• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মার্কেটে অ্যালবাম মানে একটা ভিজিটিং কার্ড’


মিতুল আহমেদ, বিনোদন প্রতিবেদক নভেম্বর ২১, ২০১৬, ০২:০০ পিএম
‘মার্কেটে অ্যালবাম মানে একটা ভিজিটিং কার্ড’

মফস্বল শহর নরসিংদিতে ২০০৯ সালে জন্ম ব্যান্ড দল ‘চাতক’। ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত কেউ তাদের খুব একটা জানতোই না। কিন্তু ‘সহজ মানুষ’ নামের একটা অ্যালবামের মাধ্যমে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে একটা অবস্থান গড়ার পাশাপাশি দেশব্যাপী প্রচুর শ্রোতাও তৈরি হয় তাদের।নতুন ডাইমেনশনে লালন সংগীতকে তোলে ধরার পাশাপাশি মৌলিক গানও গেয়ে থাকে দলটি। খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া ‘চাতক ব্যান্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ভোকাল শাহরিয়ার শামস কেনেডির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মিতুল আহমেদ-        

ঢাকা কেন্দ্রিক শিল্পীরা যে হায়ার ইয়ার্কিতে ভুগেন, নরসিংদি আপনাদের ব্যান্ডের জন্ম হওয়ায় ঢাকার শিল্পীদের দ্বারা তেমন তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়েছে কখনো?
এই ব্যাপারে না বলি। মিউজিকের মাঠে নামলেই আসলে সেটা পরীক্ষা হয়ে যায়, কথায় না কাজে। যারা ঢাকায় শিল্পীদের সাথে ফাইট করে মিউজিকে জায়গা করে নিতে চান তারা যেনো নিজেরা শক্ত হয়ে আসেন। তাদের ব্যাজমেন্টটা যেনো মজবুত হয়। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে যুদ্ধ ছাড়া চলে না। এখানে যুদ্ধ থাকবেই।

কিন্তু একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানে একজন বিরুদ্ধে দাঁড়ালে দশজন আপনাকে সাপোর্টের জন্য দাঁড়ায়। আমরা ঢাকার শিল্পীদের এরকম সাপোর্ট পেয়ে আসছি।

লালনের গানের জন্যই আপনারা বেশ জনপ্রিয়ব্যান্ড দল হিসেবে লালনের গানটাকেই কেনো বেছে নিলেন?
হঠাৎ করেই আসলে লালনকে বেছে নেয়া। ২০০৭ সালে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়েই আসলে সিদ্ধান্তটা মাথার ভেতর আসে।লালনের গান নিয়ে কাজ করার চিন্তাও মাথায় আসে। এরপর দুই বছরের মধ্যে ২০০৯ সালে নরসিংদিতেই ‘চাতক’ নামের ব্যান্ড দলটি দাঁড়ায়। প্রথম যে চারজন আমরা শুরু করি তারা সবাই আমাদের নরসিংদির।চারজনের মধ্যে গিটারে পলক, বেইজ গিটারে শান্ত, ড্রামসে লিমন আর আমি ভোকালে। এরপর যখন আমরা ঢাকায় চলে আসি তখন গিটারে আরেকজন যোগ দেয়, তার নাম নূর।

আপনাদের প্রথম অ্যালবাম ‘সহজ মানুষ’গেল বছর রিলিজ পেলঅ্যালবামটি নিয়ে কেমন রেসপন্স পেয়েছেন?
যদি রেসপন্স না পাইতাম তাহলেতো ঢাকার মধ্যে বাস করতেই পারতাম না। আসলে আমরা নিজেরাও জানতাম না যে এতো  মানুষ আমাদের গান শুনবে। ভাবছিলাম একটা ব্যান্ড দল যেহেতু গড়েই ফেলেছি ফলে একটা অ্যালবাম করি। বিশ্বাস করুন কেউ শুনবে এই হেতেতু মোটেও অ্যালবাম করেনি। কারণ ইন্ডাস্ট্রির অবস্থাটাতো জানি। এখন কি কেউ অ্যালবাম কিনে গান শুনে?

