• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাটির ঘরে মানবেতর জীবনযাপন


মো. আমিনুল ইসলাম, ঝালকাঠি মে ২৩, ২০১৮, ১১:৪৪ এএম
মাটির ঘরে মানবেতর জীবনযাপন

ঝালকাঠি: ৬০ বছর পূর্বে মাটির দেয়াল এবং উপরে টিন ও পাকা মাটির চারা দিয়ে তৈরী করা ঘরে বসবাস করছে ৬ সদস্যের হিন্দু পরিবার। মাটির দেয়ালে বর্ষার পানি লেগে খসে খসে পড়ছে। উপরে টিন ও পাকা মাটির চারার ছাউনির অবস্থাও অনেক নাজুক। যে কোন সময় ধ্বসে পড়তে পারে ঘরটি। এ ঘরে স্ত্রী, ৩ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সত্তোর্ধ বয়সী নিরঞ্জন চক্রবর্তি নিকুঞ্জ।

তার বড় পুত্র বিমল চক্রবর্তির বয়স ৩৬ বছর। সবার ছোট মেয়ে। মেয়ে আলোরানি চক্রবর্তির বয়সও ২৪ বছর। বসবাসের করুণ অবস্থার কারণে কারোরই বিয়ে হয়নি। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও অস্বচ্ছল। শ্রমজীবীর কাজ করে স্বল্প আয়ে স্বপরিবারে অর্ধাহারে জীবন যাপন করছে। নলছিটি উপজেলার মগড় ইউনিয়নের দক্ষিণ মগড় গ্রামের দৃশ্য এটি। এত কষ্ট ও মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে স্থানীয় একটি ভূমিদস্যুর কবলে পড়ে। এর থেকে পরিত্রান পেতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ উর্ধ্বতন বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন নিরঞ্জন চক্রবর্তির বড় ছেলে বিমল চক্রবর্তি। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, শত বছর পূর্ব থেকে পৈত্রিক জমিতে বসবাস করছে নিরঞ্জনের পরিবার।

প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম (ইউনুস মাঝি) প্রায় ৩৬ বছর ধরে একাধিক জাল দলিল তৈরী করে উচ্ছেদের পায়তারা করছে। ওই দলিলের মধ্যে আমাদের বসতভিটাও রয়েছে। মাটির ঘরে একটু সংস্কার করে বসবাসের উপযোগী করার চেষ্টা করলেই আমাদের উপর হামলা চালায়। তাদের বিপক্ষে কেউ কথা বললেই বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা শালিস বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত দিলে তাও উপেক্ষা করে।

গত ৬ মে ভাড়াটিয়া লোক দিয়ে আবেদনকারী বিমল চক্রবর্তিকে মগড় ইউনিয়নের আমিরাবাদ বাজার থেকে তুলে নেয়ার চেষ্টা চালায়। স্থানীয়দের সহায়তায় আক্রমনকারীদের হাত থেকে জীবনে রক্ষা পায়। এবিষয়ে নলছিটি থানায় বিমল চক্রবর্তি সাধারন ডায়েরীর আবেদন করলে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ৮ মে সাধারন ডায়েরী (জিডি নং-২৭৫) লিপিদ্ধ করে থানা কর্তৃপক্ষ। জিডির প্রেক্ষিতে নলছিটি থানার ওসি মোঃ শাখাওয়াত হোসেন সোমবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এসময় তার সাথে ছিলেন নলছিটি থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল হালিম তালুকদার, মগড় ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন, প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ জসিম হাওলাদার।

আবেদনকারী বিমল চক্রবর্তি বলেন, এ সম্পত্তির মালিক ছিলেন আমার দাদা। সে মারা যাবার পরে ওয়ারিশ সূত্রে মালিক হন আমার বাবা নিরঞ্জন চক্রবর্তি। পার্শ¦বর্তি ভূমিদস্যু ইউনুস মাঝি ৪টি জাল দলিল তৈরী করে। এর প্রতিবাদ করলে আমার বাবাকে ডাকাতি মামলার আসামী করে ইউনুস মাঝি। এ দলিলের দাবিতে তারা আদালতে একাধিক মামলা করলে মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন আছে। স্থানীয়ভাবে কয়েকবার শালিশ মিমাংসায় বসলে যে সিদ্ধান্ত হয় আমরা নিরুপায় বিধায় তা মেনে নেই। কিন্তু ওই শালিশী তিনি উপেক্ষা করেই যাচ্ছেন। শান্তিপূর্ণভাবে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানান বিমল চক্রবর্তি।

