• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
ধারাবাহিক উপন্যাস

মধ্য রাতের নদী (পর্ব-০৪)


সাহিত্য-সংস্কৃতি ডেস্ক আগস্ট ১০, ২০১৬, ০৫:৪৫ পিএম
মধ্য রাতের নদী (পর্ব-০৪)

নলীনি উঠোন বাড়িঘর ঝাড়ু দিয়ে কলপার বসে মাজা-ঘঁষা করে। ধোয়া হলে পাতিলগুলো রান্নাঘরের সামনে স্তুপ করে রাখা শুকনা খড়িগুলোর উপর উপুড় করে দেয় শুকাতে। মাজা-ঘঁষার কাজ শেষ হলে নলীনি দুপুর বেলার রান্না-বান্নার কাজে আসে। তরকারীর পাতিল নিয়ে রান্নাঘরের সামনে খোলা জায়গাটায় বসে তরকারী কাটে এক মনে।মিয়া বৌ একটা মোড়া নিয়ে এসে বসে নলীনির পাশে। বলে :-রতন মাঝির এত বড় সর্বনাশ কেডা করল কিছু বুঝবার পারলা? তরকারী কাটতে কাটতে নলীনি উত্তর দেয় : - না আম্মা।

-কেউই ধরতে পারলো না।

-না।

-মাঝি অহন কি কয়?

-কি কইবো। সারাক্ষণ মনমরা হইয়া ঘরে শুইয়া থাহে।

-খাইবো কি?

-রিজিকের মালিক যা খাওয়াইবো।

-তাই বলে কোন চেষ্টা করবো না?

-কইছি অন্যের নাও ভাড়া খটত।

-মাঝি কি কয়?

-কি আর কইবো! দীর্ঘশ্বাস ফেলে নলীনি। তারপর বলে : -নিজের নাও বাইয়া অভ্যাস হইছে, অত তাড়াতাড়িই কি আর অন্যের নাও ভাড়া খাটতে পরবো। কিছুদিন উফাস দিলেই সব ঠিক অইয়া যাইবো। মিয়া বৌ নলীনির মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবে । নলীনি আবার বলে : -মাঝির মনডা খুব খারাপ। মাঝিরে সান্ত্বনা দেওনের লাইগ্যাই কয়দিন কামে আইতে পারি নাই। আপনের খুব অসুবিধা হইছে আম্মা, না?

-তেমন অসুবিধা হয় নাই। কি একটু ভেবে নিয়ে মিয়াবৌ আবার বলে :

-তোমার মন খারাপ হয় নাই বউ?

-হইছে আম্মা। তয় বেশি না।

মিয়া বৌ লক্ষ্য করেছেন স্বামীর দুর্দিনে স্ত্রীর যতটা মন খারাপ হওয়ার কথা নলীনির মাঝে ঠিক ততটা নেই। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে বৌ যেন কাজে কর্মে আগের চেয়েও যত্নবান।

-তোমাকে একটা কথা কমু বৌ?

-কন আম্মা।

-স্বামীর দুর্দিনে যতটা মন খারাপ হওয়ার কথা তোমার মাঝে তা দেখছি না। তার উপর তোমাদের যা নুন আনতে পানতা ফুড়ায় সংসার। নলীনি একটা আর্তশ্বাস গোপন করে বলে :

-আম্মা, মানুষের জীবনে কিছু কিছু সর্বনাশ সুখ ডাইক্যা আনে। আমার স্বামীর জীবনের এত্ত বড় সর্বনাশ আমার স্বামীরে ফকির বানাইয়া দিলেও আমাগরে সুখ আইন্যা দিছে। বিয়ার পর থেইক্যা যেই সুখ আমি খালি কল্পনাই কইরা গেছি। কথাগুলো বলে নলীনি নিজেই লজ্জা পায়। মিয়া বৌ চাপা হাসেন। বড় ভাল লাগে নলীনির বুদ্ধিদীপ্ত কথা। মিয়া বৌয়ের ধারণা ছিল রতন মাঝির এমন দুর্দিনে নলীনি এসে নিশ্চয়ই মিয়া বৌয়ের পায়ে উপুর হয়ে পড়বে। কেন্দে কেটে একাকার করে দেবে। বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলবে। হয়ত দরদী মিয়া বৌ-এর মন গলে যাবে সে কান্নাকাটিতে। পায়ের কাছ থেকে দু’হাতে মাঝির বৌকে তুলে দাঁড় করিয়ে বলবে :

