• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাফ চেয়ে রেহাই পেলেন সেই সহকারী কমিশনার


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭, ০৬:৩৬ পিএম
মাফ চেয়ে রেহাই পেলেন সেই সহকারী কমিশনার

ঢাকা: কক্ষে বসা নিয়ে বাগিবতণ্ডার জেরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জ্যেষ্ঠ এক আইনজীবীকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় অনুতপ্ত ও ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন কুড়িগ্রামের ভুড়ুঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়।

আইনের অপব্যবহার করে সাজা দেয়ার ঘটনায় আদালত তাকে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘ভ্রাম্যমাণ আইনের ক্ষমতা অপব্যবহার করেছেন। ভষিষ্যতে যেন আইনের এধরনের অপব্যবহার না হয়।’

এর আগে বুধবার(২৭ ডিসেম্বর) বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের অবকাশকালীন হাই কোর্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে মৌখিকভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চান বিরোদা রানী। বৃহস্পতিবার(২৮ ডিসেম্বর) আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মামুন মাহবুব। ঘটনাটি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী সৈয়দ মহিবুল কবির ও আইনজীবী কাজী হেলাল উদ্দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও মামলাটির শুনানিকালে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না ভ্রাম্যমাণ আদালতের অপব্যাহার রোধে হাই কোর্টের নির্দেশনা চান। দুপুরে লিখিত বক্তব্য নিয়ে আদালতে হাজির হয়ে তা আদালতে দাখিল করেন ভুড়ুঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানীর পক্ষের আইনজীবী মামুন মাহবুব। আবেদনটি তিনি পড়ে শোনান।

আবেদনে বিরোদা রানী বলেছেন, ‘আমি ওই ঘটনার জন্য অনুততপ্ত। নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। ভবিষ্যতে আর এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।’ এসময় আদালত বলে, আপনি মোবাইল কোর্ট আইনের অপব্যবহার করেছেন। আপনি এ ঘটনার জন্য অনুততপ্ত? আপনি যে লিখেছেন তা কি বুঝে লিখেছেন?

তখন বিরোদা রানী রায় হ্যা সূচক জবাব দেন। এরপর আদালত বলে, আপনারা জনগণের করের টাকায় চলেন। একজন রিক্সা চালকও কর দেয়। সবার করের টাকায় চলেন আপনারা। মনে রাখবেন আপনারা জনগণের সেবক। পাবলিক অফিস টেকেল দেয়া(সামলানো) কঠিন কাজ। সমস্যা হতেই পারে। আমরাও আইনি কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন পরলে সিনিয়রদের কাছ থেকে পরামর্শ নেই। অনেক সময় অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেই।

আপনার উচিৎ ছিল সিনিয়রদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া। সিনিয়রদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ছোটো হওয়ার কিছু নেই। আদালত বলে, বাইরের লোক এসে তো আপনার উপর হামলা করেনি। নিরোদ বাহারী রায় একজন আইনজীবী। আপনি যে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন, তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বার কাউন্সিলে বলতে পারতেন। মন-মেজাজ কন্ট্রোল করতে হবে। আপনার আরও সংযত হওয়া উচিৎ ছিল। মনে রাখবেন এটা স্বাধীন দেশ। 

বিরোদা রানী রায়কে ক্ষমার বিষয়ে আদালত বলে, আপনার সার্ভিস রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে ২০১৬ সালে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। চাকরিতে আপনি একদম নতুন। আবেদনে আপনি নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। বয়েস, চাকরি এবং এই ঘটনায় অনুততপ্ত হওয়ার বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আপনার নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদনটি গ্রহণ করলাম। মনে রাখবেন ভিবিষ্যতে বড় হতে চাইলে আপনাকে এসব সহ্য করতে হবে।

প্রসঙ্গত, দিনাজপুরে এসি ল্যান্ডের কক্ষে বসা নিয়ে এক আইনজীবীকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভুড়ুঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়কে তলব করে গত ১৭ ডিসেম্বর আদেশ দেয় হাই কোর্ট। গত ১২ সকালে একটি নামজারির মামলায় শুনানি করতে কক্ষে বসা নিয়ে বাকতিণ্ডার জেরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আইনজীবী নিরোদ বাহারী রায়কে ৫০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক দিনের করাদণ্ড দেন ভুড়ুঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) বিরোদা রানী রায়।

পরে গত ১৪ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবর ১৭ ডিসেম্বর আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির ও কাজী হেলাল উদ্দিন। আদালত ঘটনাটি নজরে নিয়ে নিরোদ বাহারী রায়কে সাজা দেয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির পাশাপাশি ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে এসি ল্যান্ডকে তলব করে।

সেই তলবেই বিরোদা রানী  আদালতে হাজির হয়ে মৌখিকভাবে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেন এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চান। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ না করে বৃহস্পতিবার লিখিতভাবে আবেদন করতে বলেন। সে অনুযায়ী আবেদন করলে আদালত নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করে তাকে ক্ষমা করে দেয়। 

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!