• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
২৫ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস

মাদকের আখড়ায় ফলের চারা রোপণ পুলিশের


যশোর প্রতিনিধি জুলাই ৩০, ২০১৭, ০৩:৪২ পিএম
মাদকের আখড়ায় ফলের চারা রোপণ পুলিশের

যশোর: জেলায় মাদক বিরোধী ১০০ দিনের ক্র্যাশ প্রোগ্রামে ২৫ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস করেছে পুলিশ। চিহ্নিত মাদক আখড়া ধ্বংস করে দিয়ে সেখানে ফলের চারা রোপণ করা হয়েছে।

পুলিশের এই মাদক বিরোধী অভিযানে একাত্বতা প্রকাশ করেছে জেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। তবে মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যশোর জেলা পুলিশ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছে। মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ। এসব অভিযানে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ পুলিশকে সহায়োতা করেছে।

পুলিশ সুপার বলেন, মাদককে কেন্দ্র করে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত হতো। মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে এ ধরনের অপরাধ অনেক কমে এসেছে। তিনি বলেন, ১০০ দিনের ক্র্যাশ প্রোগ্রামে প্রায় ২৫ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস করা হয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলের অভিমত যশোরের মতো সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যদি একযোগে অভিযান পরিচালনা হতো এবং মাদকের উৎসমুখ বন্ধ না যেত তাহলে সামগ্রিক দিক থেকে বহুলাংশে সফলতা আসতো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার কারণে অনেক সাধারণ মানুষকে হয়রানীর শিকার হতে হয়েছে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত গডফাদাররা ওইসব মানুষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে।

তুহিন নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আমরা কি অপরাধ করেছি? মাদক স্পট উচ্ছেদ করে আমরা আজ একদিকে মিথ্যা মামলার আসামী, মাদক ব্যবসায়ীরা পিবিআই পুলিশ দিয়ে আমাদের হয়রানী করছে এবং চার্জশীট দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে হয়রানীর শিকার হচ্ছি।

যশোর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ক্র্যাশ প্রোগ্রামে চিহ্নিত ছয়টি মাদক আস্তানা গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে রোপণ করা হয়েছে ফলের চারা। যশোরের ইতিহাসে এটি প্রথম। যশোরে ১০০ দিনের ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শেষে আরও একশ দিনের ‘এসড্রাইভ’ ও ডোর টু ডোর’ প্রোগ্রাম চলছে। মাদক বিরুধী অভিযানের সময় পাঁচ মাদক ব্যবসায়অ বন্ধুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে ৯০০ মাদক ব্যবসায়ী। ১৪ জন মোস্ট ওয়ান্ডেট মাদক ব্যবসায়ীর ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে যশোর জেলা পুলিশ।

পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে যশোর জেলা পুলিশ জেলাকে মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত করার শপথ নিয়েছি। ইতোমধ্যে অনেকটা সফলতা পেয়েছি। সবাই মিলে পুলিশকে সাহায্য করলে দ্রুত যশোর জেলাকে মাদক মুক্ত করা সম্ভব।

মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যশোর জেলা পুলিশের সামাজিক আন্দোলন-
যশোর জেলা হতে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে যশোর জেলা পুলিশ “জিরো টলারেন্স” নীতি অবলম্বন করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজসহ সর্বসাধারণের অংশগ্রহণে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলে। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে সামাজিক আন্দোলনে জনসাধারণ স্বতস্ফূর্তভাবে মিছিল, মিটিং, সভা, সমাবেশ ও র‌্যালীতে অংশগ্রহণ করে।

২০১৬ সালের ২০ জুন যশোর শহরের টাউন হল ময়দানে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রিরোধী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে খুলনা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি জনাব এসএম মনির উজ জামান জনতার হাতে বাঁশি ও লাঠি তুলে দিয়ে পাড়া, মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এছাড়াও, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জনসাধারণের কাছে বাঁশি লাঠি দিয়ে “ভিলেজ ডিফেন্স পার্টি” গঠন করা হয়।

যশোর জেলা পুলিশের মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সামাজিক আন্দোলনে জন সাধারণ কর্তৃক মাদক সম্রাটদের মাদক স্পট উচ্ছেদের ঘটনায় নিরীহ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের-

বহুপূর্ব হতে যশোর শহরের চাঁচড়া রেলষ্টেশন এলাকাটি মাদকের আখড়া হিসেবে পরিচিতি। যশোর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার মাদক ব্যবসায়ীরা চাঁচড়া রেলগেট এলাকা হতে গোপনে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করত। একাধিক মামলার আসামী কুখ্যাত মাদক সম্রাট তারেক, তালেব, মাদক সমরাজ্ঞী বেবী, রুমা ও জায়েদা চাঁচড়া এলাকার মাদক ব্যাবসা করত।

চাঁচড়া রেলগেট এলাকার মাদকসেবী/নেশাখোরদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে এলাকার জনসাধারণ অতিষ্ট হয়ে পড়ে। মাদক সম্রাট তারেক, তালেব, মাদক সমরাজ্ঞী বেবী, রুমা ও জায়েদাকে পুলিশ একাধিকবার গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলেও তারা জামিনে এসে পুনরায় মাদক ব্যবসা চালায়।

এক পর্যায়ে যশোর জেলা পুলিশের উদ্যোগে মাদক বিরোধী সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টি হওয়ায় চাঁচড়া এলাকার শান্তিপ্রিয় জনগন ও কমিউনিটি পুলিশের সদস্যরা মাদক সম্রাট তারেক, তালেব, মাদক সম্রাজ্ঞী বেবী, রুমা ও জায়েদার মাদকের স্পট ও আখড়া উচ্ছেদ করে দেয়।

পুলিশ সুপার, যশোর উল্লিখিত মাদক সম্রাট দের মাদকের ডিপোকে মাদকমুক্ত ঘোষণা করে তথায় স্থানীয় জনসাধারণ ও কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্যদের নিয়ে ফলজ বৃক্ষ রোপণ করেন। এ বিষয়ে মাদক সমরাজ্ঞী জায়েদা, বেবী সহ অন্যান্য মাদক  সম্রাট রা এলাকার নিরীহ মানুষকে আসামী করে বিজ্ঞ আদালতে মিথ্যা ও হয়রানীমূলক ৯টি পিটিশন মামলা দায়ের করে। বিজ্ঞ আদালত পিবিআই, যশোরকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।

যশোর পিবিআই কর্তৃক তদন্ত ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি-
পুলিশ সুপার, যশোরের উদ্যোগে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে পত্রিকা সম্পাদক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে ২০ জুলাই যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ গোলটেবিল বৈঠকে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বিরোধী আলোচনা ও কর্মকৌশল গ্রহণ করা হয়। যশোর জেলা পুলিশের মাদক বিরোধী সামাজিক আন্দোলনে সাধারণ জনতা যশোরের কুখ্যাত মাদক সম্রাটদের মাদকের ডিপো ও বস্তি উচ্ছেদ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মর্মে আলোচকরা উল্লেখ করেন। মাদক স্পটকে মাদকমুক্ত এলাকা ঘোষণা করে ফলজ বৃক্ষ রোপন করায় মানুষ এখন শান্তিতে আছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/আকন

Wordbridge School
Link copied!