• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিনী বলয় তছনছ করবেই উ. কোরিয়া!


শেখ আবু তালেব, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এপ্রিল ২৩, ২০১৭, ০৬:৩৪ পিএম
মার্কিনী বলয় তছনছ করবেই উ. কোরিয়া!

ঢাকা: উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের। আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে মোটেও সহ্য করতে পারে না দেশটি। তাছাড়া দু’দেশের বিরুদ্ধেই একে অপরের বিরুদ্ধে গুপ্তচর বৃত্তিতে অর্থঢালার অভিযোগ রয়েছে। পরস্পরের গুপ্তচরগুলোকে তারা চোখে চোখে রাখতে চায়।

অস্ত্র, পুলিশ, সেনাবাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে দু’দেশের স্নায়ুযুদ্ধের ইতিহাস অনেক পুরনো। সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ও মজুদ নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চরম বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যা আরেক মহাযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে বিশ্বকে। 

আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞরা এটিকে দেখছেন দেশ দুটির নিজেদের শক্তি প্রদর্শন আর যাচাই করার মাধ্যম হিসেবে। উত্তর কোরিয়া হয়ত দেখাতে চাচ্ছে, তাদের অস্ত্রের সক্ষমতা কতটুকু। আর কী পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সামর্থ্য রয়েছে তাদের।যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের হুমকির বিপরীতে আদৌ টিকতে পারবে কি-না। 

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়টিকে বিশ্লেষকরা দেখছেন অন্যভাবে। এতদিন মুসলিম প্রধান দেশে যুদ্ধ বাঁধানো ও নেতৃত্ব দিয়ে আসেছ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবার সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লাগলে যেতা যায় কি-না। মার্কিন প্রশাসন হয়ত, এ যুদ্ধ জাতিসংঘের অধীনে করতে চায়। তাহলে অস্ত্র বিক্রি করে অর্থ রোজগার করা যাবে। আর কোরিয়াকেও শায়েস্তা করতে পারবে।

ট্রাম্প অবশ্য ক্ষমতায় গিয়েই পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ বাড়ানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় এতো আপত্তি তুলেছে কেন যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। প্রশ্ন উঠলেও এখনো গ্রহণযোগ্য কোনো উত্তর দিতে পারেনি দেশটি।

মূলত নিজের আধিপত্য ঠিক রাখা ও নতুন কোনো দেশ তাদের অনুমতি ছাড়া পরমাণু কার্যক্রম যেন বাস্তবায়ন করতে না পারে তা দেখার দায়িত্ব নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমন কথাই বলছেন বিশ্লেষকরা। 

উত্তর কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্ক নিয়ে হলিউডে সিনেমা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে। সেখানে কল্পিতভাবে দেখানো হয়েছে কীভাবে দুই দেশের গোয়েন্দারা একে অপরের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ করে। সেই তথ্য নিয়ে দুই দেশের কর্তারা কীভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। সমরাস্ত্র বৃদ্ধি ও বাজারজাত করতে নানাভাবে নানা কৌশলে তারা পরিকল্পনা করে থাকে।

কোরিয়ার অস্ত্র প্রদর্শন

সাম্প্রতিক ফের পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম মিসাইল উৎক্ষেপণ করে উত্তর কোরিয়া। এতেই ক্ষেপে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো ঘোষণা দেয়া ছাড়াই কোরিয় উপসাগরে মার্কিন রণতরি পাঠান ট্রাম্প। হুঁশিয়ারি দেন, আর যেনো কোনো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা না করা হয়। কিন্তু মার্কিন এ হুঁশিয়ারিকে থোড়াই কেয়ার করছে উত্তর কোরিয়া। উল্টো ঘোষণা দিয়েছে, পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যাবে তারা। এতে বাধা এলে তা মোকাবেল করা হবে।

কিম জং পাল্টা ঘোষণা দিয়ে বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতেও এই পরীক্ষা চালানো বন্ধ হবে না। উপসাগরে মার্কিন রণতরি আসার পরেও একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি।  তবে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পরীক্ষা সফল হয়নি। উৎক্ষেপণের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তা বিস্ফোরিত হয়। 

উত্তর কোরিয়া এ পর্যন্ত সাতবার পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। কিন্তু কতটা সফল হয়েছে তা বিশ্ব জানে না। এর আগে দেশটির নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একমত হয়েছিল যে, উত্তর কোরিয়া আর পরমাণু বোমার পরীক্ষা চালাবে না। তবুও উত্তর কোরিয়াকে বিশ্বাস করেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মাঝে মধ্যেই সংবাদের শিরোনাম হয়েছে উত্তর কোরিয়া তার পরমাণু কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেনি। মূলত অর্থের যোগান ও রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ থেকে দেশকে বাঁচাতে এই চুক্তিতে রাজি হয়েছিল উত্তর কোরিয়া। কিন্তু ২০১২ সালে ফের পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটি। 