-অত চিন্তার কি আছে। আমরা আছি না। ব্যবস্থা একটা হইয়া যাইবো। কিন্তু মিয়া বৌ-এর সব কল্পনার জাল ছিড়ে নলীনি যখন খুব স্বাভাবিক ভাবে তার সব কাজগুলো করে যায় তখন নলীনির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকান মিয়া বৌ। নলীনির ভেতরটাকে দেখতে চেষ্টা করেন এবং মনে মনে স্থির করেন মাঝির বৌ নিজ থেকে কখনো ওর দুর্যোগের কথা কাউকে বলবে না।

নলীনি রুটিন মাফিক সব কাজ সেরে থালায় ভাত নিয়ে শাড়ীর আঁচলে ঢেকে মাঝি পাড়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। মিয়া বাড়ির দুই ঘরের চিপা রাস্তা পার হতে যাবে অমনি সময় উল্টোদিক থেকে আসে মাতব্বর। কেশবপুর গ্রামের মাতব্বর হাসিব মিয়া। নলীনির মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ায়। মাতব্বরকে দেখে নলীনি জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।

গৃহকর্তা হাসিব মিয়া। লম্বা টিংটিঙ্গে গড়ন। থুতনীর নিচে ছাগলের মত দাঁড়ি। চুলগুলো ছোট ছোট করে কাটা। সর্বদাই পাঞ্জাবী আর সাদা টেট্রনের লুঙ্গী এবং মাথায় টুপি পড়ে থাকেন। পায়ে চটি জুতার চট্ চট্ আওয়াজ তুলে একহাতে ছাতা আর একহাতে লুঙ্গিটা একপাশ থেকে উঁচু করে তুলে ধরে ঘুরে বেড়ান এলাকাময়। গরীব মানুষের প্রতি দয়া দেখাতে কার্পণ্য করেন না। বেঁচে গিয়ে দয়া দেখান দুঃখী মানুষদের। সেই দাড়ির উপরে দু’ঠোটের ফাঁকে নোংরা হাসির ছাপ লেপ্টে থাকে প্রায় সারাণ। নলীনিকে দেখে ঠোঁট দুটুকে আর একটু ফাঁক করে কুৎসত হাসি হেসে মাতব্বর বলে : -রতন মাঝির বৌ যে। চলে যাচ্ছে নাকি?

নলীনি ঘোমটাটা আর একটু নামিয়ে উত্তর দেয় : -জ্বী হ।

-তা তোমার মাঝির খবর কি। ভাবতাছিলাম যামু একবার। সময়ই করতে পারতাছি না। নলীনি পাশ কেটে চলে যেতে নেয়। মাতব্বরের ডাকে আবার দাঁড়াতে বাধ্য হয়।

-মাঝির বৌ শোন। মাঝিরে একবার আইতে কইও। নাও একটা গেছে আরেকটা আইবো।

নলীনি কোনও উত্তর দেয় না। মাথা নীচু করে পাশ কেটে চলে যায়। এই লোকটাকে দু’চোখে দেখতে পারে না নলীনি। মেয়েদের মুখের দিকে তাকানোর আগেই ড্যাব ড্যাব করে বুকের দিকে তাকিয়ে থাকে।

কেশবপুর গ্রাম ছেড়ে বড় একটা মাঠ পেরিয়ে মাঝি পাড়া। মাঝি পাড়ার দণি পাশ ঘেঁষে বয়ে গিয়েছে মেঘনা। নলীনি মিয়াদের বাড়ি থেকে বের হয়ে সবুজ মাঠের আলের ভিতর দিয়ে মাঝি পাড়ার দিকে এগিয়ে যায়। মাঠের মাঝে বিরাট এক শিমুল গাছ। শতাব্দীর স্বার বয়ে অনেক সংস্কার কুসংস্কারের বোঝা মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই শিমুল গাছ। বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে গাছটি তার ঝাকড়া মাথা এলিয়ে দিয়েছে। নলীনি শিমুল গাছটার তলায় এসে দাঁড়ায়। সূর্যটা ঠিক মাথার উপরে উঠে এসেছে। গত দুই দিনের একটানা বৃষ্টিতে ভেতর ভেতর এখনও জমে আছে পানি। শিমুল গাছের ঝাকড়া মাথার দিকে তাকায় নলীনি। অদ্ভুত সুন্দর লাগে এ দৃশ্য নলীনির। অকারণেই প্রচণ্ড হাসি পায় নলীনির। মনে পড়ে অতীতের এক স্মৃতি। নলীনি তখন সখিনাপুর গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে কাশ ফাইভে পড়ত। একদিন এক কাশে কি এক প্রসঙ্গে রহিম স্যার উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন : -ক্ষুুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি। সাথে সাথে এও বলেছিলেন, ‘এ বিখ্যাত চয়ন দু’টির নির্মাতা হচ্ছেন কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য্য।’

