• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফির অবসরে কাঁদছে ফেসবুক


ফেসবুক থেকে ডেস্ক এপ্রিল ৫, ২০১৭, ০১:৫১ পিএম
মাশরাফির অবসরে কাঁদছে ফেসবুক

ঢাকা : শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠে নামার খানিক আগে অবসরের ঘোষণা দেন নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এরপরই ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে মাশরাফির অবসর প্রসঙ্গ। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা। এই বিদায়ের সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না  ভক্তরা। ম্যাশের নেতৃত্বে খেলা ক্রিকেটাররাও বিদায়ের সিদ্ধান্তে অনেকটাই স্তম্ভিত।

বিদায়ের সিদ্ধান্তের পর মাশরাফিকে নিয়ে দেয়া আবেগঘন স্ট্যাটাসে মাশরাফিকে হারানোর কষ্টের কথা জানালেন মুশফিকুর রহীম।

স্ট্যাটাসে তিনি জানান, মাশরাফিকে খুব মিস করবেন তিনি।

নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে মুশফিক লেখেন, ‘সব ভালো জিনিসেই শেষ হয়, এটা সম্ভাবত তাদের মধ্যে একটা। ম্যাশকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ দল চিন্তা করা কঠিন, আপনি সত্যিই একজন চ্যাম্পিয়ন। আমি নিশ্চিত প্রত্যেকে গর্ববোধ করে আপনার মত একজনের নেতৃত্বে খেলে। এটা সত্যি সম্মানের। শুধু এইটুকু বলতে চাই, আপনাকে ধন্যবাদ, আমাদের সবসময় অনুপ্রাণিত করার জন্য, আর আপনি সবসময় আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। যতটা না আমরা দুঃখিত, তার চেয়ে টি-টোয়েন্টি জার্সিতে আপনাকে মিস করবো।’

অন্যদিকে মাশরাফিকে শুভকামনা জানিয়ে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেন, ‘মাশরাফি ভাই, আপনাকে প্রথমেই টি-টোয়েন্টি-তে সকল অসাধারণ অর্জনের জন্য শুভেচ্ছা। আপনাকে আমরা সবাই মিস করব, বিশেষ করে আমি। আপনি ছিলেন আমার ভাই বন্ধু, যার সঙ্গে আমি সব শেয়ার করতে পারতাম।  আপনি একজন যোদ্ধা, যোগ্য নেতা, অধিনায়ক ও সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। আমি সত্যিই দুঃখিত কিন্তু এটাই জীবন। আপনি আমাদের দেখিয়েছেন একটা দলকে কীভাবে একটা পরিবার বানানো যায়। আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। সন্দেহ নেই আপনি একজন অসাধারণ মানুষ ও চমৎকার খেলোয়াড়। ম্যাশ আমরা সবাই আপনাকে ভালোবাসি। শ্রদ্ধা কিংবদন্তি।’

হঠাৎ দেশের সফলতম অধিনায়কের অবসরের ঘোষণা মেনে নিতে পারছেন না ক্রিকেট ভক্তরা।

ম্যাচ নিয়ে যতোটা না আলোচনা ছিল তার চেয়েও বেশি আলোচনা চলে মাশরাফির অবসর নিয়ে। ম্যাচে জয়-পরাজয় তো থাকবেই। বাংলাদেশও প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হেরেছে। কিন্তু টাইগার ভক্তদের সেদিকে তাকানোর সময় নেই।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন টাইগার ভক্তরা। তাদের প্রিয় ক্রিকেটার হঠাৎ করেই কেন অবসর নেবেন। তাও আবার বিদেশের মাটিতে। তাছাড়া ওয়ানডে ফরম্যাটে যেহেতু এখনও খেলে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মাশরাফি তাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেও তাকে খেলার অনুরোধ করেছেন অনেকেই।

মোহাম্মদ নুরুল করিম নামের একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, ‘দেশের মাটিতে অবসর নেয়ার সুযোগটাও পেল না মাশরাফির মতো গ্রেট খেলোয়াড়। কেন দেশের প্রতি ডেডিকেশন নিয়ে খেলবেন অন্য ক্রিকেটাররা? বাংলাদেশের ক্রিকেট ফ্যানদের উচিৎ স্টেডিয়ামের পাশে মানববন্ধন করা। অবশ্যই মাশরাফিকে প্রাপ্য সম্মান দেয়ার দাবি করা।’

মাশরাফির অবসরটাকে কোনভাবে মানতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র নজরুল ইসলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ক্রিকেট মহানায়কের বিদায়।  অদম্য মাশরাফির টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষনা !  ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ের মনি কোটায় চির স্বরনীয় হয়ে থাকবে তুমি বিদায় গুরু বিদায়। #Legend, #MBM02।’

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থী আরিফুর রাজু তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ম্যাশের বিদায়ে আমি বিন্দু মাত্রও অবাক হইনি। কারণ পাপনরা চাইলে এক ম্যাশ কেন পুরো দলকেই গুডবাই জানাতে পারেন।

ফজলুল করিম নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘যতদিন মাশরাফি ক্রিকেটে থাকবেন ততদিন ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির ক্যাপ্টেন হিসেবে আমরা মাশরাফিকেই চাই, অন্য কাউকেই নয়। # ফিরে এসো মাশরাফি।’

এমডি পায়েল নামের একজন লেখেন, ‘প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টি-তে অধিনায়ক ছাড়া খেলবে, তারপরেও মাশরাফির পরিবর্তে অন্য কাউকে দেখতে চাই না।’

শাহাদাত হোসেন নামের আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, ‘আমরা মাশরাফি ভাইকে সারা জীবনের জন্য ক্রিকেটের পাশে দেখতে চাই।’

ফাহাদ উদ্দিন নামের একজন লিখেন, এতো তাড়াতাড়ি কেন অবসর নিলে?’

