• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মালির হাতে বিরল ‘কাইজেলিয়ার’ চারা উদ্ভাবন


নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর নভেম্বর ২২, ২০১৬, ০৬:২৭ পিএম
মালির হাতে বিরল ‘কাইজেলিয়ার’ চারা উদ্ভাবন

রংপুর: পৃথিবীর বিরল প্রজাতির বিখ্যাত বৃক্ষের মধ্যে ‘কাইজেলিয়া’ একটি অন্যতম নাম। এটি ‘বিগনোনিয়াসিয়া’ গোত্রের বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘কাইজেলিয়া আফ্রিকানা’। আফিকা মহাদেশের দেশ সেনেগালের দক্ষিণাঞ্চলে এর আদি নিবাস। আফ্রিকার বাইরে এই বৃক্ষটির অস্তিত্ব খুব বেশি দেখা যায় না।

বিলুপ্তির পথে থাকা সেই কাইজেলিয়া এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজে। প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে গুটি গুটি পায়ে হেটে প্রায় ৫০০ গজ দক্ষিণে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে রাস্তার ডান পাশে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষটিই কাইজেলিয়া ।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে (আনুমানিক ১৯১৬-১৯২০ সালের দিকে) কোন এক বৃক্ষপ্রেমি এই কাইজেলিয়ার দুটি চারা রোপণ করেছিলেন। যার বয়স বর্তমানে প্রায় ১০০ বছর। বর্তমানে গাছ দুটির উচ্চতা প্রায় ২০-২৫ মিটার ।

মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া সেই বিলুপ্ত কাইজেলিয়ার পরাগায়ন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল হওয়ায় এতোদিন সহসাই চারা উদ্ভাবন করা যায়নি। কিন্তু জটিল কাজকে সহজ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এ কলেজের বাগান মালি বাটুল সিং। তার ফলও তিনি পেয়েছেন। অর্থাৎ তিনি চারা উদ্ভাবন করতে পেরেছেন।

বাটুল সিংয়ের বাড়িতে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট হলেও থেমে নেই বৃক্ষের প্রতি তার উদার ভালবাসা। অনেক কষ্ট করে হলেও চারা তৈরি ও পরিচর্যা করেই যাচ্ছেন তিনি।

বৃক্ষপ্রেমী বাটুল সিং সোনালীনিউজকে জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে এদেশিয় সনাতন পদ্ধতিতেই বিলুপ্ত কাইজেলিয়ার চারা উদ্ভাবনে চেষ্টা করে গেছেন। অবশেষে তিনি গত বছরের শেষের দিকে বেশ কয়েকটি চারা উৎপাদন করতে সক্ষম হন।

এমন সাফল্যের পর তার কোনো প্রত্যাশা বা চাওয়ার আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাটুল সিং জানান, কারো কাছে করুণা চান না। শুধু চান একটা স্থায়ী চাকুরি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমান কারমাইকেল কলেজে যে চাকুরিটি করছেন তা মাস্টাররোলে। বেতনও খুবই সামান্য। এই সামান্য আয়ে তার পক্ষে সংসার চালানো কষ্টকর।

এসময় বাটুল সিং তার ইচ্ছা পোষণ করে বলেন, ‘আমি নিজ হাতেই দেশের প্রতিটি জেলায় কিংবা ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে অন্তত একটি করে কাইজেলিয়ার চারা রোপন করতে চাই’।

এদিকে বিলুপ্ত এই কাইজেলিয়া বৃক্ষের নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি প্রতিশ্রতিশীল সংগঠন ‘কারমাইকেল কাইজেলিয়া শিক্ষা-সংস্কৃতি সংসদ’ (কাকাশিস)। এই সংগঠনের সভাপতি রামেন্দ্র বর্মা রাম জানান, বাটুল সিং নিজেই একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তার এই সৃষ্টির জন্য একজন বৃক্ষপ্রেমি হিসেবে আমি তাকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন, ভালবাসা আর শ্রদ্ধা ।

এদিকে বাটুল সিং এর আগে বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কারমাইকেল কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একদল কৃষি বিজ্ঞানী টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে বিলুপ্ত কাইজেলিয়ার বেশ কয়েকটি চারা উদ্ভাবন করেছিলেন। কিন্তু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে সেই চারাগুলো রোপন করলেও সেগুলোকে আর বাঁচাতে পারেননি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!