• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাদকসেবী ও কারবারিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু


বিশেষ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৮, ০৯:৪৭ পিএম
মাদকসেবী ও কারবারিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু

ঢাকা: জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তাৎক্ষণিক এক বিরল নির্দেশে মাদকসেবী ও কারবারিদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই অংশ হিসেবে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) রাজধানীতে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।

অভিযানে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি মাদকসেবীদের শনাক্ত করে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এরই মধ্যে শাহজাহানপুরে ১৯ ও পল্টনে ১১ জন মাদকাসক্তকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাউন্সেলিং করানো হয়েছে। 

এ ছাড়া মাদকের অভিশাপ থেকে রাজধানীকে রক্ষা করতে সমন্বিত কর্মসূচি নিতে পুলিশের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা মাদকসেবীদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থার কৌশল নির্ধারণ করবেন। 

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাদকের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালানোর কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকেই অভিযান চালাব।’ পয়েন্ট অব অর্ডারে কোনো সংসদ সদস্যের বক্তব্যের পর সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে এমন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঘটনা বিরল। প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পরপরই বুধবার মধ্যরাত থেকে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। 

শুরু হয় ব্যতিক্রমী অভিযান। যেখানে মাদকসক্তদের পুনর্বাসন করে সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল সমকালকে এসব তথ্য জানান। 

পুলিশ বলছে, প্রথম রাতে চিহ্নিত ৩০ মাদকসেবীর স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর বা সমাজের প্রতিষ্ঠিত কোনো ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া হবে। এ ছাড়া পুলিশ একটি ফান্ড গঠন ও সংগ্রহের মধ্য দিয়ে মাদকসেবীদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করছে। 

পর্যায়ক্রমে রাজধানীর অন্যান্য থানা এলাকায়ও এ ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে। বিশেষ করে সড়ক বিভাজক, বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল, মাজার, পার্কে অবস্থান করে মাদক সেবনকারী, নেশাগ্রস্তদের উদ্ধার করে নতুন জীবনে ফিরিয়ে দিতে চায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, পথশিশুসহ অন্য মাদকসক্তদের জন্য স্থায়ীভাবে আবাস ও খাবারের সংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। আইনের আওতায় এনে নয় কাউন্সেলিং ও প্রণোদনার ব্যবস্থা করে তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় আনা হবে। একই সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চলবে জোরদার অভিযান। মাদকসেবীদের নতুন জীবনে ফিরিয়ে আনতে পুলিশ বড় পরিসরে কাজ শুরু করেছে। 

দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে ১০ দিনের মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে। অভিযানের প্রথম পর্বে বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকায় মাদকসহ ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এক কেজি ১১৪ গ্রাম হেরোইন, সাত হাজার ৪৯১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, এক কেজি ২২০ গ্রাম গাঁজা ও ২০ পিস ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়। 

ডিএমপির তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত তিন বছরে রাজধানীতে মাদক-সংক্রান্ত মামলা হয়েছে ৩১ হাজার ৬৩১টি। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ১৩ হাজার ৬৩৮টি, ২০১৬ সালে নয় হাজার ৬২৮ ও ২০১৫ সালে আট হাজার ৩৬৫টি। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে নবনিযুক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হয়েছে। পুলিশ জঙ্গিবাদের মতোই মাদক নির্মূলে কাজ করে যাবে। 

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ছোট ছোট শিশু রাস্তায় মাদক নেয়। গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় লাইসেন্সবিহীন নাইট ক্লাবে রাতে পার্টি হয়। সেখানে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, সমাজ এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে? এ সময় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা জানতে চান, রাজধানীর কোন কোন এলাকায় এসব কাজ হয়। 

পরে ফিরোজ রশীদ বলেন, গোলাপ শাহ মাজার, হাইকোর্ট, কমলাপুর, নয়াপল্টন ও গুলিস্তান পার্কে গেলে এ মুহূর্তে অন্তত ৫০০ পাওয়া যাবে। এর পর প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য যে কথা বললেন, আমি নোট নিচ্ছি। আজকেই অভিযান চালাব। কারণ, আমরা চাই না এ ঘটনা ঘটুক।

সোনালীনিউজ/জেএ/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!