• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের সেনা পদোন্নতিতে বেছে নিন’


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ২৪, ২০১৬, ০৭:২১ পিএম
‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের সেনা পদোন্নতিতে বেছে নিন’

সেনাবাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার (২৪ জুলাই) ঢাকা সেনানিবাসে সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, একটি দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত এবং সুসংহত করতে একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী ‘অত্যন্ত সহায়ক’ ভূমিকা পালন করে। যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী- এমন যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে। আপনাদেরকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার বিশ্লেষণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় সেনাবাহিনীর অফিসারদের পদোন্নতির জন্য সাতটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানান। প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আপনারা যোগ্য ব্যক্তিকে পদোন্নতির জন্য নির্বাচন করছেন। পদোন্নতি প্রদানের সময় আপনাদের কতিপয় বিষয় বিশেষ বিবেচনায় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।

এই সাতটি বিষয় হল- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, নেতৃত্ব, পেশাগত দক্ষতা, মাঠের তৎপরতা বিচার, শৃঙ্খলা, সততা-বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য, নিযুক্তিগত উপযোগিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য যোগ্য, দক্ষ, কর্মক্ষম এবং দেশপ্রেমিক অফিসারদের হাতে এর নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনা সদস্যদের ভূমিকা স্মরণ করে সরকারপ্রধান বলেন, তাদের সেই কাজ জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী সুনাম পেয়েছে। দেশের যে কোনো সঙ্কটময় মুহূর্তে সেনাবাহিনী সর্বদা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর সেখানে অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনাও এ সময় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, দক্ষ পরিকল্পনায় মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে এ অভিযান সম্পন্ন করায় আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্লাইওভার এবং ওভারপাসসহ সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ‘অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে’ সম্পন্ন হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেন। এসময় সেনাবাহিনীর জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তিনি তুলে ধরেন। বান্দরবানের রুমায় পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাসের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া, কক্সবাজারের রামুতে সেনানিবাস স্থাপনের কাজ শুরু, নবগঠিত কম্পোজিট ব্রিগেডের আবাসনের লক্ষ্যে পদ্মা সেতুর দুই পাশে সেনানিবাস গড়ার প্রকল্পের কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ, যা পুরো জাতির জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনছে। আমাদের সৈনিকদের শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও কর্তব্যবোধে দৃঢ় মনোভাব বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছে। স্বাধীনতার আগে সামরিক ও বেসামরিক ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যের কথা এবং স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তোলার কার্যক্রমের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

বৈষম্যের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে সেনা বাহিনীতে যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের অফিসার ছিলেন ৮৭৪ জন, পূর্ব পাকিস্তানের ছিলেন ১২ জন; নৌ বাহিনীতে পশ্চিম পাকিস্তানের ৫৯৩ জন  অফিসারের বিপরীতে পুর্ব পাকিস্তানের ছিলেন সাতজন; আর বিমান বাহিনীতে যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের ৬৪০ জন অফিসার ছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের ছিলেন ৪০ জন। এছাড়া বেসামরিক প্রশাসনে কেন্দ্রীয় সরকারের উচ্চ পদে পশ্চিম পাকিস্তানের ৪ হাজা ৫৯৬ জন ছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের ছিলেন ৮৯২ জন। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সমগ্র জাঁতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম। জাতির পিতা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের যে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন তার ধারাবাহিকতা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কালে অব্যাহত ছিল এবং আছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর সেনাবাহিনীকে আরও কার্যক্ষম ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে নতুন পদাতিক ডিভিশন ও ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোরের আধুনিকায়নের জন্য অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর সকল পর্যায়ে প্রশিক্ষণের অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!