• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফির পাঁচে চার


ক্রীড়া ডেস্ক ডিসেম্বর ১৩, ২০১৭, ০৩:২৬ পিএম
মাশরাফির পাঁচে চার

ঢাকা : মাশরাফি বিন মুর্তজা মানেই যেন পরশ পাথর! বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) যে দলেই খেলেছেন, সে দলকেই শিরোপা উপহার দিয়েছেন এই অধিনায়ক। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সকে প্রথম দুই আসরে শিরোপা জেতানো মাশরাফির হাত ধরেই তৃতীয় আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। যদিও চতুর্থ আসরে মুখ থুবড়ে পড়ে দলটি। তবে পঞ্চম আসরে দল পরিবর্তন করে রংপুর রাইডার্সে ভিড়তেই যেন পাওয়া গেল সেই চেনা মাশরাফিকে।

গতকাল মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বিপিএল পঞ্চম আসরের ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ৫৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে নিল রংপুর রাইডার্স। একই সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে চতুর্থ শিরোপা জিতলেন মাশরাফি। বিপিএলের পাঁচ আসরের মধ্যে চারবারই শিরোপা জিতে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ আরও একবার দিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ওয়ানডে অধিনায়ক।

মজার এক সমীকরণকে সামনে রেখেই বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসরের ফাইনাল খেলতে মাঠে নেমেছিলেন মাশরাফি ও সাকিব আল হাসান। সমীকরণটা ছিল এরকম - ফাইনালের মহারণে ঢাকা ডায়নামাইটস জিতলে সাকিব হবেন টানা দ্বিতীয়বার শিরোপাজয়ী দলের অধিনায়ক। আর রংপুর রাইডার্স জিতলে মাশরাফি হবেন মোট চারবার শিরোপাজয়ী দলের অধিনায়ক। শেষ হাসি হাসলেন মাশরাফিই!

বিপিএলের প্রথম দুই আসরে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি। টুর্নামেন্টের দুই মৌসুমেই তার অধীনে শিরোপা জেতে দলটি। ২০১৫ সালে বিপিএলের তৃতীয় আসরে দল বদলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে যোগ দেন মাশরাফি। তার যোগ্য নেতৃত্বে শিরোপা ঘরে তোলে কুমিল্লা। অন্যদিকে অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা জেতার হ্যাটট্রিক করেন মাশরাফি। তবে বিপিএলের চতুর্থ আসরে ঘটে ছন্দপতন।

গতবার টুর্নামেন্টের শুরুতেই ছন্দহীন হয়ে পড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শেষদিকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও সফল হয়নি দলটি। গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় মাশরাফির কুমিল্লা। চলতি আসরে মাশরাফি যোগ দেন রংপুর রাইডার্সে। মাশরাফির জাদুর-ছোঁয়ায় বিপিএলের প্রথম শিরোপার স্বপ্ন দেখল রংপুর। ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, লাসিথ মালিঙ্গা, থিসারা পেরেরারা দলে থাকায় শুরু থেকেই দলটাকে শিরোপার লড়াইয়ে রেখেছিলেন সমর্থকরা।

শুরুটা ভালো না হলেও ধীরে ধীরে শক্ত অবস্থান গড়তে থাকে রংপুর। নেতৃত্বগুনের সঙ্গে মাশরাফির অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে শেষ চার নিশ্চিত করে রংপুর। আর এলিমিনেটর-কোয়ালিফায়ার-ফাইনাল ম্যাচে জ্বলে ওঠেন গেইল-ম্যাককালাম-জনসন চার্লসরা। ফলাফল প্রথমবারের মতো রংপুর রাইডার্স এবং চতুর্থবারের মতো বিপিএলের শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন মাশরাফি।

মাশরাফির প্রথম শিরোপা: ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো শুরু হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগ বিপিএল। ওই আসরে অংশ নেয় ৬টি দল। টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলে বরিশাল বার্নার্স ও ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস। প্রথম আসরের ফাইনালে ২৬ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয় পায় ঢাকা। আর তাতেই টুর্নামেন্টটির প্রথম শিরোপা হাতে নেওয়ার সুযোগ পান মাশরাফি। লিগ পর্বে ১০ ম্যাচের ৫টি জিতে তৃতীয় স্থানে থেকে সেমিফাইনালে যায় ঢাকা। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে খুলনা রয়্যালসকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল তারা, ম্যাচটি জিতেছিল ৯ রানের ব্যবধানে।

মাশরাফির দ্বিতীয় শিরোপা: ২০১৩ সালে হয় বিপিএলের দ্বিতীয় আসর। এবার একটা দল বেড়ে সংখ্যা দাঁড়ায় ৭টিতে। ওই আসরে আরও প্রভাব বিস্তার করে খেলে প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস। লিগ পর্বে ১২ ম্যাচের মধ্যে ৯টি জিতে শীর্ষে থেকেই সেরা চারে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে মাশরাফির নেতৃত্বে খেলা দলটি। সিলেটের বিপক্ষে প্রথম সেমিফাইনাল খেলে ৪ রানের জয় তুলে নিয়ে ফাইনালে ওঠে মাশরাফির দল। এরপর চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ফাইনালে ৪৩ রানে জিতে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা।

মাশরাফির তৃতীয় শিরোপা: টানা দুই বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে বিপিএলের তৃতীয় আসর মাঠে গড়ায়। বিপিএলে ফিক্সিংয়ের অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস। নানা জটিলতায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর নতুন নিয়ম সংযোজন করে বিপিএলের তৃতীয় আসর মাঠে গড়ায়। মালিকপক্ষ পরিবর্তন হওয়ায় বেশকিছু দলের নামও বদলে যায়। ৬টি দল নিয়ে হয় বিপিএলের তৃতীয় আসর। এই আসরে নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। দলটির অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান মাশরাফি। সাদামাটা দল নিয়ে তৃতীয়বার বিপিএলের ট্রফি হাতে তোলেন তিনি। দশ ম্যাচের ৭টিতে জিতে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকেই প্রথম সেমিফাইনাল খেলে কুমিল্লা। ৭২ রানে রংপুর রাইডার্সকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে কুমিল্লা। এরপর সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে ছিলেন মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বে খেলা বরিশাল বুলস। ম্যাচটিতে কুমিল্লা জেতে ৩ উইকেটে।

মাশরাফির চতুর্থ শিরোপা: গত বছর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সে সময়টা খুব ভালো কাটেনি মাশরাফির। তাইতো নানা কারণে দল পাল্টে তিনি যোগ দেন নতুন ঠিকানায়। কিন্তু লিগ পর্বে খুব একটা ভালো সময় কাটাতে পারেনি মাশরাফির দল। লিগ পর্বে ১২ ম্যাচের ৬টি জিতে কোনও রকমে প্লেঅফে খেলার সুযোগ পায় রংপুর। মূলত এর পরই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে তারা। এলিমিনেটরে গেইল ঝড়ে উড়ে যায় খুলনা। ওই ম্যাচে গেইলের ১২৬ রানের অপরাজিত ইনিংসে আট উইকেটেই ম্যাচ জেতে রংপুর। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দ্রুত আউট হলেও মঙ্গলবার গেইলের ঝড়ে উড়ে গেলো ঢাকা। তার অপরাজিত ১৪৬ রানে রংপুর ২০৬ রান করে। জবাবে খেলতে নেমে ঢাকার চাকা থেমে যায় ১৪৯ রানে। ৫৭ রানের জয় পায় রংপুর। আর চতুর্থবারের মতো শিরোপা হাতে নেন মাশরাফি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!