• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধাকে গালি দিলেন এমপি!


শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৮, ২০১৮, ১০:৪৪ পিএম
মুক্তিযোদ্ধাকে গালি দিলেন এমপি!

এমপি বিএম মোজাম্মেল হক

শরীয়তপুর: জেলার জাজিরা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে আলী হোসেন খান নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবোদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। একই সঙ্গে এমপির বিচার দাবিতে স্বারকলিপি দিয়েছে জেলা মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে শরীয়তপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে এ বিচার দাবি করেন মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা জীবন বাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছি। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, আর এই মুক্তিযোদ্ধাকে এমপি বিএম মোজাম্মেল হক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করে দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করেছেন। আমরা বিএম মোজাম্মেল হকের বিচার চাই।

এ সময় মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন- শরীয়তপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব মুন্সী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আব্দুল জলিল হাওলাদার, জাজিরা থানার যুদ্ধকালীন কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক, মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম মিয়া, মো. আলীম উদ্দিন শেখ, শেখ মো. সোলাইমান, আবুল হাশেম মিয়া, আদেল উদ্দিন মাস্টার, আবুল কাশেম ফকির, মোতাহার দেওয়ান, সলেমান বেপারী ও আব্দুর রহমান খান প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গত ১৬ ডিসেম্বর জাজিরা উপজেলার জাজিরা মহর আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন জাজিরা উপজেলা প্রশাসন।

অনুষ্ঠানে বেলা ১১টার দিকে সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক উপস্থিত হন। তখন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাজিরা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের খোশাল সিকদারকান্দি গ্রামের মৃত সবদর খানের ছেলে মো. আলী হোসেন খান (৬৬) নামে এক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এমপির তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে এমপিকে মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন খান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের অনুষ্ঠানে রাজাকারদের সামনে দাঁড় করিয়েছেন কেন?

তখন এমপি বিএম মোজাম্মেল হক ক্ষিপ্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন খানকে বলেন, ‘আপনি বাজে কথা বলবেন না। আপনি ফালতু কথা বলেন। আপনি কি মুক্তিযোদ্ধাদের সার্টিফিকেট দেবেন। আপনার থেকে আমার বয়স কম নাকি। এরকম ফালতু কথা বলবেন না। আপনি সবাইকে রাজাকার বানাচ্ছেন। বালের মুক্তিযোদ্ধা হইছেন।’ এসব বলে এমপি গালি দেন।

এমপি মোজাম্মেল হক ও মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন খানের ওই তর্ক-বিতর্কের ভিডিও গত ১৫ জানুয়ারি ‘আমরা বাঙালি’ নামের একটি ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে।

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযাদ্ধাদের গালি দেয়ায় শরীয়তপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধারা শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হকের বিচার দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী হোসেন খান বলেন, ‘গত ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাজাকারের সন্তানদের সামনে দাঁড় করিয়েছেন এমপি। তার প্রতিবাদ করায় আমাকে বিএম মোজাম্মেল হক এমপি বেয়াদব ও বালের মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন। একজন এমপি হিসেবে এ কথা তার মুখে কি মানায়? আমি জাতির কাছে এমপির বিচার দাবি করছি।’

এ নিয়ে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, সেদিন তেমন কিছুই হয়নি। তিনি আরেকজনকে রাজাকার বললেন কেন? তিনি তো রাজাকার বলতে পারেন না। তাই ওসব বলেছি।

এ বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আব্দুল জলিল হাওলাদার বলেন, গত ১৬ ডিসেম্বর এমপি বিএম মোজাম্মল হক মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে গালাগালি করে অন্যায় করেছেন। আমি এ অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে এমপির বিচার দাবি করছি।

এদিকে, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব মুন্সী বলেন, আওয়ামী লীগ কিংবা এমপি হলেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে গালিগালাজ করতে পারেন না। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমি এ এমপির বিচার দাবি করছি।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কমান্ডার আব্দুস সাত্তার খান বলেন, বর্তমানে আমি চট্টগ্রামে আছি। শুনেছি ফেসবুকে এমন একটি ভিডিও বের হয়েছে। তবে রাজনৈতিক কোনো ব্যাপার থাকতে পারে এখানে।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!