• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাদরাসাছাত্রকে বলাৎকার করল জাপা নেতা!


শরীয়তপুর প্রতিনিধি আগস্ট ১৩, ২০১৮, ০৫:১৬ পিএম
মাদরাসাছাত্রকে বলাৎকার করল জাপা নেতা!

প্রতীকী ছবি

শরীয়তপুর: শরীয়তপুর পৌরসভার বাঘিয়া এলাকার মাহমুদিয়া হাফেজি মাদরাসার এক ছাত্রকে (১০) বলাৎকার করার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টির এক নেতার বিরুদ্ধে।

গত শনিবার (১১ আগষ্ট) রাতে মাদরাসা সংলগ্ন নিজ বাড়িতে নিয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব বদরুল আলম নান্নু মুন্সী (৫৫) হাত-পা বেঁধে ওই ছাত্রকে বলাৎকার করে। এ সময় ওই ছাত্র মারাত্মক আহত হয়। রোববার (১২ আগস্ট) রাতে অসুস্থ ছাত্রকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে নান্নু মুন্সী পলাতক রয়েছে। পালং থানার পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদরাসার হুজুর ও অভিযুক্তের ভাই চুন্নু মুন্সীকে থানায় নিয়ে আসে।

নির্যাতিত ছাত্রের পারিবারিক সূত্র জানায়, সদর উপজেলার গ্রামচিকন্দী গ্রামের ওই ছাত্রের বাবা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নড়িয়া উপজেলার চান্দনী গ্রামের রফিজদ্দি মাদবরের বাড়ি থেকে ব্যবসা করে। ছেলেকে কোরআনে হাফেজ করতে শরীয়তপুর পৌরসভার বাঘিয়া এলাকায় মাহমুদিয়া হাফেজি মাদরাসায় ভর্তি করে। মাদরাসার হুজুর হাফেজ ইয়াছিন তিনদিন ধরে বাঘিয়া গ্রামের মৃত মুন্সী মাহমুদ আলীর ছেলে লম্পট নান্নু মুন্সীর পরিবারের লোকজন বাড়িতে না থাকায় তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য ১০ বছর বয়সী ছাত্রকে তার বাসায় পাঠায়।

শনিবার (১১ আগস্ট) রাতে নান্নু মুন্সী ফয়সালের হাত-পা বেঁধে জোরপূর্বক ওই ছাত্রকে পায়ুপথ দিয়ে ধর্ষণ (বলাৎকার) করে। এতে ওই ছাত্রের পায়ুপথ ফেটে গিয়ে রক্তাক্ত হয়। বিষয়টি মাদরাসার হুজুর ও লম্পট নান্নু মুন্সী ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করে।

রোববার (১২ আগস্ট) বিকালে ওই ছাত্রের বাবা-মা বিষয়টি জানতে পারে। পরবর্তীতে রাত ৯টার দিকে আহত ছাত্রকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সোমবার (১৩ আগস্ট) সকালে এ বিষয়ে থানায় যাবেন বলে জানিয়েছে নির্যাতিত ছাত্রের বাবা।

আহত ছাত্র বলেন, তিনদিন ধরে ইয়াছিন হুজুরে আমাকে নান্নু মুন্সীর বাসায় পাঠায়। প্রতিদিনই লম্পট নান্নু মুন্সী আমাকে ডিস্টার্ব করত। শনিবার (১১ আগস্ট) রাতে নান্নু মুন্সী আমার হাত-পা বেঁধে পায়ুপথ দিয়ে ধর্ষণ করে। সে কান্নাকাটি ও চিৎকার করেও রক্ষা পায়নি। এতে আমার পায়ুপথ রক্তাক্ত হয়ে যায়। আমি সকালে মাদরাসায় এসে ঘটনা হুজুরকে জানাই। তখন হুজুর বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করে। পরবর্তীতে নান্নু মুন্সীকে ডেকে ইয়াছিন হুজুর মীমাংসার চেষ্টা করে।

নির্যাতিত ছাত্রের বাবা বলেন, আমার নাবালক ছেলের সঙ্গে খুব খারাপ কাজ করেছে। ইয়াছিন হুজুর ও লম্পট নান্নু মুন্সী দুজনেই দায়ী। আমি আইনের কাছে বিচার চাই। একজন ছাত্র হুজুরের কাছে নিরাপদ না থাকলে আর কোথায় যাবে।

মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ ইয়াছিন বলেন, তিনদিন পূর্বে নান্নু মুন্সীর পরিবার ঢাকায় গেছে বলে সে জানায়। বাড়িতে একা থাকতে ভয়পায় জানিয়ে প্রথমে মাদরাসার সহকারী শিক্ষককে রাতে বাসায় থাকার প্রস্তাব দেয়। আবাসিক মাদরাসা হিসেবে ছাত্রদের দুইকক্ষ আমরা দুইজনে দেখাশোনা করি। পরে তিনি দুইজন ছাত্র পাঠাতে বলে। তিনি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতার ছেলে হওয়ায় নির্যাতিতসহ দুইজন ছাত্রকে বাসায় পাঠাই।

পরে ওই ছাত্রের কাছ থেকে ঘটনা জানার পর নান্নু মুন্সীকে জিজ্ঞেস করি। সে জানায় হুজুর বিষয়টি ভুল হয়ে গেছে। আপনি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে মাদরাসার সভাপতি সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস ছামাদ বেপারী ও ওই ছাত্রের মা-বাবাকে জানাই। এর মধ্যে ওই ছাত্র আমাকে না বলে বাড়ি চলে যায়।

মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস ছামাদ বেপারী বলেন, আমি কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। তবে বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক।

জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমি শুনে নিজেই মর্মাহত। কোনো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। এটা মারাত্মক অন্যায়।

পালং মডেল থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অভিযুক্তকে কব্জায় নেয়ার চেষ্টা চলছে। ভিকটিমের পক্ষে অভিযোগ পেলে মামলা নেয়া হবে।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!