উত্তর কোরিয়ার এমন ঘোষণায় ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছে ট্রাম্প। অবশ্য কিছুটা সময় নিয়ে চীনকে পাশে থাকার জন্য বলছে। চীনও ট্রাম্পকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যুদ্ধ এড়াতে সবকিছু করবে। এর আগে ১৯৫০ সালে দক্ষিণ কোরিয়া দখল করতে যুদ্ধ বাঁধিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদল দক্ষিণে ঢুকে পড়েছিল। জাতিসংঘের শান্তি রক্ষীবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করেছিল উত্তর কোরিয়াকে থামাতে। সেই যুদ্ধের ভারসাম্য রক্ষায় দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করেছিল চীন। অবশেষে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৫৩ সালে। ইতিহাসে দেখা যায়, ওই যুদ্ধে প্রায় দশ লাখ সামরিক ও বেসামরিক লোক নিহত হয়। অতীত অিভিজ্ঞতার জন্য এবারো চীনের সহযোগিতা ও চীনকে পাশে চাইলেন ট্রাম্প।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েই যাবে। এখন তাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস রয়েছে। সেটি তাদের শক্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। হয়ত যুদ্ধ হবে না, কারণ যুদ্ধ হলে তা সর্বাধুনিক অস্ত্র দিয়েই হবে। তা ব্যবহার হলে মানব সভ্যতা হুমকির মুখে পড়বে। এটা অবশ্য কোনো রাষ্ট্রই চাইবে না। যুক্তরাষ্ট্র যদি উত্তর কোরিয়াকে একটু মর্যাদা দেয় তাহলেই হয়ত যুদ্ধটা এড়ানো সম্ভব হবে।

তবে কেন এই যুদ্ধ-যুদ্ধ রব? বিষয়টিকে তারা মূল্যায়ন করছেন এভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট চাইছেন, তার আমলে সবচেয়ে কূটনৈতিক সফলতা দেখাতে। যদি উত্তর কোরিয়াকে বাগে আনতে পারে, তাহলে এটি হবে তার সফলতা। ওবামা প্রেসিডেন্ট থাকাকালেও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। হয়ত, ট্রাম্প এবার সেই কৃতিত্ব দেখাতে চাইছেন। মার্কিন রাজনীতিতে চরম ওবামা বিরোধী হচ্ছেন ট্রাম্প। 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মজুদ অস্ত্রের মধ্যে হয়তো বেশ কিছুর মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেই অস্ত্র ফেলে না দিয়ে একটি যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা হতে পারে। তাহলে আঞ্চলিক আধিপত্য কায়েম করা যাবে। শত্রুপক্ষের অস্ত্রের ভাণ্ডার সম্পর্কে জানতে পারবে উত্তর কোরিয়া। 

কোরিয়ার সামরিক অস্ত্র

গেল ১৫ এপ্রিল উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সাংয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বিশাল মজুদের অস্ত্র প্রদর্শনী। সেখানে বিরল কিছু অস্ত্র প্রদর্শন করা হয়। গেল ১৭ এপ্রিল রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং-রিয়ল বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে  বলেছেন, ‘সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক-ভিত্তিতে আমরা আরো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করবো।’ এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সমারিক পদক্ষেপ নিলে তা ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের রূপ’ নেবে বলে সতর্ক করেন তিনি।

তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। উত্তর কোরিয়ার পুরনো বন্ধু চীন। সেই চীন এখন পর্যন্ত শুধু সতর্ক বার্তা দিয়েছে। যুদ্ধের পরিবেশ হলেও উত্তর কোরিয়াকে নিষেধ করছে না। নিজ সীমান্তে যদিও সৈন্য বাড়িয়েছে, কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক কোনো তৎপরতা চালাচ্ছে না। এতেই বুঝা যায় যুদ্ধ হচ্ছে না।

উত্তর কোরিয়া চায়, যুক্তরাষ্ট্র তার বিষয়ে কোনো কথা না বলুক। এটি হলে, উত্তর কোরিয়া বিশ্বাস করবে বিশ্বে তার কদর বেড়েছে; মর্যাদার স্বীকৃতি মিলেছে। তাই পুরনো অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটু ঝালিয়ে নিতে চায় উত্তর কোরিয়া।

সোনলীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!