• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মারজান মাস্টারমাইন্ড, সাদ্দাম সিরিয়াল খুনি


মেহেদী হাসান জানুয়ারি ৬, ২০১৭, ০৫:৫৩ পিএম
মারজান মাস্টারমাইন্ড, সাদ্দাম সিরিয়াল খুনি

ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ঢাকায় মারা গেলেন নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা নুরুল ইসলাম মারজান ও তার সহযোগী উত্তরবঙ্গ জেএমবি প্রধান সাদ্দাম হোসেন। গত ৫ জানুয়ারি দিনগত রাত ৩টার দিকে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।

মারজান গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। তাকে বহুদিন ধরে খুঁজছিল পুলিশ। আর সাদ্দাম উত্তরবঙ্গে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিসহ সারাদেশের বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত‌্যাকাণ্ডের হোতা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে তিনি ছদ্মবেশে থাকতেন। কখনও চঞ্চল, রাহুল, সবুজ আবার রবি নামে পরিচয় দিতেন। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় জেএমবির জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

ঘটনার সময় একজনের মাথায় ও বুকে গুলি বিদ্ধ হয়। আরেকজনের শুধু বুকে গুলি বিদ্ধ হয়। দুজনের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।

কে এই মারজান? 
ঢাকার গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড জঙ্গি মারজানের প্রকৃত নাম নুরুল ইসলাম। তার বয়স আনুমানিক ২২-২৩ বছর। পুলিশের তদন্তে গুলশান হামলায় তাকে ‘অপারেশন কমান্ডার’ হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

মারজানের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আফুরিয়ায়। বাবা নাজিম উদ্দিন ও মা সালমা খাতুনের ১০ সন্তানের মধ্যে মারজান চতুর্থ। গেল এক বছরের বেশি সময় ধরে তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন।

প্রতিবেশীদের দেয়া তথ্যমতে, হোসিয়ারি শ্রমিকের ছেলে হিসেবে মারজান আর্থিক অনটনের মধ্যেই বেড়ে ওঠেন। আফুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে পাবনা শহরের পুরাতন বাঁশবাজার আহলে হাদিস কওমি মাদরাসায় ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর পাবনা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল ও আলিম পাস করেন।

বাবা নিজাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বাড়ির সঙ্গে মারজানের যোগাযোগ ছিল। কিন্তু বছর খানেক আগে বিয়ে করার পর যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে কষ্টের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, খুব কষ্ট করে তাকে পড়াশুনা করাতাম। আলিম পাস করার পর সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। ভালো ছাত্র হওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়। আমি বলেছিলাম টাকা তো নেই, কী করে তোমারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াব। সে বলেছিল, কয়েক মাস চালালে আমি প্রাইভেট ঠিক করে নিব। ভর্তির প্রথম প্রথম ভালোই যোগাযোগ ছিল, বেশ কিছু দিন ধরে সে যোগাযোগ করত না। আমাদের ধারণা ছিল, বিয়ে করার কারণেই হয়ত আমাদের এখানে আসে না।

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আরবি বিভাগে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম মারজান। স্নাতকে পড়া অবস্থায় মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দেন। 

চবি উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় বর্ষের ষষ্ঠ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার পর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তৃতীয় বর্ষে পুনঃভর্তি না হওয়ায় নুরুল ইসলাম আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল না। গণমাধ্যমে মারজানকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তার সনদ ও ছবি দেখে তাকে নুরুল ইসলাম হিসেবে শনাক্ত করেছিলেন উপাচার্য।

নুরুল ইসলাম মারজানের সহপাঠীরা এখন আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়ছে। তিনি প্রথম বর্ষের সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় বর্ষে ১০টি বিষয়ের পরীক্ষার মধ্যে ছয়টিতে অংশ নিয়েছিলেন।

গেল বছরের পহেলা জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার ঘটনায় সন্ত্রাস সমন আইনে করা মামলাটির তদন্ত নামে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। হামলার প্রায় দেড় মাস পর এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ওই ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ মারজানের নাম ও ছবি প্রকাশ করেন। এর পর আফুরিয়া গ্রাম থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তার বাবা নিজাম উদ্দিনকে ধরে নিয়ে যায়।

কে এই সাদ্দাম
সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ছিলেন উত্তরবঙ্গের নব্য জেএমবির প্রধান। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট থানার চর বিদ্যানন্দ গ্রামে। বাবার নাম পাচু আলম ও মা জোবেদা খাতুন।

সাদ্দাম চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গি জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটির চার্জশিটভুক্ত আসামি তিনি। মামলাগুলো হলো, রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশিও কুনিও, রহমত আলী খাদেম, বাহাই রুহুল আমিন, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ মঠের প্রধান এবং কুড়িগ্রাম হোসেন আলী হত্যা মামলা। ওই পাঁচটি মামলা ছাড়াও গাইবান্ধার ডাক্তার দিপ্তী, সাঘাটের রাব্বি হত্যা, গোবিন্দগঞ্জের তরুণ দত্ত হত্যা, নীলফারীর কারবালার খাদেম হত্যা চেষ্টা ও দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের ডাক্তার বিরন্দ্র হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিও ছিলেন সাদ্দাম।

সাদ্দামের বাড়ি কুড়িগ্রামে জানা গেলেও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, তার বাড়ি গাইবান্ধায়।

সোনালীনিউজ/এমএন

Wordbridge School
Link copied!