• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মধুর খামার করে মামুনের ভাগ্যবদল


কুষ্টিয়া সংবাদদাতা ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৮, ০৬:১১ পিএম
মধুর খামার করে মামুনের ভাগ্যবদল

কুষ্টিয়া : নাম তার মামুন-অর রশীদ। কিন্তু সবাই এখন তাকে মধু মামুন বলেই ডাকে। তবে এই নামে ডাকার কারণে বিরক্ত নয়, বরং নতুন এক পরিচিতি পেয়েছে। বেশ ভালোই লাগে তার। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির আশা না করে মধুর বাণিজ্যিক চাষ করতেই তার আগ্রহ ছিল বেশি। সে এখন বাণিজ্যিকভাবে মধুর খামার করে ভাগ্যবদল করতে পেরেছে নিজের জীবন এবং পরিবারকে।

মামুন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গেটপাড়া গ্রামের মৃত মসলেম উদ্দিন মন্ডলের ছেলে। কারিগরি কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ১৯৯৭ সালে মাত্র ৪টি মধুর বাক্স নিয়ে শুরু হয় মামুনের পথচলা। এখন তার খামারে দুই শতাধিক মধুর বাক্স রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটির মূল্য ৭-৮ হাজার টাকা। বছরে ৯-১০ টন করে মধু উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি দেশের বাইরেও রফতানি করেন।

উপজেলার ধুবইল মাঠের খামারে কর্মরত মামুন  বলেন, ‘শখের বসেই ১৯৯৭ সালে ২ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে মাত্র ৪টি মধুর বাক্স কিনে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ শুরু করি। ১৯৯৮ সালে মাস্টার্স পাস করলেও চাকরির আশা না করে মধুর বাণিজ্যিক চাষ করে আসছি’। ‘বর্তমানে আমার মধু খামারে ৮ জন কর্মচারী বছর জুড়েই মধু সংগ্রহ করেন। ২০১৫-১৬ বছরে ৯ টন ও ২০১৬-২০১৭ বছরে ১০ টন মধু পেয়েছি। এ বছরও একই পরিমাণ পাওয়ার আশা করছি’।

মামুন আরো বলেন, ‘কুষ্টিয়ার মিরপুর ও সদরের বিত্তিপাড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর ও চলনবিল, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন স্থানের খামারের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করি। নভেম্বর থেকে কুষ্টিয়ার মিরপুর ও বিত্তিপাড়া এবং নাটোরের চলনবিলের সরিষা ফুলের মধু, এরপর কালজিরা ফুলের মধু এবং সবশেষে শরীয়তপুরের কালজিরার মধু ও নাটোরের গুরুদাসপুরের লিচু ফুলের মধু সংগ্রহ করি’। এ বছর মামুন এ মাঠে ২০টি বাক্সে মধুর খামার করেছেন। তার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ২০০ কেজি। ইতিমধ্যে মাত্র দুই সপ্তাহে ৫৩৫ কেজি মধু পাওয়া গেছে। আরও পাবেন বলেও জানান তিনি।

মামুন বলেন, ‘গত বছর খামার থেকে এবং বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও কম্পানির কাছে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। আমার খামার থেকে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় মধু পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ কম্পানিই স্বল্পমূল্যে মধু কিনে নিয়ে তাতে কেমিক্যাল মিশিয়ে চড়া দামে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। মধূর গুণাগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গাছি সংগ্রহকারীরা মৌচাকে চাপ দিয়ে সংগ্রহ করেন। এতে মধুর গুণাগুণ ৪০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। আর আমার খামারে যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস দিয়ে সংগ্রহ করি। এতে আমাদের মধুর গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে।

সরকারিভাবে বিক্রির ব্যবস্থা করা হলে আমরা মৌ খামারিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারব’ বলেও যোগ করেন মামুন। তবে সরকারি বিভিন্ন মেলায় অংশগ্রহণ করে স্টল নিয়ে মধু বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন বলেও জানান তিনি। মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, উপজেলার মডেল মৌ-খামারি মামুন মধুর চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার সাফল্য দেখে আরও অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!