• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘মান্না মারা না গেলে শাকিবকে এমন অবস্থায় পেতে সময় লাগত’


বিনোদন প্রতিবেদক জুন ৯, ২০১৮, ০২:৫২ পিএম
‘মান্না মারা না গেলে শাকিবকে এমন অবস্থায় পেতে সময় লাগত’

মান্না- শাকিব খান- শাহ আলম কিরণ

ঢাকা: কেন যেন মনে হয় মান্না সাহেব মারা না গেলে আজকের শাকিবকে এমন অবস্থায় পেতে আরো সময় লাগত বলছিলেন পরিচালক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিব শাহ আলম কিরণ।

তিনি বলেন, ‘মেগাস্টার উজ্বল থেকে আজকের শাকিব খান। ৮২-২০১৮। এই ৩৬ বছরে মাঝে জসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন, অমিত হাসান, মান্না, সালমান শাহকে নিয়ে কাজ করেছি। সব মিলিয়ে ফুল প্যাকেজ মনে হয়েছে সালমান শাহকে। এত অল্প সময়ে সব শ্রেণির দর্শকের কাছে পৌঁছে যাওয়ার মত কাউকে পাইনি।’ 

‘নিয়তির খেলা’ থেকে মাটির ঠিকানা’ পর্যন্ত নিজের ৩৬ বছরের নির্মাতা জীবনের বিশ্লেষণ করে ‘শেষ ঠিকানা’ নির্মাতা শাহ আলম কিরণ বলেন, সালমান ছিল টোটাল ফিল্ম প্যাকেজ। ‘রিমেক সুজন সখি’, ‘বিচার হবে’, ‘শেষ ঠিকানা’ করেছি সালমানের সঙ্গে। শেষ ঠিকানা করতে গিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। অমিতকে দিয়ে কাজ শেষ করেছিলাম গল্প সামান্য ঘুরিয়ে। বড় প্রয়োজন ছিল সালমানের আজকের ইন্ডাস্ট্রিতে। 

উজ্জ্বল সাহেব বিনিময় থেকে সব দর্শকের কাছে যেতে সময় লেগেছে। ইভেন মান্না সাহেবও অনেক সময় নিয়েছেন। কেন যেন মনে হয় মান্না সাহেব মারা না গেলে আজকের শাকিবকে এমন অবস্থায় পেতে আরো সময় লাগত। শুভ’র সম্ভাবনা ছিল। এখনও আছে। কিন্তু এখন প্রায়ই শুনতে পাই অনেক ক্ষেত্রেই তার ডমিনেটিং অ্যাটিচ্যুড। যেটা খুব স্বাস্থ্যকর নয়।’

চলচ্চিত্রের বর্তমান দ্বন্দ কিংবা অবস্থা সম্পর্কে পরিচালক সমিতির তিনবারের সাধারণ সম্পাদক এবং একবারের মহাসচিব শাহ আলম কিরণ বলেন,  আমিত্ব দিয়ে কিছুই চলেনা। পারিবারিক জীবনেও কিন্তু তাই। পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে কথা বলেই কিন্তু পরিবার চলে।

পরিচালক শাহ আলম কিরণ

কাউকে দোষারোপ করাটা খুব ভালো কিছু না। বরং আমি মনে করি বিপর্যস্ত সেসব সময়ে তারা এগিয়ে না আসলে এখন যেসব সিনেমা হলগুলো আছে সেগুলোও থাকতনা। চলচ্চিত্র শিল্পকে খুঁজে পাওয়া যেতনা। কারও কিছু ভুল থাকলে সেটা প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু অন্ধ বিরোধিতা ভালো নয়। আমাদের চলচ্চিত্রের সংকট এখন বহুমুখি। দর্শক এখন কেন আসেনা? নিজেদেরকেই ভাবতে হবে।

কিরণ বলেন, ‘তখনও কি ফিল্মে পলিটিক্স ছিলনা? খুব করেই ছিল। কিন্তু দিনে পলিটিক্স করে রাতে তারা একসঙ্গেই আড্ডা দিতেন। দুটো আড্ডা খুব বেশি ছিল। এটি রাজ্জাক সাহেবের বাসায় অন্যটি ঢাকা ক্লাবে। আর এখন এটা ভাবা বোকামী যে শাকিব খানের বাসায় অন্য নায়করা আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডাটা খুব উপকারী চলচ্চিত্রের জন্য। নন্দনের মত একটা আড্ডার স্পেস হতে পারে আগারগাঁওয়ের আর্কাইভ ভবন।’

