• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে স্বতন্ত্র আর্কাইভ স্থাপন হচ্ছে


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭, ০৪:২৪ পিএম
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে স্বতন্ত্র আর্কাইভ স্থাপন হচ্ছে

ঢাকা : আমাদের স্বাধীনতার বয়স ৪৬ বছর। এই দীর্ঘসময়ে মুক্তিযুদ্ধের অনেক দুষ্প্রাপ্য আলামত নষ্ট হয়েছে, অনেক স্মৃতি অসংরক্ষিত রয়ে গেছে। এছাড়া এ যাবৎকালে সরকারিভাবে এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অন্যান্য সংস্থার উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের যত ধরনের সংগ্রহ রয়েছে, সেগুলোর প্রায় সবই ম্যানুয়াল ও কাগজে সংরক্ষিত। ফলে এসব আগামীতে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সব ধরনের তথ্য ও দলিল ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে স্বতন্ত্র একটি আর্কাইভ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে চলতি বছরের শুরুর দিকে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা ও সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব স্মৃতিকথা এবং ইতিহাসও এই আর্কাইভে সংরক্ষণ করা হবে। একই সঙ্গে এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হতে পারে বর্তমানে চলমান ‘মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ’কেও।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরির কাজ চলছে।

প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং করনীয় সম্পর্কে সব জেলা প্রশাসককে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যেখানে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে তা সংরক্ষণ করতে হবে। এখনো যে সব মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন, তাদের স্মৃতিকথা রেকর্ড করে রাখতে হবে। যুগ যুগ ধরে এ সব স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আর্কাইভ করে রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের। স্ব-স্ব জেলার জেলা প্রশাসককে মুক্তিযুদ্ধের এই গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গত ২৮ মে মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে একটি প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ প্রকল্প তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি তৈরি হলেই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের কাজটি দেশব্যাপী সম্পাদন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত সংগ্রহকে ডিজিটাল মাধ্যমে রূপান্তর করে তা দিয়ে আর্কাইভ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এই আর্কাইভ স্থাপন করা হবে রাজধানীতে। যাতে কেন্দ্রীয়ভাবে এটি পরিচালনা করা সহজ হয় এবং সবার জন্য সহজলভ্য হয়।

এ ছাড়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট বধ্যভ‚মিসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ, মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল শক্তিশালীকরণ, ঢাকার কাকরাইলে মুক্তি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দেশের যেখানে যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে তার সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যে সব মুক্তিযোদ্ধা এখনো বেঁচে আছেন তাদের সব ডকুমেন্ট ধারণ করে রাখা হবে। তাদের বক্তব্যও সংরক্ষণ করব আমরা। সমস্ত সংগ্রহকে ডিজিটাল মাধ্যমে রূপান্তর করে তা একটি আর্কাইভে রাখা হবে।’

স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস কেন সংরক্ষণ করা হয়নি- এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কেন সংরক্ষণ করা হয়নি সে উত্তর আমার কাছে নেই। তবে এতদিনে সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেয়াটা দুঃখজনক। বর্তমান সরকার বিলম্বে হলেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা চাই আগামী প্রজš§ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হোক, সঠিক ইতিহাস জানতে পারুক।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রকল্প তৈরির কাজ শেষ হলে দ্রুত মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা ও সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণের কাজটি সম্পাদন করা হবে।’

এদিকে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী দেশের যে সব স্থানে গণহত্যা চালিয়েছে তার মধ্য থেকে প্রায় একশ’টি স্থান বাছাই করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য। এই একশ’ জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জায়গার মালিক ও দখলদারদের বিবরণ, গণকবরের স্ক্যাচ ম্যাপ তৈরি এবং ভ‚মি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু পরে ওই কার্যক্রমের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের দলিল সংরক্ষণের জন্য গঠিত কমিটির কাছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লাখ লাখ দলিল জমা পড়েছিল। দেশের মানুষ নিজ উদ্যোগেই দলিলগুলো দিয়েছিলেন সংরক্ষণের জন্য। এর মধ্যে থেকে অল্প কিছু দলিল অন্তর্ভূক্ত করে প্রকাশিত হয়েছে ১৫টি নথি আর বাকি দলিলগুলো নষ্ট হতে বসেছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত দলিল সংরক্ষণ করা অনেক জরুরি। না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ অপরিচিত থেকে যাবে। ইতিমধ্যেই অনেক দলিল নষ্ট হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নষ্ট করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে। তবে দেরি হলেও এখনো সময় চলে যায়নি। এ জন্য এখনই উদ্যোগী হওয়া উচিত নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধের তথ্যগুলোকে অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণ করার।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানিদের সংঘটিত বাঙালি গণহত্যা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অভিযান, শরণার্থীদের করুণচিত্র, বঙ্গবন্ধু, বাঙালির রাজনৈতিক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের এরকম পাঁচ হাজার ছবি ফটোগ্রাফারের নাম ও মূল ক্যাপশনসহ অনলাইনে বিনামূল্যে প্রদর্শনের জন্য উš§ুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ।

মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্টের পরিচালক সাব্বির হোসাইন বলেন, ‘ছবিগুলো স্টক ফটোগ্রাফি আর্কাইভ- ম্যাগনাম, গেটি, এপি, হুলটন, ব্যাটম্যান, ম্যাজরিটি ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন ফটোগ্রাফারের ব্যক্তিগত আর্কাইভ হতে সংগ্রহ করা হয়।

জানা গেছে, ছবিগুলোর কপিরাইটের মালিক মূল স্টক ফটোগ্রাফি আর্কাইভগুলো বিনামূল্যে উš§ুক্ত প্রদর্শনের জন্য হাই রেজুলেশনে একটি নির্দিষ্ট প্রিভিউ সাইজ নির্ধারণ করে দেয়। বর্তমানে এরকম দেড় হাজারের মতো হাই রেজুলেশন ছবির প্রদর্শন অনলাইনে উš§ুক্ত করেছে আর্কাইভটি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!