• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
‘ভিশন-২০৩০’

মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৮, ২০১৭, ০১:৪৭ পিএম
মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বিএনপি

ঢাকা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের জন্য সরকার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে যেমন ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তেমনি বিএনপিও ভোটের হিসাব মাথায় রেখে আলেম-ওলামাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘ভিশন-২০৩০’ রূপকল্পে দেশের মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে বিএনপি।

তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের দাবি, বর্তমান সরকার আগেই আঁচ করতে পেরেছে, তাদের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সম্ভব হবে না। তাই সরকার নানাভাবে বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠীকে তুষ্ট রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেও ‘ভিশন-২০৩০’ শিরোনামের রূপকল্পে ‘শিক্ষা ও মানব সম্পদ’ বিভাগে দেশের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে বিএনপি। ভিশনের ৮৪তম ধারায় দলটির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশের মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হবে। তাদের কারিকুলামে পেশাভিত্তিক ও বৃত্তিমূলক বিভিন্ন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই সংস্কারের আওতায় ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও আইটি এবং ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। যাতে মাদ্রাসা শিক্ষিতরা উৎপাদনশীল কাজ, চাকরি, অন্যান্য পেশা ও উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে না পড়ে। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, বিএনপি সর্বশেষ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকাকালীন কওমী মাদ্রাসার ‘দাওরায়ে হাদিস’ সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান ঘোষণা করে।

সরকারের তরফ থেকে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর প্রসঙ্গ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা শেখ হাসিনা রাজনৈতিক স্বার্থে করছেন। তারা যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেন তার সঙ্গে এসব একেবারেই সাংঘর্ষিক। এর আগে একটি ইসলামি দলের সঙ্গে তারা স্পর্শকাতর কিছু চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু সামান্যতম বাস্তবায়িত হয়নি। ওই সময়ও তারা রাজনৈতিক স্বার্থে চুক্তি করেছিলেন, এখনো তাই করছেন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তারা হেন কাজ নেই, যা তারা করেন না। জনগণের আস্থা হারিয়ে আওয়ামী লীগ এখন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে তুষ্ট রেখে যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন করতে চাচ্ছে।

একই প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র অপর এক নেতা বলেন, আলেমদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিশেষ করে শেখ হাসিনার অতীত আচরণ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর ক্রমাগত আঘাতের কথা দেশবাসী নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি।

এদিকে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রসঙ্গক্রমে বলেন, পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন ও কওমি শিক্ষার স্বীকৃতিকে শুভলক্ষণ বলে মনে করি আমি। তিনি বলেন, সরকার বাস্তবতা বুঝে এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। এসবের পেছনে ভোটের রাজনীতি তো অবশ্যই আছে। এরপর আমরা সরকারের এসব পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই। এখন আমরা দেখব, এর বাস্তবায়ন করে কি না।

একই প্রসঙ্গে ইসলামী ঐকজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, যে কাজটি করলে জনগণের আশা-আকাঙক্ষা প্রতিফলন হয়, সে কাজটিই করা উচিত সরকারের। আমরা মনে করি, সরকার সে কাজটিই করে যাচ্ছে। এটাই যুক্তিযুক্ত। উল্লেখ্য, প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐকজোট। দলটি গত বছরের জানুয়ারিতে বিএনপির জোট থেকে বেরিয়ে আসে।

প্রসঙ্গত, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভূতিকে প্রভাবিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এই অভিযোগ করেন।

সেসময় বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভূতিকে এক্সপ্লয়েট করার জন্য শেখ হাসিনা ভারত সফরের আগে আলেম সম্মেলন করেন। ফিরে এসে আবার হেফাজতে ইসলাম প্রভাবিত কওমি মাদ্রাসার ওলামায়ে কেরামদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলেমদের সঙ্গে তার অতীত আচরণ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর ক্রমাগত আঘাতের কথা দেশবাসী নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। এখন তিনি নিজেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন।

খালেদা জিয়া বলেন, অতীতেও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার লক্ষ্যে দেশে ইসলামী শরিয়তি আইন চালুর জন্য একই ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। এখন কওমি মাদ্রাসা সনদকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলে ধোঁকা দিচ্ছেন। কওমি শিক্ষার উন্নয়নে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারের অবদান তুলে ধরে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার দায়িত্বে থাকার সময় মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন করা হয়েছিল।

খালেদা জিয়া বলেন, ২০০৬ সালে কওমি মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতি আমাদের সরকার দিয়েছিল। সেটা গেজেট নোটিফিকেশনও হয়েছিল। পরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা কার্যকর হয়। গত ১১ বছরে মাদ্রাসা-বিরোধী সরকারগুলোর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বিষয়টি আর এগোতে পারেনি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!