স্যার এ প্রসঙ্গ টেনে অনেক কিছু বুঝালেও নলীনি তখন এসব দামী দামী কথার কোন অর্থই বুঝতে পারেনি। আজ এই শিমুল গাছের সুন্দরের দিকে তাকিয়ে সেদিনের স্যারের সেই উক্তির পূর্ণ উপলব্দি নলীনি করে। এই মুহুর্তে শিমুল গাছের ঝাকড়া মাথা আর পূর্ণিমার চাঁদের সুন্দরের বর্ণনা নলীনির কাছে একই। তবুও শিমুল গাছের ঝাকড়া মাথার দিকে তাকিয়ে বড় অদ্ভুত ভাল লাগে নলীনির। মনে হয় এই মুহুর্তে যদি আকাশ জুড়ে একটা পূর্ণিমার চাঁদও ভেসে উঠত তবে তাও নলীনির কাছে অসহ্য সুন্দর লাগত।

রতন মাঝি তেল চিটচিটে বালিশটায় মাথার নিচে হাত দিয়ে শুয়ে আছে চোখ বুঁজে। নলীনি ভাতের থালা নিয়ে ডেরা ঘরটায় ঢুকে। আঁচলের নীচ থেকে ভাতের থালাটা বের করে ঘরের কোনায় রেখে মাঝির পাশে গিয়ে দাঁড়ায় নলীনি। নিশ্চিত করেই বুঝতে পারে মাঝি ঘুমায়নি? ঘুমের ভান করে পড়ে আছে শুধু। এত চিন্তার ভীড়ে পুরুষ মানুষের চোখে ঘুম আসে না। জানে নলীনি।

নলীনি অপলক চোখে তাকিয়ে দেখে মাঝির মুখটাকে। সুঠাম দেহের লম্বা চওড়া এক পুরুষ রতন মাঝি। বিয়ের দিন নলীনিদের বাড়িতে মাঝিকে দেখে এক বাক্যে সবাই বলে গিয়েছিল : -বড় ভাগ্যি নিয়া না জম্মাইলে এমুন স্বামী কোন মাইয়া মাইনসের কপালে জুটে। নলীনির সমবয়সীরা কত কৌতুক করেছে নলীনির ভাগ্য নিয়ে। সেই ভাগ্যবতী মেয়ে নলীনি যখন প্রথম স্বামীর মুখ দেখেই ভয়ে কুকড়ে যায় তখন এ ভাগ্যের তলা কোথায় খুঁজে ফিরবে নলীনি বুঝতে পারেনি। এই মুখটাকে বিয়ের দিন থেকেই শুধু ভয়ই পেয়ে আসছে নলীনি। মাঝি ঘুমিয়ে থাকলেও এ মুখের দিকে তাকাতে সাহস হয়নি কখনো।

বিয়ের পরদিন থেকেই কাকডাকা ভোরে চুলায় ভাতের হাঁড়ি চাপিয়েছে নলীনি। গরম ভাত খেয়ে মাঝি নাও ভাসিয়েছে মেঘনায়। একটানা সারাদিন মেঘনার পানিতে ভেসে ভেসে সন্ধ্যায় ঘাটে নৌকা বেঁধে ডেরায় ফিরেছে। ভাতের শাঙ্কি সামনে না পেলেই নলীনির চুলের মুঠি ধরে হ্যাঁচকা টানে ফেলে দিয়েছে মেঝেতে । অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ তো আছেই। কখনো লাথি মারতেও দ্বিধা করেনি।

প্রথম প্রথম অসহ্য লাগত নলীনির। মাঝে মাঝেই মনে হতো চলে যাই। জীবনের প্রকৃত অর্থ কোথায় খুঁজে বের করি। তারপর একদিন অসহ্য হয়ে নলীনি সত্যি সত্যি বের হয়ে আসতে চেয়েছিল। শাড়িটাকে ছোট্ট একটা পুটলিতে বেঁধে বোগল চাপা করে আম গাছতলা পর্যন্ত চলেও এসেছিল।

মাঝি তখন মেঘনায় ভেসে বেড়াচ্ছে। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নলীনির ভাত রান্না করতে খানিক দেরী হয়েছিল। সেইজন্য মাঝি চুলার পাড় থেকে চুলের মুঠি ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে দুই চড় বসিয়ে দিয়েছিল নলীনির গালে। বাঘের মত গজড়ে উঠে বলেছিল : -শুয়রের বাচ্চা, দুইডা ভাত রানতি পারসনা থাহস কেন? চইলা যাইতে পারস না। বলেই গামছাটাকে কাঁধে ফেলে হন করে বের যায় মাঝি। নলীনির চুলার ভাত চুলায়ই থাকে। সেদিন আর মিয়াদের বাড়িও যায়নি নলীনি।