মানে আপনাদের গান কেউ শুনবে না তা জেনেও অ্যালবামটা করলেন?
হ্যাঁ।এক ধরনের শখ থেকেই অ্যালবামটা করেছি। ভাবছি নিজের গাওয়া নিজের ব্যান্ডের একটা অ্যালবাম ঘরের কোণে থাকবে। কুড়ি বছর পরে হয়তো নিজের সন্তানকে দেখাতে পারবো যে দেখ, তোর বাবাও একদিন গান গাইতো! কিন্তু ঘটনা যে পুরো পাল্টে যাবে সেটা কল্পনাও করিনি।

সবচেয়ে সম্মানের ব্যাপার কি জানেন, সম্প্রতি আমাদের প্রথম অ্যালবামটা অবসিকিওর ব্যান্ডের টিপু ভাইও নিজের ওয়ালে শেয়ার করলো। এতে আমরা সত্যিই আন্তরিকভাবে গর্বিত।কিংবন্তিতুল্য এই মানুষটির সাথে খুব বেশিদিন আগে নয়, কিছদিন হলো পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আর্কের মুর্শেদ ভাই। বলেছিলেন যে, এর নাম কেনেডি। তার একটা ব্যান্ড আছে, নাম চাতক। উনি অ্যালবামের নামটা শুনেই সেদিন বলছিলেন, বাহ! অ্যালবামের নামটাতো সুন্দর! কিন্তু উনি যে এটা শুনবেন এবং শেয়ার দিবেন এটাতো আমার কল্পনার বাইরে।

আর এই অ্যালবামটাই পাব্লিক লাইব্রেরিতে একটা অনুষ্ঠানে নতুন ব্যান্ডগুলোর রিলিজ পাওয়া অ্যালবামগুলোর মধ্যে ‘সেরা অ্যালবাম’ হিসেবে পুরস্কবার পেয়েছিল। লালনের চারটি গান আর দুটো মৌলিক গান ছিল এই অ্যালবামে। দুটো মৌলিক গানের মধ্যে একটি গান লেখা লালন ব্যান্ডের সুমির। আর একটা গান ছিল আমার লেখা। যে গানটি প্রচুর হিট হয়েছিল।

‘চাতক’-ব্যান্ডের বর্তমান লাইন আপ...

ফিতা ক্যাসেট থেকে গান এখন ইন্টারনেটে ক্লিকের ব্যাপারতো এই রূপান্তরটা কিভাবে দেখেন...?
আমাদের আমলে ৩৫ টাকা দিয়ে অ্যালবাম কিনে গান শনুতাম। এখনতো আর সেই অবস্থা নাই। না থাকাটাও স্বাভাবিক। অবস্থা পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই যায়। এটাকেতো মানতেই হবে।সবকিছু জেনেই ইন্টারনেটেই গান দেয়া ছাড়া কোনো সহজ ও বিকল্প পথ তৈরিতো হয় নাই। যে যতোই চিল্লাক না কেনো, কাজ হবে না। শিল্পীদের অ্যালবাম থেকে আর পয়সা উসুলের কোনো সম্ভাবনা অবশিষ্ট নেই।তাদের জন্য স্টেজ শো’ই আসলে ইনকামের একমাত্র পথ। টিভি অনুষ্ঠানও । এখন মার্কেটে অ্যালবাম মানে একটা ভিজিটিং কার্ড। এছাড়া অ্যালবাম আর কিছুই নাই।

এখনতো প্রফেশনালি গানকে নেয়া সম্ভব নাসেই ক্ষেত্রে আপনারা কিভাবে ব্যান্ড দলটি চালু রাখছেন?   
মি্উজিশিয়ানরা একটা পাগল। গান শুরু করছি এইটার শেষ কই আমরা জানি না। এইটা একটা ঘোরের ব্যাপার। এতোকিছু ভেবে গানে কেউ নামে না। ব্যবসা বাজার ইনকাম এইসব কিছুই না।গানটা করতে হবে এটাই আসল কথা।

