• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মানসিক সমস্যায় ভুগছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা


কক্সবাজার প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭, ০৯:৪৬ এএম
মানসিক সমস্যায় ভুগছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

কক্সবাজার: ‘আমার সমান মেয়ে, যারা দেখতে সুন্দর তারা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। পরে গুলি করে মেরেছে।’ বলছিলেন এক রোহিঙ্গা শিশু। নিজ দেশে নির্যাতনের শিকার, সাথে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনেকেই ট্রমায় আক্রান্ত।

স্থানীয় যারা স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করছেন তারা শারীরিক সুস্থতার দিকে প্রাধান্য দিলেও, এসব মানুষের মানসিক সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন শরণার্থী বিশেষজ্ঞরা।

সেনাদের নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা আরেক রোহিঙ্গা বলেন, সেনারা রাতে গ্রামগুলোতে যায়, মেয়েদের নিয়ে নির্যাতন করে। পরে মেরে ফেলে। তার পরিবারের সবাই আসতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পারি নি, দুই জন মারা গেছে’।

শিশু তোহায়া দেখেছে তার খেলার সাথীদের ওপর নির্যাতন আর হত্যা। মোহাম্মদ আলী দেখেছে নিজের সামনে ঘরের দুই সদস্যের মৃত্যু আর গ্রামের মেয়েদের ওপর মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতন। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে লাশের স্তূপ পেরিয়ে যখন বাংলাদেশে তখনও নিজ দেশে এমন অমানবিক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা প্রত্যেক শরণার্থীর।

‘আমার ছেলে-মেয়ে, মা-বাবাকে মেরে ফেলেছে। আমি একা বেঁচে আছি।’ বলছিলেন এক রোহিঙ্গা।

নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে আরেক জন বলেন, ‘আমাদের মা বোনদের মেরে পুড়িয়ে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে। একসাথে সব নারীদের একসাথে রেখে জবাই করে সেনারা। ছেলেদের প্রকাশ্যে গুলি করছে।’

শরণার্থী শিবরে ঘুরে সেখানকার স্কুলের এক শিশুর কাছে জানতে চাওয়া হলো, বড় হয়ে পড়াশুনা শেষে সে কি করতে চায়। তার উত্তর ছিলো, বড় হয়ে সে যুদ্ধ করবে। সে বলছিলো, ‘যারা রোহিঙ্গাদের মারছে তাদের হামলা করবো।’

এদিকে শরণার্থী শিবিরগুলোতে যেখানে ছোট ছোট পরিসরে স্বাস্থ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে সেখানে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ খুবই কম।

এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর বলেন, ‘আমাদের প্রতিটা টিমে একজন করে মেডিকেল আফিসার আছেন ও একজন সাইক্লোজিস্ট আছেন। আমরা গত ৪ তারিখ থেকে এটা নিয়মিত করছি।’

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে এসব শরণার্থীদের।

মানসিক স্বাস্থ্য প্রসঙ্গে রামরু’র পরিচালক ড. সি আর আবরার বলেন, এই যে সহিংসতার মধ্যে শিশুরা বেড়ে ওঠলে তারা আর শিশু থাকে না। শিশু হবার জন্য ও বেড়ে ওঠার জন্য যে ইতিবাচক পরিবেশ দিকগুলো থাকে সেটি থেকে সে বঞ্চিত। এদের যে মানসিক কাউন্সিলিং দরকার সেটি না হওয়ার কারণে তাদের সারা জীবন ভুগতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শরণার্থীদের কিছুটা স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে দাতা সংস্থাগুলোকে ও বাংলাদেশ সরকারকে বড় পরিসরে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!