মাঝি চলে গেলে ভাতের পাতিল উপুর করে দাওয়ায় এসে বসে। কতক্ষণ যে বসেছিল খেয়াল নেই। এক সময় উঠে গিয়ে সত্যি সত্যি চলে যাবার জন্য তৈরী হয়। পুটলিটা বোগল চাপা করে আমতলা পর্যন্ত আসে। তারপর আর পারেনি সামনে এগোতে। রুক্ষ বদমেজাজের মাঝি এই অত্যাচারের ভেতর দিয়েও কখন যে নলীনির বুকের ভেতরের অনেকটাই দখল করে নিয়েছে নলীনি তা নিজেও বুঝতে পারেনি। মাঝি সন্ধ্যায় ফিরে কি খাবে সে চিন্তা করে আর যাওয়া হয়নি। পুটলিটা বোগল চাপা করে আবার ডেরায় ফিরে আসে। তেল চিটচিটে বালিশটায় মাথা রেখে একপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে চৌকিটার উপর।

নলীনি বসে চৌকিটার এক ধারে মাঝির পাশে। মাঝির রু মুখটার দিকে তাকিয়ে বড় অদ্ভুত মায়া লাগে। মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যবধানে কোথায় গেল মাঝির সেই রুতা। এখানে এখন প্রতিনিয়তই বিষন্নতা এসে বাসা বেঁধে থাকে। সেই বিষন্নতার আড়ালে রতন মাঝির মুখটা বড়ই করুণ দেখায়। অপলক চোখে নলীনি মাঝির মুখটাকে দেখে। খুব ইচ্ছে করে নলীনির মাঝির কপালে মিষ্টি করে একটা চুমু খেতে। মাঝির সমস্ত মুখটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে। ইচ্ছে করে মাঝির বুকে মাথা রেখে মাঝির কষ্টের ভার হালকা করতে। মাঝিকে জড়িয়ে ধরে তার পাশে শুয়ে থাকতে। কিন্তু সাহস হয়না। আস্তে আস্তে ডাকে : -আপনি হাছাই ঘুমাইয়া আছেন? মাঝি চোখ মেলে তাকায়।

-আপনের পাশে বইয়া আছি বুঝতে পারছেন?

-হ। পারছি।

-তয় ঘুমের ভান কইরা আছেন কেন? প্রশ্ন শুনে মাঝি উঠে বসে।

-আমারে তুই অহনো ভয় পাস বৌ?

-পাই।

-আমারে তুই আর ভয় পাইস না। আমি আর তর সাথে কোন সময় রাগ করমুনা। আমি চোখ বন্ধ কইরা কি ভাবতাছিলাম জানস?

-কি?

-ভাবতাছিলাম, একমাত্র বড় কোন কষ্টই পারে মাইনসেরে মাইনসের কাছাকাছি আনতে।

মাঝির কথা এত ভাল লাগে নলীনির। বলে : -উঠেন। উইঠ্যা হাত মুখ ধুইয়্যা খাইয়ালন।

মাঝি উঠে বাইরে যায়। নলীনি চৌকি থেকে পাটি নামিয়ে মেঝেতে বিছিয়ে তাতে ভাত বেড়ে দেয়। রতন গ্লাস বের করে পানি দেয়। পিতলের এই গ্লাসটি মাঝির দাদার ছিল। মাঝি বাইরে থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসে পাটিতে বসে ভাত খেতে। নলীনি হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে স্বামীকে। মাঝি বলে : -তুইঅ খাইয়্যা ল।

-মিঞা বৌ আমারে পেট ভইরা খাওয়াইয়া দিছে।

-তাইতে কি। আবার খা।

নলীনির খুব ইচ্ছে করে বড়লোকদের মত স্বামী স্ত্রী একসাথে বসে ভাত খেতে। মিয়াদের বাড়িতে একদিন টিভিতে দেখেছে নলীনি খাবার টেবিলে বসে স্বামী স্ত্রী কি সুন্দর করে গল্প করেছে আর খাচ্ছে। তারপর থেকেই মাঝির পাশে বসে খেতে বড় লোভ নলীনির। খুব ইচ্ছে কওে নলীনির মাঝির পাশে বসে খেতে। কিন্তু তাতে হয়তো মাঝির পেট ভরবে না তাই আর খাওয়া হয় না। মাঝি খায়। নলীনি তৃপ্তির চোখে দেখে। হাসিব মিয়ার কথাগুলো মাঝিকে বলতে নিয়েও বলেনা নলীনি। বলতে ইচ্ছে হয়না। লোকটাকে সহ্য করতে পারেনা নলীনি। কেমন কুৎসিত চোখ মেলে তাকায় শুধু। নলীনি বলে : -এমনে মনমরা হইয়া বইসা থাকলে শরীর খারাপ করতো পারে। মাঝি আর্তশ্বাস ফেলে।