স্টেজ শো কিংবা টিভিতেতো বেশির ভাগ সময় খুব প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদেরই ডাকা হয়। সেই হিসেবে আপনাদের অবস্থান কোথায়?
এইসব ক্ষেত্রে লিঙ্কটা আসলে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তারপরও আমরা প্রচুর না হলেও মোটামুটি ভালোই স্টেজ পারফর্ম করি। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটে আমরা প্রায় সব কনসার্টেই উপস্থিত থাকি। তারা আমাদের ডাকে। কেনো ডাকে সেটা জানি না। কিন্তু তারা আমাদের এক ধরনের মূল্যায়ন করে। তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এরমধ্যে টিভিতেও বেশকিছু অনুষ্ঠানে আমরা গেয়েছি। এনটিভি, দেশ টিভি, বৈশাখিতে পারফর্ম করেছি। এটা একটা আনন্দ। কেউ ডাকলে আমরা আনন্দ পাই।আমরা সম্মানিত হই। কিন্তু এইসব দিয়েতো আর ভাত জুটে না। 

বাংলাদেশের ব্যান্ডের মধ্যে কাদের দ্বারা আপনারা অনুপ্রাণিত...?
নব্বইয়ের মাঝামাঝি থেকেই প্রচুর গান শোনা শুরু। সে সময় আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয় জেমস ভাইয়ের গান। তার গাওয়া গানগুলোই আমার মধ্যে একটি বেজমেন্ট তৈরি করে দেয়। মূলত গানে আসার পেছনে জেমস ভাই একটা অনুপ্রেরণার নাম। যদিও আমার গাওয়া গানগুলো রক নয়।

সমসাময়িকদের মধ্যে আপনাদের কাদের গান ভালো লাগে?
সমসাময়িক অনেকের গান ভালো লাগে।

অ্যা ট্রিবিউট টু লাকি আখন্দ-অনুষ্ঠানে গাইছে ব্যান্ড দল ‘চাতক’...

নাম বলেন, কারা তারা...?
আসলে নাম নেয়া ঠিক হবে না। এতো পছন্দের ব্যান্ড দল তারা কাকে ছেড়ে কার নাম বলি।  

নরসিংদি থেকে একটা অ্যালবাম দিয়েই ঢাকায় আসন পাতলেন। কাউকে বিশেষভাবে স্মরণ করার আছে?
ঢাকা আসার পর ব্ল্যাক, আর্সেল, পেন্টাগণ এবং শাহেদ ভাই তাদের সাপোর্টটা আমাদের ঢাকায় থাকার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে টনি ভাই আমাকে যে উৎসাহ দিছে তা ভোলার মতো নয়। চিরকুটের স্টুডিওতে প্রথম অ্যালবামের কাজ  ‍শুরু করছি। তাদের সমর্থন আর অনুপ্রেরণাও মনে থাকবে চিরদিন।

এখনের ব্যস্ততা কি নিয়ে..?
দ্বিতীয় অ্যালবাম শুরু করছি। ২০১৭ সালে প্রথম দিকে হয়তো বাজারে আসতে পারে। অ্যালবামে সাইঁজির গানতো থাকবেই সেই সাথে মৌলিকও গানও থাকছে।সব মিলিয়ে সাত আটটা গান থাকার কথা। এছাড়া তিনটা দেশে শো করতে আলাপ চলছে। যদিও সে বিষয়ে এখনও সিওর না। হলে হবে না হলে নাই।আর এই মাসে রেডিও আমার, রেডিও স্বাধীন আর দেশ টিভিতে ডিসেম্বর কলের গানে যাবো আমরা।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল

Wordbridge School
Link copied!