নিরঞ্জন চক্রবর্তি নিকুঞ্জ বলেন, আমাদের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া অনেক সহায় সম্পত্তি। যার দাম আছে কোটি টাকার উপরে। জাল দলিল করে ইউনুস মাঝি দখল করতে চায়। আমারে ঘর-দরজা উঠাইতে দেয় না। গাছ লাগাতে ও কাটতেও দেয় না। একটি ডাল কাটলেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দেয় এবং আমাদের মারতে আসে। আমারে ডাকাতি, মন্দির পোড়া, ঘর পোড়া  কেস (মামলায়) দিয়ে নিঃশ্ব করে দিছে। আমার জোর শক্তি কিছুই নাই।

নিরঞ্জন চক্রবর্তি নিকুঞ্জ’র স্ত্রী আরতিরানি চক্রবর্তি জানান, দাদা শ্বশুরের সম্পত্তিসহ সব জায়গার জাল দলিল করে। এখন আমাদের ঘর ঠিক করতে দেয় না, গাছের ডালও কাটতে দেয় না। আমার স্বামীকে ডাকাতি মামলায় দেয়ায় অভাবের কারণে ছোট ছেলে রতন চক্রবর্তিকে মানুষের বাসায় পালতে (লালন-পালন) করতে দিছি। মাইয়া-পোলা (ছেলে-মেয়ে) সব বড় বড় হইছে। কেউরে (কাউকে) বিয়ে দিতে পারি নাই। মেয়েটা বড় হয়েছে, ঘরের এই অবস্থার কারণে কোন প্রস্তাবও আসছে না বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

স্থানীয় স্বপন জানান, আমরা নিকুঞ্জ পরিবারের অসহায়ত্ব দেখে পাশে দাড়াই। এজন্য বেশ কয়েকবছর পূর্বে ইউনুস মাঝি আমাকে গুম করে ২ দিন রাখে। আমার স্বজনরা নলছিটি ও বরিশাল থানায় জিডি করলে ২ দিন পরে বরিশাল থানায় চোর বলে হস্তান্তর করে।

কাঠ মিস্ত্রি শাহজাহান জানান, গত বছর নিরঞ্জন চক্রবর্তি আমাকে নিয়ে আসছিলো ঘরের চালা ঠিক করাতে। ইউনুস মাঝি তার লোকজন নিয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও মারধর করে।

মগড় ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মোঃ জসিম হাওলাদার জানান, দক্ষিণ মগড় গ্রামে দুটি মাত্র হিন্দু পরিবার আছে। এর মধ্যে নিরঞ্জন চক্রবর্তির পরিবারটি খুবই অসহায়। তারা স্বপরিবারে আত্মহত্যার চেষ্টাও করছিলো। স্থানীয়দের কারণে পরিবারটি বেঁচে যায়। নিরঞ্জন চক্রবর্তির উপর অনৈতিক নির্যাতন দেখে পুরো এলাকাবাসী ইউনুস মাঝির উপরে ক্ষিপ্ত রয়েছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহীন জানান, আমরা এ নিয়ে অনেকবার শালিশীতে বসেছি। আমার পূর্ববর্তি চেয়ারম্যানগনও শালিশী করেছে। ইউনুস মাঝির খামখেয়ালীর কারণে এ পর্যন্ত কোন সমাধান হয়নি।

এ ব্যাপারে ইউনুস মাঝির বক্তব্য জানতে তার ঘরে গেলে তাকে বাসায় পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী এ ব্যাপারে কোন কথা বলতে রাজি হননি। মোবাইল নম্বর চাইলেও তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!