শানকিতে হাত ধুতে ধুতে বলে : -কি করমু তাইতো বুইজ্যা পাইতাছি না।

-অন্যের নৌকায় ভাড়া খাটেন। হারু মাঝির দুইডা নৌকা। কইলেইতো একটা দিবো।

মাঝি করুণ চোখ তুলে নলীনির দিকে তাকায়। নলীনি সে চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারে অন্যের নৌকায় ভাড়া খাটতে মাঝির বড় সংকোচ।

নলীনি ম্লান হাসে। বলে : -হারু মাঝি আমাগো আপন মানুষ। তার নৌকা আমাগো নৌকার মাঝে অত তফাৎ কি?

-হ। ভাবতাছি তাই করমু। হারু মাঝিও একবার কইছিল এই কথা। ডেরার ভেতর কুপি জ্বালিয়ে চৌকিটার উপর বসে থাকে নলীনি। মাঝিও। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঝে মাঝে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। যখন তখন কাঁদতে পারে আকাশ।

-তুই দরজার ঝাপটা লাগাইয়া দে আমি হারু মাঝির ঘরতনে ঘুইরা আহি। বলে রতন মাঝি দড়ি থেকে গামছাটা টেনে কাঁধের একপাশে ফেলে অন্ধকারের ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে যায় হারুমাঝির দাওয়ায়। ডাকে : -হারু মাঝি ঘরে আছনি।

-কেডা?

-আমি। রতন মাঝি।

-রতন মাঝি। খাড়াও। খাইতে বইছি। শেষ কইরা আই। কুপি জ্বালিয়ে মেঝেতে চাটাই বিছিয়ে হারু মাঝি খেতে বসেছে। তার একপাশে চার বছরের ছেলে রহিম। শাঙ্কিতে ভাত নিয়ে নিজে নিজে খেতে চেষ্টা করছে। চারপাশে ভাত ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। বৌ কথার ফাঁকে ফাঁকে ছেলেকে ভুলিয়ে মুখে লোকমা তুলে দিচ্ছে। ফাঁকে ফাঁকে নিজেও খাচ্ছে একই শাঙ্কিতে। মাঝির অন্য পাশে দুই বছরের মেয়ে রিমা হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

দাাওয়ায় দাঁড়িয়ে খোলা দরজা দিয়ে তাকিয়ে দেখে রতন মাঝি। বড় অদ্ভুত লাগে। ভাবে : সুখের কোন নিক্তির মাপ নাই। যার যা আছে তা দিয়াই সুখী হওয়া যায়। চাইলেই সুখী হওয়া যায়। আইজ পাঁচটা বছর শেষ হইতে চলল বিয়া করছি, কই আমাগর ঘরেত কোন ছাওয়াল আইল না। হারু মাঝি আমার ছয়মাস পরে বিয়া কইরা কি সুন্দর বউ বাচ্চা লইয়া সংসার করতাছে।

-কি সুন্দর ফুট ফুইট্যা দুইডা ছাওয়াল। তাছাড়া এতটা দিন বিয়া করছি আমি এই রহম চিন্তাও তো মাথায় আসে নাই কহনো। কেন মনে আসে নাই? বুকের ভেতর চিনচিন করে একটা ব্যথা জেগে উঠে রতন মাঝির। দীর্ঘ একটা আর্তশ্বাস ফেলে অন্ধকারের ভেতর দিয়ে আবার হেঁটে আসে নিজের ডেরার দিকে। হারু মাঝির সাথে যে আলাপ করতে এসেছিল তা আর হয় না। হারু মাঝি তড়িঘড়ি করে খেয়ে বাইরে আসে। ডাকে :

-রতন মাঝি। ও রতন মাঝি। কোন সাড়া শব্দ নেই। হারু মাঝির ডাক রতন মাঝির কানে গিয়ে পৌঁছুলেও তা উপলব্ধির ভেতরে প্রবেশ করে না। অন্ধকারের সাথে একাত্ম হয়ে রতন মাঝি আনমনা হয়ে হেঁটে চলে নিজের ডেরার দিকে।

হারু মাঝি আবার ডাকে : -রতন মাঝি চইলা গেলা নাকি? কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে হারু মাঝি আবার ডেরায় ঢুকে যায়। বৌ শাঙ্কিতে পানি নিয়ে ছেলের হাত মুখ ধুইয়ে দরজা দিয়ে পানিটা ঢিল মেরে বাইরে ফেলে। তারপর খাওয়ার সরঞ্জামগুলো গুছিয়ে রাখে ঘরের কোনায় কাঠ দিয়ে তৈরী মাচার উপর। হারু মাঝিকে ঘরে ফিরে আসতে দেখে বলে :

-রতন মাঝি চইলা গেল?

