বারের কর্মচারীরাই আমার ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, বারের ভেতরে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ দেখা গেছে। বাইরেও রক্ত ছিল। রক্তমাখা হকিস্টিকও পুলিশ উদ্ধার করেছে।

তিনি বলেন, সাকুরা বারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করলেই অপরাধীদের শনাক্ত করা সহজ হবে। এদিকে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে সাকুরা বারের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, বারের প্রধান গেট বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। বারের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!