• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে অটিস্টিক শিশুশিক্ষা


বিশেষ প্রতিনিধি এপ্রিল ৩, ২০১৮, ১০:৪৭ পিএম
মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে অটিস্টিক শিশুশিক্ষা

ঢাকা : অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যয় নিম্নবিত্ত তো দূরের কথা, মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে। চিকিৎসার নামে ব্যাঙের ছাতার মতো সারা দেশে গড়ে উঠেছে অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ শিক্ষার স্কুল। চলছে রমরমা ব্যবসা। সেবার নামে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের বিশেষ শিক্ষার সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন।

ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, সারা দেশে অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ শিক্ষার জন্য রয়েছে মাত্র ৬২টি স্কুল। এগুলোর শিক্ষকমণ্ডলী সরকারি বেতন-ভাতাভুক্ত।  ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, সুইড বাংলাদেশ পরিচালিত ৫০টি, কল্যাণী ইনক্লুসিভ স্কুলের ৭টি এবং সেনাবাহিনী পরিচালিত প্রয়াস নামের একটিসহ অটিস্টিক শিশুদের জন্য মোট ৬২টি অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অটিজমকেন্দ্রিক প্রায় হাজারখানেক বিশেষ স্কুল গড়ে উঠেছে। এগুলোর সিংহভাগ সরকারের অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। শুধু মোহাম্মদপুর ও শ্যামলীতেই খোঁজ পাওয়া গেছে এ ধরনের ১১টি বিশেষ স্কুলের। এসব স্কুল সমাজসেবা অধিদফতর থেকে এনজিও কার্যক্রমের নিবন্ধন নিয়ে চলছে।

অথচ ২০০৯ সালে প্রণীত প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী, এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সমাজসেবা অধিদফতর এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে নিবন্ধন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের কোনো দফতর থেকে অনুমোদন না নিয়েই সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ স্কুল পরিচালনা করছে। ‘দীপ্ত সীমান্ত’ নামের এই বিশেষ স্কুলটি সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের দফতরে। 

এসব স্কুল থেকে সেবা নেওয়া অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলোতে সন্তানকে ভর্তি করতে এককালীন ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি জমা দিতে হচ্ছে। মাসিক বেতন সর্বনিম্ন ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা। অথচ অধিকাংশ স্কুলে প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও থেরাপির ব্যবস্থা নেই। ভবনের একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় অনেক অভিভাবকই সন্তানকে ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ বিস্তর।  

গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আলী আজম টিটু ও শাহিনা পারভিন দম্পতির একমাত্র পুত্র ফাহিমের অটিজম লক্ষণগুলো ধরা পড়ে ২ বছর বয়সে। প্রথমে বিভিন্ন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সন্তানের সুস্থতার জন্য চেষ্টা চালাতে থাকেন তারা। কিন্তু তাতে কোনো ফল না পেয়ে মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশেষ স্কুলে ভর্তি করেন ফাহিমকে। কিন্তু তার চিকিৎসার জন্য যেসব সেবা ও সুযোগ-সুবিধা স্কুলটিতে থাকার কথা সেগুলো পাচ্ছিলেন না এ দম্পতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, বিজিবি পরিচালিত দীপ্ত সীমান্ত স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করলেও তাদের ছেলেকে ডাকা হয়নি। পরবর্তীতে তাকে জানানো হয়, অভিভাবকের পেশা চাকরিজীবী হওয়ায় শিক্ষার খরচ চালাতে পারবে না, এই ধারণা থেকে তাদের ডাকা হয়নি। শুধুমাত্র ব্যবসায়ী অভিভাবকদের প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

দীপ্ত সীমান্ত স্কুলের তথ্য প্রদারকারী কর্মকর্তা এনকে মিজানের কাছে অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। স্কুলের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদা মিন আরা বলেন, সরকারের বেতন-ভাতার অধীন পরিচালিত বিশেষ স্কুলের বাইরে দেশে যেসব স্কুল পরিচালিত হচ্ছে তার কোনোটারই অনুমোদন নেই। অনেকে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে এনজিওর অনুমোদন নিয়ে এসব স্কুল পরিচালনা করছে।  

তিনি জানান, ‘গত বছর ১৮ নভেম্বর এসব স্কুলের ব্যাপারে আমরা একটি গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করি। যেসব স্কুল সরকারের অনুমোদন না নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে সেগুলোকে অনুমোদন নিয়ে পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ বিজিবি পরিচালিত দীপ্ত সীমান্ত বিশেষ স্কুলটির ব্যাপারেও ফাউন্ডেশনের কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!