• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মনোনয়ন দৌড়ে অর্ধশতাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৭, ২০১৭, ০১:১০ এএম
মনোনয়ন দৌড়ে অর্ধশতাধিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

ঢাকা : হঠাৎ করেই রাজনীতিতে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। আওয়ামী সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে লক্ষ্মীপুর, মাগুরা ও ফরিদপুরের জনসভায় নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। শেখ হাসিনার এই ভোট চাওয়ায় রাজনীতিতে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কাজ করতে বলেছেন। জাতীয় সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিও নানা হিসাব কষতে শুরু করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ আসনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ আওয়ামী লীগ নেতারা মনোনয়ন প্রত্যাশায় নির্বাচনী আসনে সময় দিচ্ছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবার সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের নেতারাও সোচ্চার হয়েছেন। জনপ্রিয়তা ও মনোনয়ন প্রত্যাশার দৌড়ে সংশ্লিষ্ট আসনে বর্তমান এমপিদের চাইতেও কেউ কেউ এগিয়ে আছেন। এবার মনোনয়ন প্রত্যাশার দৌড়ে নতুন সামিল রয়েছেন ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক সাবেক নেতা।

রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন স্তরে খোঁজখবর নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, অনেক আসনে সিটিং এমপিদের কার্যক্রমের চাইতে সাবেক ছাত্রনেতারা এগিয়ে আছেন। বর্তমান এমপিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারাও মাঠে নেমেছেন। দৌড়ে পিছিয়ে নেই নারীপ্রার্থীরাও। তারাও সরাসরি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত হতে কাজ করছেন।

সাবেক ছাত্রনেতা ও নারীপ্রার্থীদের বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন বলেও বোর্ডের একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন।

দলীয় হাইকমান্ডের কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায় এক বছর আগে থেকে প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। ক্লিন ইমেজের সাবেক ছাত্রনেতা ও নারীদের মনোনয়নের ব্যাপারে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনারও আগ্রহ বেশ।

মন্ত্রী ও এমপি হিসেবে গত কয়েক বছরে যারা বিতর্কিত হয়েছেন, সেসব জায়গায় সাবেক ছাত্রনেতাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ইতিমধ্যে গণভবনে দলীয় ফোরামের এক বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন, এমপি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রার্থী সাড়ে তিন হাজার জনের তালিকা তার কাছে আছে। নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয় ছাড়া কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না।

সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়নের প্রত্যাশা করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। তিনি নেত্রকোনো-৩ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। এ লক্ষ্যে নিজ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজও করে যাচ্ছেন তিনি।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম শরীয়তপুর-২ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জনগণের সেবা করার জন্য ছাত্রবেলা থেকে রাজনীতি শুরু করি। নিজের এলাকার জনগণের সেবা করতে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৪ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাইফুজ্জামান শিখর। মাগুরা-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন তিনি। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি জামালপুর থেকে মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এএইচএম মাসুদ দুলাল নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন গাইবান্ধা-৫, সাখাওয়াত হোসেন শফিক বগুড়া-৬, শাহে আলম বরিশাল-২, অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বরিশাল-১, শফি আহমেদ নেত্রকোনা-৪, অজয়কর খোকন কিশোরগঞ্জ-৫, পনিরুজ্জামান তরুণ ঢাকা-১, সাবেক ছাত্রনেতা মনিরুজ্জামান মনির ঝালকাঠি-১, শেখ সোহেল রানা টিপু রাজবাড়ী-১, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সাকিব বাদশা পিরোজপুর-১, সাবেক ছাত্রনেতা ও মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেন পিরোজপুর-৩, জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন ফেনী-৩, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু হুসাইন বিপু দিনাজপুর-১, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন চট্টগ্রাম-১৫, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন পটুয়াখালী-১, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী চাঁদপুর-৩, কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবীর কাউসার নরসিংদী-৫, ড. আওলাদ হোসেন ঢাকা-৪, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাউসার, যুবলীগের ইসমাঈল হোসেন সম্রাট ঢাকা-৮, যুবলীগের মঈনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ঢাকা-১৫, জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন ফেনী-৩ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

এছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, সাবেক ছাত্রনেতা গোলাম সারোয়ার কবিরও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শফিক এ বিষয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত, বিনয়ী ও সৎ- এমন তরুণ নেতৃত্ব খুঁজছেন। যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এবং শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে। আমি সে ধরনের একজন কর্মী হতে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছি। ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়েই আমার শুরু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। এলাকার মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা তখন থেকেই লালন করি। এবার মনোনয়নের প্রত্যাশা করছি। নেত্রী যেভাবে চাইবেন আমি সেভাবেই কাজ করব।’

পিরোজপুর-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ সাকিব বাদশা বলেন, ‘ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশায় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। এলাকার জনগণের সঙ্গে কথা বলছি, মতবিনিময় করছি।’

যুব মহিলা লীগের নেত্রী ও আওয়ামী লীগের নারী সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী নড়াইল-১, যুব মহিলা লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন ঢাকা-১৪, নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা চাঁদপুর-৫, সানজিদা খানম ঢাকা-৪ আসন থেকে এবারও মনোনয়ন চাইবেন।

সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য মাহজাবিন খালেদ জামালপুর থেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা চাঁদপুর- ৫, সংরক্ষিত আসনের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীও লহ্মীপুর থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হতে কাজ করছেন বলে জানা গছে।

যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কোহেলি কুদ্দুস মুক্তি পিতা আব্দুল কুদ্দুসের আসন নাটোর-৪ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতি করা থেকেই এলাকার মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। এখনও করছি। আগামীতেও করে যাব। কারণ রাজনীতি করি মানুষের জন্য। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে বাবাই আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে মুখ্য ভূমিকা রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা তাকে সহযোগিতা করব। এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক বছর আগে থেকে কাজ শুরু করেছেন। বর্তমান এমপিদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে আগামী নির্বাচনের ফলাফলে কী প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়েও তিনি পর্যালোচনা করছেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওই সদস্য বলেন, বিতর্কিত আসনগুলোতে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও ক্লিন ইমেজের সাবেক ছাত্রনেতাদেরই প্রাধান্য দেয়া হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!