-ডাকলাম। জবাব তো দিল না। মনে অয় চইলা গেছে।

-রতন মাঝির এতবড় সর্বনাশ মাঝিরে এক্কেবারে বদলাইয়া দিয়া গেছে।

-হ। এক্কেবারে মাটির মানুষ হইয়া গেছে রতন মাঝি।

-আসলে মাইনসের জীবন কোন সময় কোনদিকে মোড় নেয় কওন যায় না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হারু মাঝির বৌ। বলে :

-ঠিক অই কইসছ বৌ। রতন মাঝিরে দেইখ্যা জীবনের কাছে অনেক কিছু শিখনের আছে। বড় কোন সর্বনাশ খারাপ মাইনসেরে ভালা করে আবার বড় কোন সর্বনাশ ভালা মাইনসেরে খারাপ করে।

হারু মাঝির বৌ মেঝে থেকে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েকে কোলে নিয়ে মাঝিকে বলে চাটাইটা চৌকিতে বিছিয়ে দিতে। হারু মাঝি মেঝে থেকে চাটাই উঠিয়ে চৌকিতে বিছিয়ে দেয়। বৌ পাতাল কোলে করে মেয়েকে একপাশে শুইয়ে দেয়। তারপর কুপি নিভিয়ে নিজেরাও শুয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত হয়। নলীনি কুপি জ্বালিয়ে বসেই থাকে। দরজা বন্ধ করার কথাও মনে হয়নি। রতন মাঝি গিয়ে বসে নলীনির পাশে।

-এত তারাতারি ফিরা আইলেন যে? হারু মাঝি ঘরে নাই?

-আছে।

-তাইলে?

-ভালা লাগতাছে না। তাই চইলা আইলাম। এমন করুণভাবে কথাটা বলে মাঝি নলীনির বুকের ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়। নলীনি চোখ তুলে তাকায় মাঝির মুখের দিকে। মাঝি অন্ধকারের মধ্যে বাইরে তাকিয়ে থাকে খোলা দরজা দিয়ে। সেই মুখে বিষন্নতার করুণ প্রলেপ। নলীনি কোন কথা খুঁজে পায় না। মাঝিও অনেকণ কিছু বলেনা। চোখ নামিয়ে নলীনিও তাকায় বাইরে অন্ধকারের দিকে। অনেকণ পর মাঝিই প্রথম কথা বলে :

-বৌ, চলনা নদীর পারে গিয়া বসি।

-চলেন। দরজার ঝাপ টেনে দিয়ে মাঝির সাথে অন্ধকারের মাঝে নেমে আসে নলীনি। ঘুটঘুটে অন্ধকার পৃথিবীটাকে কোলাকুলি করে আছে। এর মাঝে কোন কিছুর ভেদ-বিভেদ-বৈষম্য দেখার উপায় নেই। আকাশে মেঘেরা খেলা করছে। তার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝেই দু’একটা তারা উঁকি মেরে আবার হারিয়ে যাচ্ছে মেঘেদের আড়ালে। মাঝির পাশাপাশি হেঁটে নলীনি গিয়ে দাঁড়ায় মেঘনার পাড়ে।

সামনে মেঘনার নীরব ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। দূরে বহুদূরে পানির উপর ছোট ছোট আলো ভেসে বেড়াচ্ছে। জেলেরা নদীতে জাল ফেলে নৌকার ছইয়ের ভেতর আলো জ্বেলে বসে থেকে পাহারা দিচ্ছে। পাছে কোন লঞ্চ, স্টীমার বা কোন ইঞ্জিনের নৌকা এসে সে জাল ছিড়ে রেখে যায় সেই ভয়ে। ওদের এই হাড় ভাঙ্গা কষ্টকে দূর থেকে বড় অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে নদীর উপর এখানে সেখানে জোনাকি পোকারা দৌড়ে দৌড়ে খেলা করছে।

মাঝি বসে মেঘনার ঘাটে। পাশে নলীনিও বসে। মোহগ্রস্তের মত মাঝি ডাকে :

-বৌ।

-হু।

-তুই কোন ছাওয়ালের স্বপ্ন দেহসনা বৌ? অন্ধকারের মাঝে ভয়ংকর করুণ এক আর্তশ্বাস ফেলে নলীনি। আস্তে আস্তে বলে :

-এতদিন দেহি নাই। যে দিন আপনের সর্বনাশ হইলো, যেদিন আমি আপনের সত্যিকার বউ হইলাম, সেইদিন থেইক্যা দেহি।

-এতদিন দেহস নাই কেন?

-কি হইত দেখলে?