রাজ নামের আরেকজন ক্রিকেট ভক্ত লিখেন, ‘মাশরাফি তোমাকে অনেক মিস করবো, মিস করবে পুরো বাংলাদেশের মানুষ, মিস করবে পুরো ক্রিকেটবিশ্ব, আজ তোমার টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর এর ঘোষণায় হৃদয়ে খুব আঘাত লাগলো, মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে, তুমি খেলা থেকে অবসর নিতে পার, আমাদের মন থেকে নিতে পারবে না, তুমি পুরো ক্রিকেট প্রেমিদের হৃদয়ে থাকবে, তুমি অনেক কিছু দিয়েছ আমাদের, অনেক কিছু দিয়েছ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে, তোমাকে স্যালুট জানাই বস # মাশরাফি।’

জুবায়ের চৌধুরী লিখেন, মাঠে না থাকলেও তুমি থাকবে কোটি বাঙালির হৃদয়ে। তোমায় স্যালুট প্রিয় ম্যাশ। জয় বাংলা।

রাজীব ফেরদৌস লিখেন, ‘আমার ছেলের জন্য খুব আফসোছ হচ্ছে, কারণ সে যখন বুজতে শিখবে তখন আর মাশরাফির খেলা সরাসরি দেখতে পারবে না।
তখন হয়তো বাংলাদেশ আরো ভাল খেলবে, কিন্তু এই ভাল খেলার স্পৃহা কে জাগিয়ে গেল তাকে হয়তো চিনতেই পাড়বে না।’

হাসান মাহমুদ লিখেন, ‘মনে হচ্ছে মাশরাফির অবসরের ঘোষণাই দলের মনোবল ভেঙ্গেছে। ম্যাশ তো শতাব্দিতে একটাই জন্মায়।’

জাবেদ মজুমদার লিখেন, আকাশও আজ কাঁদছে # মাশরাফির বিদায়ে।

আগামী বৃহস্পতিবারই ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার জন্য মাঠে নামবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল এই অধিনায়ক। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মুশফিকুর রহীমের কাছ থেকে রঙ্গিন জার্সির (ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি) নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয় মাশরাফির ঘাড়ে।

২০০৬ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সেরা হয়েছিলেন মাশরাফি। তখন থেকে নিয়মিত এই ফরম্যাটে খেলে আসছেন ম্যাশ। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা ৬৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ৫৩টিতেই খেলেছেন তিনি। হয়েছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪১ উইকেট শিকারী। আর মঙ্গলবারের ম্যাচ দিয়ে রেকর্ড ২৭ ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিলেন মাশরাফি। তার নেতৃত্বেই দল সবচেয়ে বেশি টি-টোয়েন্টি  জিতেছে।

এদিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মাশরাফি তাঁর ভক্ত-সমর্থকদের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ টিমকে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ১০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিনিধিত্ব করা আমার জন্য অনেক গর্বের। আমি বিশ্বাস করি বর্তমান দলটি একটি ভালো দল এবং দলে কিছু উদীয়মান খেলোয়াড় আছে। আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য এবং আমাকে এত চমৎকার দলের নেতৃত্বের সুযোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমি আমার সকল ভক্ত, পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ আমাকে সব সময় সমর্থন করার জন্য। এই সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে উত্থান এবং পতন ছিল। আমি সব সময় চেষ্টা করেছি আমার ফ্যানদের খুশি করার। আমি আমার প্রত্যেক ফ্যানের কাছে তাদেরকে প্রতি ম্যাচে খুশি করতে না পারার জন্য ক্ষমা চাইছি। এই মুহূর্তে দল হিসেবে আমরা ভালো খেলছি। আমি নিশ্চিত, বাংলাদেশ সামনের দিনগুলোতেও ভালো ক্রিকেট খেলবে।

‘আমি মনে করি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর নেওয়ার জন্য এটাই আমার উপযুক্ত সময় যাতে অনেক তরুণ উদীয়মান ক্রিকেটার তাদের প্রতিভা তুলে ধরতে পারে এবং বিসিবি তাদেরকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারে। আমি বাংলাদেশ এর টি-টোয়েন্টি টিমের নতুন অধিনায়ককে আগাম অভিনন্দন জানাই এবং আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা সময় সামনে আসবে।

‘শিগগিরই আবার দেখা হবে। সকলের জন্য আমার আন্তরিক ভালোবাসা।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!