• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধা নন অনিল চন্দ্র


নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর মার্চ ৫, ২০১৭, ০১:১৭ পিএম
মুক্তিযুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধা নন অনিল চন্দ্র

রংপুর: অনিল চন্দ্র চক্রবর্তী। ছিলেন মুক্তির সংগ্রামে একজন সাহসী যোদ্ধা। একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ববর্রতা যখন বেড়ে যায়, তখন টগবগে এই তরুণ ছুটে যান রণাঙ্গনে। হাতে তুলে নেন অস্ত্র। প্রশিক্ষণ নেন গেরিলা বাহিনীতে। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেন স্বাধীনতার জন্য।

দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পেয়েছে বিশ্ব দরবারে স্বীকৃতি। কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণের ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির স্বাদ পাননি এই মুক্তিযোদ্ধা।

বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া চুয়াত্তর বছর বয়সী অনিল চন্দ্র বিশ্বাস করেন তার প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যাই তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির পাশাপাশি লাল-সবুজের পতাকায় মিশে থাকার সম্মানটুকু দিবেন।

মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম না ওঠা গাইবান্ধার অনিল চন্দ্র চক্রবর্তী থাকেন সাদুল্লাপুর উপজেলার ৯নং বনগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ মন্দুয়ারে। তিনি রুহিণী কান্ত চক্রবর্তী ছেলে।

স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দির কাছাকাছি এসেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় তার নাম না থাকায় হতাশা কাটছে না তার। বুকের ভেতর জমেছে দীর্ঘদিনের বঞ্চনার আক্ষেপ আর ক্ষোভ।

যুদ্ধকালীন সময়ের স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন অনিল চন্দ্র। তিনি জানান, দেশ স্বাধীন করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বাড়ির মায়া ছেড়ে যোগ দেন গেরিলা বাহিনীতে। ১১নং সেক্টরের অধীনে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় প্রশিক্ষণ শেষে মানকার চরে যান। সেখান থেকে কোম্পানী কমান্ডার আলতাব সুবেদার  এবং অধিনায়ক আবদুল আজিজের নেতৃত্বে মাদারগঞ্জ, নান্দিনার বিলে যুদ্ধে অংশ নেন। এ সময় তার সঙ্গে মুকলার রহমান, আব্দুল মোতাল্লিব, নজলউদ্দিন, কোরবান আলীসহ বেশ কয়েকজন সহযোদ্ধা ছিলেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশ মাতৃকার প্রয়োজনে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। কখনো বাড়ি ফিরে আসতে পারব এমনটা ভাবিনি। দেশ স্বাধীন করেছি। স্থানীয়রা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিনলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি সম্মান কিছুই পাইনি।

স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও তার ভাগ্যে জোটেনি কোনো স্বীকৃতি। মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাওয়া তো দূরের কথা, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের কোনো অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না বলে জানান অকুতোভয় এই যোদ্ধা।

তাহলে শেষ জীবনেও কি তার ভাগ্যে জুটবে না কোনো স্বীকৃতি? তিনি কি বঞ্চিতই থেকে যাবেন? এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মজিবুল হক জুবেল বলেন, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করলে আমরা এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকেও এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলব।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!