-এতদিনে আমাগ ছাওয়াল বড় হইত। তরে মা ডাকত, আমারে বাবা ডাকত।

-তা হয়ত ডাকত। কিন্তু সে ছাওয়াল তো আমাগর ভালবাসার ছাওয়াল হইত না। সে ছাওয়াল বড় হইয়া মাইনস্যেরে ভালবাসতে শিখত না। মারে ধইরা পিটাইতো। বৌরে ধইরা পিটাইতো।

বলে নলীনি একটু থামে। তারপর আবার বলে :

-অহন চাই। অহন হাছাই চাই। অহন আমাগ যে ছাওয়াল জন্ম নিব হে আমাগো ভালবাসার ছাওয়াল হইয়া জন্ম নিব। হে ছাওয়াল বড় হইয়া মাইনস্যেরে ভালবাসতে শিখবো। দেইখ্যেন আপনে, হে ছাওয়াল বড় হইয়া সত্যি মাইনস্যেরে ভালবাসতে শিখবো।

অন্ধকারে নলীনির মুখটা দেখা যায় না। তবু গভীর আবেগে মাঝি বৌ-এর মুখটা দেখতে চেষ্টা করে। ভাবে : এত ভালা একটা বৌরে এতদিন কেন এত কষ্ট দিলাম আমি। তাইলে আমিওকি আমার বাবা মার ভালবাসার সন্তান নই।

নলীনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মাঝি অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই ঘুমাতে পারছেনা। মাঝি অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই ঘুমাতে পারছেনা। মাথার নিচে হাত দিয়ে উপরের দিকে মুখ করে লম্বা হয়ে শুয়ে আছে। বুকের ভেতর ঘুরে ফিরে একটা কথাই বার বার উচ্চারিত হয়। আবার সে কথা বুকের ভেতরেই দ্বিগুণ আওয়াজ তুলে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে :

আমিও কি তাইলে আমার বাবা মার ভালবাসার সন্তান নই? মাকে খুব একটা মনে পড়ে না রতন মাঝির। রতন মাঝির বয়স যখন পাঁচ তখন তার মা মারা যায়। মার কি হয়েছিল জানেনা রতন মাঝি, তবে বড় হয়ে নানাজনের মুখে শুনেছে মার পেটে যখন দ্বিতীয় সন্তান ছিল তখন একদিন কি কারণে মাকে ঘরের মেঝেতে ফেলে অনেক পিটায় তার বাবা। পেটের মধ্যে লাত্থি মারে। সেই থেকে যে মা অসুস্থ হলো তারপর একদিন মরা বাচ্চা জন্ম দিয়ে মা নিজেও হারিয়ে গেল চিরতরে।

মা মারা যাবার চল্লিশদিন পার না হতেই রতন মাঝির বাবা আবার বিয়ে করেছিল। বিয়ের দু’মাস না পেরোতেই বাবার অত্যাচারে সে বউ পালিয়ে বাপের বাড়ি সেই যে চলে গিয়েছে আর ফিরে আসেনি। আর বাবা! বাবার মুখটাকে মনে হলে আজও ভয়ে বুক কাঁপে রতন মাঝির। তার অত্যাচারে এক বৌ মরেছে আরেক বৌ পালিয়ে জীবন বাঁচিয়েছে। এরপর আর বিয়ে করেনি রতন মাঝির বাবা।  দশ বছরের ছেলে রতনকে খেলা থেকে তুলে এনে হাতে গুঁজে দিয়েছিল বৈঠা। চোখ লাল করে বলেছিল :

-মাঝির ছাওয়াল মাঝিই হইব। এইডাই নিয়ম।

রতন মাঝির বয়স যখন আঠার তখন এক সন্ধ্যা বেলায় হারু মাঝির ঘরের পেছনের বড় তেতুল গাছটার নিচে অনেক মানুষের জটলা জমেছিল। রতন মাঝিও দৌড়ে গিয়েছিল সেখানে। গাছে একটা লাশ ঝুলছে। চারদিকে অন্ধকার ক্রমেই গাড়ো হয়ে আসছে। তাই কার লাশ এটা কেউ বুঝতে পারেনি। গাছ থেকে লাশ নিচে নামানো হলে দেখা গিয়েছিল করিম মাঝির লাশ। কি দুঃখে রতন মাঝির বাবা শেষ পর্যন্ত গাছে ঝুলে জীবনের শান্তি খুঁজে পেতে চেয়েছিল তা আজ পর্যন্তও জানে না কেউ।

গতকালের মত নলীনি আজও মিয়াদের বাড়ি যাবার আগে উঠান বাড়ি ঘর ঝাড়– দেয়। শিকায় ঝুলানো পাতিল থেকে চিরা-মুরি আর গুর বের করে শাঙ্কিতে রাখে। তারপর রতন মাঝির পাশে এসে বসে। বলে :