‘বিচার হবে’ নির্মাতা বলেন, ‘অনেক সময় শুনি চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সরকারের ইচ্ছা নাই! কিন্তু এটা বলি কি করে? সরকারের কাছে গেলে তো বলে সব দিতে প্রস্তুত আছি। দিচ্ছিও। বরং আমার মনে হয়েছে সরকারের কাছ থেকে নেওয়ার যোগ্যতা থাকার মত লোক কোথায়? ৬২ কোটি টাকা হলের অনুদানের জন্য রেডি হয়েছে বলে জানি। আমি কমিটিতে নেই। হল মালিকদের তালিকা চাচ্ছে সরকার। সেটিই তো মনে হয় দিতে পারছেনা এখনও। এখানে আমার অভিমত কয়েকটি হলের জন্য টু-কে না কিনে বরং বেশ কয়েকটি সিনেমা হলে টু-কে প্রজেক্টর রেখে প্রায় টু-কের কাছাকাছি ই-সিনেমা ব্যবস্থায় উন্নীত করা উচিত। যা আমাদের সিনেমার জন্য ভালো হবে।’

শাহ আলম কিরণ বলেন, ‘প্রদর্শক সমিতি তথা হল মালিকদের একটা বড় অংশ জিম্মি হয়ে আছে বুকিং এজেন্টদের কাছে। বিশেষ করে ঢাকার বাইরের সিনেমা হলগুলোকে এত টাকা দিয়ে রেখেছে হল মালিকদের যে তাদের কাছে শুধু দলিলটাই আছে।’

প্রযোজক সমিতি না থাকাই কি সব সমস্যার গোড়া প্রশ্নে শাহ আলম কিরণ বলেন, ‘পুরোটা নয়। তবে অনেকটাই। সরকারের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করবে মূলত প্রডিউসার এবং এক্সিবিটর। পরিচালকের দায়িত্ব নির্মাণ এবং মার্কেট মনিটর এর। কিন্তু এখনতো অনেকটা উল্টো অবস্থা।’

‘পদ্মা নদীর মাঝি’ সিনেমার অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন গৌতম ঘোষ এর সঙ্গে। ‘মনের মানুষ’, ‘শঙ্খচিল’ এও কাজ করেছেন। ফিল্ম ফেস্টিভালগুলো আগে যেভাবে হত এখন সেভাবে হচ্ছেনা আফসোস করে কিরণ বলেন, ফিল্ম ফেডারেশনগুলোও এখন বিভক্ত। আর আমাদের কিছু কিছু নির্মাতা এফডিসিকেই সব কিছু মনে করে পড়ে থাকে। যেটা উচিত না। এফডিসিতে থেকে এফডিসির বাইরে তাকাতে হবে।

চলতি বছরে নতুন ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেবেন বলে জানান ‘একাত্তরের মা জননীর’ নির্মাতা। তাতে চমক থাকবে বলে জানান শাহ আলম কিরণ।

১৫০ এর মত সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাহ আলম কিরণ। কিন্তু এটি তার আগ্রহের জায়গা নয় বলে বিষয়টি নিয়ে আর কথা বাড়াননা কিরণ। ১৯৭১ সালে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী কিরণ মহানমুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন ২ নং সেক্টরে। নাখালপাড়ার সন্তান কিরণ যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে জড়িত হন সিনেমায়। সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়ার সহকারী হিসেবে দস্যুরাণী সিনেমায় কাজ করেন প্রথম ৭৩ সালে।

এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক শাহ আলম কিরণ নিজে ৩ ভাই ৩ বোনের মধ্যে সবার বড়। বাবা মফিজুর রহমান ভূঁইয়া ছিলেন শিক্ষক। শাহ আলম কিরণ এর  দুই সন্তানই এখন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। চার বছর বিরতি শেষে নতুন সিনেমার প্রস্তুতি আর পারিবারিক বলয়ে  কাটাচ্ছেন দিন।

সোনালীনিউজ/বিএইচ

Wordbridge School
Link copied!