• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের সংবিধান পরিবর্তনের দাবি কারেন রাজ্যের


আন্তর্জাতিক ডেস্ক অক্টোবর ১৭, ২০১৭, ০৫:৩৭ পিএম
মিয়ানমারের সংবিধান পরিবর্তনের দাবি কারেন রাজ্যের

ঢাকা: রাখাইন রাজ্যে চলমান সংকট নিরসনের জন্য ‘রাজনৈতিকভাবে মর্যাদাকর’ ও ‘অহিংস পন্থা’ খুঁজে বের করতে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)। এজন্য দেশটির সংবিধানে পরিবর্তন আনতে বলেছেন তারা।

মিয়ানমারের একটি রাজ্যের নাম কারেন। মিয়ানমার স্বাধীনতার লাভের আগ থেকেই স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে চলেছে কারেন রাজ্যের মানুষ। এজন্য তারা গঠন করেছে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন। গণমানুষের সমর্থন রয়েছে এই সংগঠনের প্রতি।

কেএনইউর এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয় বলে মঙ্গলবার(১৭ অক্টোবর) সংবাদ মাধ্যম ইরাবতীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, মিয়ানমারে দেশজুড়ে অস্ত্রবিরতি চুক্তির দুই বছর পূর্তিতে ১৫ অক্টোবর এই বিবৃতি দেয় কেএনইউ। ২০১৫ সালে মিয়ানমারের যে আটটি জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর অস্ত্রবিরতি চুক্তি সই হয়েছিল কেএনইউ তাদেরই একটি।

অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের আগে ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের সেনবাহিনীর সঙ্গে লড়ছিল কেএনইউ। বর্তমানে রাখাইনে রোহিঙ্গারা সেনাবাহিনীর হাতে যে ধরনের বর্বরতার শিকার হচ্ছে, দক্ষিণপশ্চিম মিয়ানমারের কারেন জনগোষ্ঠীও ঠিক একইরকম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। সেখানে ১৯৭৯-৮০ সালে একবার এবং ১৯৯৮-৯৯ সালে আরেকবার সেনা অভিযান চালানো হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশের বেশ কিছু চৌকি ও সেনা ক্যাম্পে হামলা হলে এর জন্য রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দায়ী করে তাদের দমনের নামে সেখানে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। অভিযান শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে এখন পর্যন্ত  বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান, মিয়ানমারের সংবিধানে যাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বলছেন, বিদ্রোহীদের দমনের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিরীহ রোহিঙ্গাদের দমন করছে এবং তাদের হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণের পাশাপাশি ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করছে মিয়ানমার। 

কেএনইউর বিবৃতিতে মিয়ানমারে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য একটি সমাজ বিনির্মাণে’ সাংবিধানিক পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, সরকার ও সেনাবাহিনী যেভাবে রাখাইন সংকট মোকাবেলা করছে তা ‘কেএনইউ ও কারেন জনগোষ্ঠীকে তাদের ভয়াবহ অতীত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে’।

অতীতে ‘ফোর-কাট পলিসির’ আওতায় সামরিক অভিযানে দুই লাখেরও বেশি কারেনকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে শরণার্থী হতে হয়েছিল।

‘ফোর-কাট পলিসি’ হলো কারেনদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা মিয়ানমার সামরিক জান্তা সরকারের একটি নীতি। এর মানে হলো চারটি জিনিস— খাবার, তথ্য, ভবিষ্যতের জন্য প্রতিরোধ যোদ্ধা নিয়োগ ও সম্পদ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা। এসব থেকে বিচ্ছিন্ন করার ফলে কারেন এলাকাগুলোর গ্রামবাসীদের জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে যেতে হয়েছিল।

বিবৃতি দেয়ার পর কারেন জনগোষ্ঠীর বার্তা সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে কেএনইউ চেয়ারম্যান জেনস’ মুতু সে পোয়ে সোমবার মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন।

এরপর মঙ্গলবার কেএনইউর মহাসচিব পাডোহ স’তা দোহ মু সংবাদ মাধ্যম ইরাবতীকে বলেন, সহিংসতার কারণে বেসামরিক নাগরিকরা যে ক্ষতির মুখে পড়ছে সেটাই কেএনইউকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। 

কারণ ১৯৭৯-৮০ এবং ১৯৯৮-৯৯ সালে সেনা অভিযানের সময় কারেন জাতিগোষ্ঠীর মানুষও একই ধরনের পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছে এবং কারেন জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষ সে সময় বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!