-উঠেন। উইঠ্যা চাইরডা খাইয়া বাইরে যান। পুরুষ মানুষ ঘরে বইসা থাকলে শইল এমনেই খারাপ হইয়া যায়।

-তর খুব কষ্ট হইতাছে বউ।

-মন ভালা থাকলে শক্ত কামেও শরীরে কষ্ট লাগে না।

-ভাবতাছি আইজ হারু মাঝির একটা নাও ভাসামু। এমনে ঘরে বইয়া থাকলে পেট চলবো কেমনে। গরীব মাইনসের মন খারাপ হইলেও তা হালকা করবার উপায় নাই।

-আপনে অত ভাইবেন না। আল্লায় খাওয়াইব। আল্লায় কপালে রিজিক না লেখলে মাইনসের সাধ্যি কি শত চেষ্টায়ও রিজিক জুটায়।

নলীনি চলে গেলে রতন মাঝি উঠে বসে। হাত মুখ ধুয়ে মেঝেতে পিঁরি টেনে বসে চিরা মুড়ি খায়। তারপর কাঁধে গামছাটা ফেলে দরজার ঝাপ টেনে দিয়ে উঠোনে গিয়ে দাঁড়ায়। বিষন্ন দুটি পা টেনে টেনে এগিয়ে যায় নৌকা ঘাটায়। ঘাটে একটা নৌকাও বাঁধা নেই। একে একে সব ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘনার বুকে। শুধু রতন মাঝির তলা ঝাঝড়া নৌকাটাই প্রতিদিনকার মত আজও ভেসে আছে শরীরের প্রায় সবটুকু পানির নিচে ডুবিয়ে দিয়ে ক্ষীণ অস্তিত্ব নিয়ে।

রতন মাঝি পার বেয়ে নেমে আসে নিজের তলা ঝাঝড়া নৌকাটার আছে। নৌকার গায়ে হাতরে হাতরে বাচ্চা ছেলের মত ডুকরে ডুকরে কাঁদে আর বলে :

-খোদা, কি এমন পাপ আমি করছি যার লাইগ্যা এত বড় শাস্তি তুমি দিলা আমারে। কইয়া দেও খোদা। কি এমুন পাপ আমি করছিলাম। আর তো কারো নৌকার তলা কেউ ঝাঝড়া কইরা দিয়া যায় নাই। আমার নৌকার তলা কেন দিল? কে দিল? কোন পাপে দিল? অহন খামু কি? বাঁচমু কেমনে? কইয়া দেও খোদা বাঁচমু কেমনে? স্নেহভরা কোমল ডাকে পেছন ফিরে তাকায় রতন মাঝি। ঠিক গতকালের জায়গাটায় রুশনী দাঁড়িয়ে।

রিটা আশরাফের ধারাবাহিক উপন্যাস ‘মধ্য রাতের নদী’-এর পঞ্চম পর্ব আসছে... চোখ রাখুন সোনালীনিউজ-এ

কথাসাহিত্যিক ড. রিটা আশরাফ

নরসিংদী জেলার সদর থানার চিনিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই লেখালেখিতে হাতেখড়ি। নরসিংদী সরকারি কলেজে পড়ার সময় স্বরচিত কথাসাহিত্য প্রতিযোগিতায় বহুবার প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। কথাসাহিত্য রচনায় প্রথম পুরস্কার লাভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকেও।

ড. রিটা আশরাফ বর্তমানে বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এইউবি) বাঙলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং একই সঙ্গে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন থেকেই।

তাঁরই সম্পাদনায় নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য পত্রিকা। পেয়েছেন ভারতের বিশ্ববঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন সম্মাননা (২০১৪), ভিন্নমাত্রা সাহিত্য সম্মাননা (২০১০), গঙ্গা-গোবিন্দ সাহিত্য সম্মাননা (২০১৫), এশিয়ান ইউনিভার্সিটি সহিত্য পত্রিকা সম্মাননাসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার ও সন্মাননা।

রিটা আশরাফের প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে বালুচরে বসতি (উপন্যাস), নৈবেদ্যর নারী (উপন্যাস), বিবর্ণ স্বাধীনতা (উপন্যাস), একটু ভুলের অনুভূতি (উপন্যাস), তুতুলের খড়গোশ শিকার (শিশুতোষ গল্প), মামদোভূতের পুত (শিশুতোষ গল্প সংকলন) বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনলো যাঁরা (গবেষণা), নজরুল সাহিত্যে তৎকালীন বিশ্ব (গবেষণা), নজরুলের কুহেলিকা : একটি সার্বিক পর্যালোচনা (গবেষণা), নজরুল সাহিত্যে উপমা (গবেষণা) ইত্যাদি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!