• ঢাকা
  • বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামে মীর কাসেমের নৃশংসতা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৬, ১০:২৭ পিএম
মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামে মীর কাসেমের নৃশংসতা

চট্টগ্রামে ‘বাঙালি খান সাহেব’ নামে ডাকা হতো কুখ্যাত আলবদর নেতা মীর কাসেম আলীকে। মীর কাসেমের পৈতৃক বাড়ি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায়। তবে বাবার চাকরি করার কারণে তিনি ছোটবেলা থেকেই চট্টগ্রামে বড় হয়েছেন।

একাত্তরের ২৫ মার্চ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি জামায়াতের সে সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। ওই সংগঠনটির বর্তমান নাম ইসলামী ছাত্রশিবির। ৭ নভেম্বর তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন। একাত্তরে তার নেতৃত্বে আলবদর ও আল শামস বাহিনী চট্টগ্রামে চালায় ভয়াবহ নৃশংসতা।

মুক্তিযুদ্ধের সময় মীর কাসেমের নির্দেশেই চট্টগ্রাম টেলিগ্রাফ অফিসের কাছাকাছি আন্দরকিল্লা এলাকার হিন্দু মালিকের মহামায়া ভবন দখল করে নাম রাখা হয় ডালিম হোটেল। সেখানে গড়ে তোলা হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বদর বাহিনীর ঘাঁটি, বন্দিশিবির এবং নির্যাতনকেন্দ্র। তারই নির্দেশে বদর বাহিনী বহু মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী মানুষকে এখানে ধরে এনে নির্মমভাবে নির্যাতন-অত্যাচার চালায়। এর ফলে ডালিম হোটেলকে ‘মৃত্যুপুরী’ হিসেবে এলাকার মানুষ ডাকতে শুরু করে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণেও এই ডালিম হোটেলকে ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর এ মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাসেমকে চিহ্নিত করেছে পাকিস্তানের খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত হওয়া ‘বাঙালি খান’ হিসাবে, যিনি সেই সময় ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাসেম আলী মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর ভয়ংকর নির্যাতন চালান। ডালিম হোটেল ছাড়া আরো কয়েকটি নির্যাতনকেন্দ্র গড়ে তোলেন মীর কাসেম। এগুলো হলো চট্টগ্রাম নগরীর চাক্তাই চামড়ার গুদামের দোস্ত মোহাম্মদ বিল্ডিং, দেওয়ানহাটের দেওয়ান হোটেল ও পাঁচলাইশ এলাকার সালমা মঞ্জিল।

২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালে দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের ডালিম হোটেল ও মীর কাসেম আলী হয়ে ওঠে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সব আটক, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা এখানেই করা হয়েছে। তাঁর পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ডালিম হোটেল পরিচালিত হতো। ডালিম হোটেলে আটকদের ওপর নেমে আসত অবর্ণনীয় নির্যাতন। অনেকে নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে মারা যেতেন। মুক্তিযোদ্ধা জসিম, টুন্টু সেন ও রঞ্জিত দাস নির্যাতনেই মারা যান। আসামিদের সাক্ষ্য থেকেও প্রমাণ হয়েছে, ডালিম হোটেলে আলবদর ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল এবং আলবদর বাহিনীর পরিচালনায় এটি ছিল কেন্দ্রীয় ও বিস্তৃত একটি নির্যাতনকেন্দ্রের মডেল। ট্রাইব্যুনালের অভিমত, একাত্তরে ডালিম হোটেলকে আসলে হত্যাকাণ্ডের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর এর সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন নরপিশাচ মীর কাসেম আলী।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!